থানায় ডায়েরি কেন করবেন, কিভাবে করবেন?

916

ভয়-ভীতি বা হুমকি দিলেই যে শুধুমাত্র জিডি করতে হয়-এমন কিন্তু নয়, নানা প্রয়োজনেই আপনাকে জিডি করতে হতে পারে। যেকোনো ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি থানায় জিডি করতে পারেন। কারো যদি কোনো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যেমন-জাতীয় পরিচয়পত্র, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, পাসপোর্টসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় নথি হারিয়ে যায়, সেক্ষেত্রে জিডি করাটা জরুরি। এ ছাড়া হুমকি, ছিনতাই, এমনকি পরিবারের কেউ যদি হারিয়েও যায় সেক্ষেত্রে জিডি করতে হবে। যেকোনো সমস্যা হলেই সাথে সাথে থানায় জিডি করে ফেলুন। পরে যদি আপনার কোনো ক্ষতি হয়েই যায়, তা হলে আইনি সহায়তা নিতে অনেক সহায়ক হবে ওই জিডি।

কোথায় করবেন
সাধারণত অনেকে বুঝ তেই পারেন না, কোন থানায় জিডি করবেন। নিয়মমতে আপনার যাত্রা শুরু যেখান থেকে বা যে এলাকায় আপনার জিনিস হারিয়েছে বা খোয়া গেছে, সে এলাকার থানাকে প্রাধান্য দিতে পারেন। তবে, আপনার ছিনতাই হলো এক থানার অধীনে আর আপনি জিডি করতে যাবেন অন্য থানায়, এমনটি ঠিক নয়। অন্য সব ক্ষেত্রে নিজের থানায় জিডি করা যাবে।

যা থাকবে দরখাস্তে
ঘটনার তারতম্যের কারণে জিডির উপাদানের পার্থক্য ঘটতে পারে। তবে কিছু সাধারণ উপাদান আছে, যেগুলো একটি জিডির মধ্যে থাকা প্রয়োজন। জিডি নিজে লেখা যায় আবার থানার কর্তব্যরত কর্মকর্তাও লিখতে পারেন। নিচের কয়েকটি উপাদান জিডির মধ্যে থাকতে হবে।
১. থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সম্বোধন করে লিখতে হবে এবং থানার নাম ও ঠিকানা লিখতে হবে।
২. বিষয় : ‘জিডি করার জন্য আবেদন’ এভাবে লিখতে হবে।
৩. অপরাধ সংঘটনের আশঙ্কা করলে জিডিতে আশঙ্কার কারণ উল্লেখ করতে হবে।
৪. হুমকি দিলে হুমকি দেওয়ার স্থান, তারিখ, সময়, সাক্ষী থাকলে তাদের নাম, পিতার নাম ও পূর্ণ ঠিকানা উল্লেখ করতে হবে।
৫. হুমকি প্রদানকারী পরিচিত হলে তার/তাদের নাম, পিতার নাম ও পূর্ণ ঠিকানা উল্লেখ করতে হবে।
৬. অপরিচিত হলে তাদের শনাক্তকরণের বর্ণনা দিতে হবে।
৭. অপরাধ সংঘটনের আশঙ্কার ক্ষেত্রে সন্দেহভাজন ব্যক্তি, সন্দেহের কারণ উল্লেখ করে তাদের নাম, পিতার নাম, পূর্ণ ঠিকানা ইত্যাদি উল্লেখ করতে হবে।
৮. জিডি নথিভুক্ত করে বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন করতে হবে।
৯. সর্বশেষ জিডিকারীর নাম, স্বাক্ষর, পিতার নাম, পূর্ণ ঠিকানা ও তারিখ দিতে হবে।

অন্য খবর  শনিবারের সংঘর্ষ-আগুন : সাতশ’র বেশি মানুষ আটক

জিডির কপি সংগ্রহ
জিডি দুই কপি করতে হবে। এক কপি নথিভুক্ত করার জন্য থানায় জমা দিতে হবে আর এক কপি থানার কর্মকর্তা কর্তৃক সহি মোহরকৃত করে নিজের কাছে রাখতে হবে।

অনলাইন সুবিধা
নগরবাসীর জন্য জিডির প্রক্রিয়া সহজ করতে ঢাকা মহানগর পুলিশ অনলাইন পদ্ধতি চালু করেছে। আপনি চাইলে ঘরে বসেই অনলাইনে জিডি করতে পারেন। এর বাইরেও অনলাইনে যে সুবিধা আছে, তা হলো এক সঙ্গে যদি আপনার অনেক জিনিস হারিয়ে যায়, তা তুলতে গেলে আপনার কাছে জিডির মূল কপি চাইতে পারে। কিন্তু মূল কপিতো থাকবে একটাই। সেক্ষেত্রে আপনি যদি অনলাইনে করে থাকেন তখন, শুধু জিডির নাম্বারটা ব্যবহার করলেই যথেষ্ট। তবে সতর্কবাণী হয়েছে অনেকেই ঘটনার তারিখ, সময় এবং স্থান উল্লেখ করতে ভুল করেন। ঘটনার তারিখ, স্থান, সময় তিনটি বিষয়ই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তা খেয়াল রাখতে হবে।

জিডি করার পর
থানার কর্তব্যরত কর্মকর্তা ডিজি-টি পরে সংশ্লিষ্ট থানার ওসির কাছে পাঠান। তিনি জিডি-টি পড়ে প্রয়োজনে কোনো উপপরিদর্শক বা সহকারী উপপরিদর্শকের কাছে তদন্তের দায়িত্ব দিয়ে থাকেন। তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এফআইআর দায়ের করেন।

অন্য খবর  দেশে হাসিনার ‘ফ্যাসিস্ট পার্টি'র কোনো জায়গা নেই: ড. ইউনূস

কিছু জরুরি তথ্য
জিডি করতে কোনো টাকা-পয়সা লাগে না। এমনকি আপনি যদি না-ও লিখতে পারেন, সেবা প্রদান কর্মকর্তা প্রয়োজনে তা লিখে দিবেন, আপনি শুধু নিচে স্বাক্ষর করবেন। এর জন্য ওই কর্মকর্তাকে কোনো ফি দিতে হবে না। জিডি লিখে তা জমা দিতে হবে থানার কর্তব্যরত কর্মকর্তার দপ্তরে। তিনি তা গ্রহণ করে জিডির নাম্বার ও তারিখ বসাবেন এবং তা নির্ধারিত রেজিস্টারে তালিকাভুক্ত করবেন। এবং আপনার কপিতে তা লিখে দিবেন। যারা অনলাইনে জিডি করবেন, তারা চাইলে সংশ্লিষ্ট থানায় গিয়ে জিডির নাম্বারসহ তার একটি কপি সংগ্রহ করতে পারেন।

 

আপনার মতামত দিন