কম্পিউটারে বাংলা সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান

1813

এটি ২০১০-২০১১ সালের দিকের টেক ডিভাইসগুলোতে বাংলা লেখা ও পড়ার সমস্যার প্রেক্ষিতে লেখা।

কমপ্লেক্স: 
কমপ্লেক্স কম্পিউটারকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভাষাসমূহের উপযোগী করে তোলে। এর ফলে এই অঞ্চলের ভাষায় লেখা ফাইল বা ফোল্ডারের নাম প্রদর্শন করে, এই সব ভাষার ওয়েব সাইটগুলোর লেখা সঠিক ভাবে প্রদর্শন করে। অন্যথায় এগুলোর স্থানে অয়তকার চর্তুভূজ দেখায়। সাধারণ ভাবে উইন্ডোজ এক্সপিতে কমপ্লেক্স ইন্সটল করা থাকে না। উইন্ডোজ ভিস্তা বা সেভেনে কমপ্লেক্স ইন্সটল করাই থাকে। এক্সপিতে কমপ্লেক্স ইন্সটলের কয়েকটি উপায় রয়েছে-

১. উইন্ডোজ এক্সপি সেট আপের একটি পর্যয়ে যখন Regional and Language Option আসবে তখন Customize-এ ক্লিক করে Language ট্যাবে ক্লিক করে Install files for complex script and right to left languages (including Thai) এর পাশে টিক বসিয়ে OK চাপুন। এর ফলে উইন্ডোজ সেট আপের সময়ই কমপ্লেক্স ইন্সটল হয়ে যাবে।
২. সেট আপ পরবর্তী পর্যায়ে যেকোন সময়: এক্ষেত্রে সিডি রমে উইন্ডোজ এক্সপি’র সিডি থাকতে হবে। Control Panel-এ Regional and Language Option-এ Language ট্যাবে ক্লিক করে Install files for complex script and right to left languages (including Thai) এর পাশে টিক বসিয়ে OK চাপুন। কমপ্লেক্স ইন্সটল হবে।

৩. iComplex এর সাহায্যে: যদি উইন্ডোজের সিডি ছাড়াই কমপ্লেক্স ইন্সটল করতে হলে ওমিক্রন ল্যাব হতে iComplex ডাউনলোড করে নিন। ইন্সটল করুন, রি-স্টার্ট করুন, ব্যাস।
৪. অভ্র কিবোর্ড: অভ্র কিবোর্ড ইন্সটলের সময় আগেই কমপ্লেক্স ইন্সটল করা না থাকলে কমপ্লেক্স ল্যাঙ্গুয়েজ সাপোর্ট ইন্সটলের অফার দেয়া হয়। ‘Install Indic Support Now’-এ ক্লিক করলেই কমপ্লেক্স ইন্সটল করা শুরু হবে।

সঠিক ভাবে ইউনিকোডে বাংলা লিখতে হলে ও বাংলা ওয়েব সাইট পড়তে হলে কমপ্লেক্স জরুরী।

ফন্ট ফিক্সার:

ফন্ট ফিক্সার সমন্ধে আগের পোস্টে বিস্তারিত বলা হয়েছে। উইন্ডোজ এক্সপির সার্ভিস প্যাক ২ তে একটি ইউনিকোড বাংলা ফন্ট ইন্সটল করা থাকে, নাম বৃন্দ (Vrinda)। এবং এই ফন্টটিই উইন্ডোজের ডিফল্ট বাংলা ফন্ট হিসেবে থাকে। ফন্টটির আকার খুবই ছোট যার কারনে কোন ইউনিকোড নির্ভর বাংলা সাইটে গেলে বা ডিফল্ট ফন্টে বাংলা লিখলে তার লেখা খুব ছোট দেখায়। এই সমস্যা সমাধান করতে হলে ডিফল্ট ফন্টটি পাল্টে এমন ফন্ট যার আকার গ্রহনযোগ্য আকারে বড়। ফন্ট ফিক্সারের সাহায্যে খুব সহজেই ডিফল্ট বাংলা ইউনিকোড ফন্ট পাল্টে দেয়া যায়। চাইলে আবার বৃন্দ ফন্টটিকে ফিরিয়ে আনা যায়। সিয়াম রুপালী ফন্টটি যথেষ্ট বড় তাই এটি ডিফল্ট করে দিতে পারেন। ‘বাংলা’ ফন্টটি সিয়াম রুপালী’র চেয়ে অপেক্ষাকৃত ছোট হলেও সুন্দর ও আদর্শ, এছাড়া ‘সোলায়মান লিপি’ ফন্টটি ব্যবহার করে দেখতে পারেন।

অন্য খবর  যে ফোনের পুরোটাই ডিসপ্লে

এখানে একটি লক্ষণীয় ব্যাপার, ডিফল্ট ফন্ট পাল্টে দিলেও বৃন্দ নামটি চলে যাবে না। ডিফল্ট হিসেবে যে ফন্টটি দেবেন সেটিকেই ‘বৃন্দ’ নামে দেখাবে এবং নতুন ডিফল্টা ফন্টটি নিজেও থাকবে। যেমন যদি ‘বাংলা’ ফন্টটিকে ডিফল্ট করে দেন, তবে সিঙ্গেল কী-স্ট্রোকের মাধ্যমে অভ্র বাংলা একটিভ করে লিখলে বাংলা ফন্টেই লেখা হবে কিন্তু দেখাবে বৃন্দ, অবার বাংলা ফন্টও সিলেক্ট করে লিখতে পারেন। এর মানে হল বৃন্দই ডিফল্ট বাংলা ফন্ট। এই অবস্থায় আপনি বৃন্দ ফন্ট দিয়ে লেখা কোন ডকুমেন্ট অন্য কারো কম্পিউটারে খুললে যদি তার কম্পিউটারে ডিফল্ট ফন্ট হিসেবে অন্য কোন ফন্ট থাকে তবে আপনার ডকুমেন্টের লেখা সেই ফন্টে দেখাবে। এটা নিয়ে দ্বিধাণ্বিত হবার কিছু নেই।

ফোনেটিক কি আদৌ কোন কীবোর্ড?

ফোনেটিক কোন সমাধান নয়। এটা বলা যায় শিশুকে হাটতে শেখানোর যন্ত্র। কিন্তু সেই শিশুকে দৌড় প্রতিযোগীতায় নামাতে চাইলে, ভাষাকে এগিয়ে নিতে চাইলে ফোনেটিক নয় কোন স্ট্যান্ডার্ড কিবোর্ড নিয়েই কাজ করা উচিৎ। তাছাড়া ফোনেটিক ইংরেজী হরফে বাংলা লিখাকে উৎসাহিত করে। এভাবে বাংলা ভাষা কোনদিনই লেখালেখিতে স্বাতন্ত্র অর্জন করতে পারবে না। তাছাড়া ফোনেটিকের আর একটি সমস্যা হল এটি ইংরেজী বর্ণের উচ্চারণ নির্ভর। যেখানে ইংরেজী ভাষা নিজেই বর্ণদারিদ্রে ভুগছে সেখানে ইংরেজী বর্ণের উচ্চারণ নির্ভর ‘ফোনেটিক’ একটি সমৃদ্ধ ভাষার অবলম্বন হতে পারে না। ন্যূন্যতম যেটা করা যেতে পারে কীবোর্ডে ইংরেজী বর্ণের অবস্থানের সাথে মিলিয়ে একটি স্ট্যান্ডার্ড কীবোর্ড নির্ধারণ করা। আর ফোনেটিকে কখনোই সর্বোচ্চ গতি অর্জন করা যাবে না যা কোন কীবোর্ড লেআউটে লিখে সম্ভব। কিন্তু এমনিতেই বাংলা ভাষা কীবোর্ডের ভারে ন্যূজ্য।

তাহলে কোন কীবোর্ড ব্যবহার করব?

অভ্রে পাঁচটি কীবোর্ড ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে, অভ্র ফোনেটিক, অভ্র ইজি, বর্ণনা, জাতীয়, ইউনিজয়। অভ্র প্যানেলের ডাউনএ্যারোতে ক্লিক করে খুব সহজেই যে কোন কীবোর্ড বাছাই করতে পারেন। এখানে মাউস দিয়ে লেখার সুবিধা রয়েছে। Show active keyboard layout এ ক্লিক করলে যে কীবোর্ড ব্যবহার করছেন তার লেআউট দেখা যাবে। তাই যে লেআউটটি ভাল লাগে সেটি সেখানে দেখে খুব সহজেই শেখা যায়।

অন্য খবর  উদ্বোধন করা হলো নারিশা ইউনিয়ন পরিষদের কম্পিউটার ল্যাব

ইউনিজয়: এটি বিজয়ের ইউনিকোড রুপ। বিজয় কীবোর্ডটি মোস্তফা জব্বারের কপিরাইট করা, তাই বিজয় হুবহু তুলে দেয়া সম্ভব হয় নি।কয়েকটি কম ব্যবহৃত বর্ণে সমান্য পরিবর্তন রয়েছে। পরিবর্তন গুলো এখানে সহজ ভাবে ব্যাক্ষা করা হয়েছে। যারা বিজয় কীবোর্ড জানেন তাদের নতুন করে কীবোর্ড আয়ত্ত করার প্রয়োজন নেই, ইউনিবিজয় যা ইউনিজয় নামেও পরিচিত ব্যবহার করতে পারেন। বিভিন্ন ওয়েব সাইট, ফোরাম ইত্যাদীতে ইউনিজয় কীবোর্ডটি সংযুক্ত থাকে তাই এটা জানা থাকলে কোন সফটওয়ার না ব্যবহার করে ওইসব ব্লগ, ফোরামে ইউনিজয় দিয়ে লেখা যায়। যদিও বিজয় বা ইউনিজয়-এর লেআউট কোন আদর্শ লেআউট নয় তবু এর বহুল ব্যবহারের কারনে আমরা এই লেআউট হতে বের হয়ে আসতে পারছি না।
বর্ণনা: ওমিক্রন ল্যাব ‘সেফওয়ার্কস’র ১৯৯৬-৯৮ সালে বানানো এই কীবোর্ডটিকে ঈষৎ ও ইউনিকোডে রুপান্তরিত করেছে। এযাবৎকালের আদর্শ কীবোর্ড মনে হয়েছে। ইংরেজী বর্ণের সাথে বাংলা বর্ণের মিল রেখে এর লেআউট তৈরি করা হয়েছে তাই এটা নতুনদের জন্যেও আয়ত্বে আনা খুব সহজ, বিশেষ করে যারা ফোনেটিক ব্যবহার করছেন তারা এটা ব্যবহার করে দেখতে পারেন। ফোনেটিকের মতই কিন্তু পূর্ণাঙ্গ একটি স্ট্যান্ডার্ড লেআউট।

অভ্র ইজি: ওমিক্রন ল্যাবের তৈরি কীবোর্ড।
জাতীয়: বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল’র (BCC) বানানো কীবোর্ড। প্রায় বিজয়ের মত লেআউট, সামান্য পরিবর্তন রয়েছে।
জাতীয় ও ইউনিবিজয় প্রায় একইরকম তাই এদুটো হতে ইউনিবিজয়ই উত্তম। আর নতুন-পুরোনো সবার জন্য বর্ণনা সহজ ও আদর্শ। প্রতিটি কীবোর্ড সিলেক্ট করে তার লেআউট দেখুন, ব্যবহার করুন, কোনটি আপনার ভাল লাগে তারপর সিদ্ধান্ত আপনার।

সিঙ্গেল কী-স্ট্রোক:

বিজয় দিয়ে বাংলা লিখতে হলে ctrl+alt+b চাপতে হয়। অভ্র দিয়ে বাংলা লিখার জন্যও এটি রাখতে পারেন। তবে তিনটি কী চাপা কষ্টের কাজ তার চে’ অভ্রতে মাত্র একটি কী চেপে বাংলা সিলেক্ট করা যায়। অভ্র কীবোর্ডের প্যানেল হতে সেটিংসের বাটনে চেপে Option, তার পর Keyboard Mood থেকে F1 হতে F12 যে কোন কী বাছাই করতে পারেন। এমন কী বাছাই করতে হবে যার অন্য কোন কাজ নেই এবং হাতে নাগালে। যেমন F1-এ হেল্প, F2-এ রিনেম, F5 এ রিফ্রেশ, F12-এ সেভ এ্যাস ইত্যাদী।

আপনার মতামত দিন