নকল ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যে সয়লাব দোহার নবাবগঞ্জের ইলেকট্রনিক্স শো-রুম গুলো

চটকদার বিজ্ঞাপনে প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা

2309
নকল ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যে সয়লাব দোহার নবাবগঞ্জের ইলেকট্রনিক্স শো-রুম গুলো

অবাধ আমদানি ও কিছু দেশীয় প্রতিষ্ঠানের কারসাজির ফলে নিম্নমানের ইলেকট্রনিক্স পণ্যে ভরে যাচ্ছে দোহার নবাবগঞ্জের বিভিন্ন বাজারে অবস্থিত ইলেকট্রনিক্স শো-রুম গুলো। চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে এসব নিম্নমানের পণ্য কিনে প্রতারিত হচ্ছেন দোহার নবাবগঞ্জের সাধারণ ক্রেতারা। মানহীন এসব ইলেকট্রনিক্স পণ্য বাজারজাত করণের ক্ষেত্রে কিছু প্রতিষ্ঠান নাম বা ব্র্যান্ড পাল্টে জাপান, তাইওয়ান, হাঙ্গেরী, ইউএসএ এসব দেশের ব্রান্ডের নাম সম্বলিত লেবেল লাগিয়ে তাতে মনগড়া গ্যারান্টি ও ওয়ারেন্টি লাগানো হয়।

পণ্যগুলোর চাহিদা ও তুলনামূলক দাম কম হওয়ায় ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে কিনছে এসব পণ্য। এসব পণ্যের কার্যক্ষমতা ও স্থায়িত্ব একেবারেই কম। অধিকাংশ পণ্যের কোনো ওয়ারেন্টি দেয়া হয় না, আর যদি দেওয়া ও হয় তবু পরবর্তীতে সে অনুযায়ী সেবা দেওয়া হয়না। ক্রয়ের কিছুদিনের মধ্যেই মেশিনারি, ফ্রিজ হয়ে পড়ছে অচল। অভিযোগ করলেও সেবা দেয়ার ব্যবস্থা নেই। দোহার নবাবগঞ্জের কয়েকজন ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই জানা গেছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ইলেকট্রনিক পণ্য আমদানি ও বাজারজাতকরণ এবং স্থানীয়ভাবে সংযোজনে এখন পর্যন্ত সঠিক কোন নীতিমালা করা হয়নি। বাংলাদেশে ফ্রিজ,এসি, ওয়াশিং মেশিনসহ যেসব ইলেকট্রনিক পণ্য আমদানি হয় সেগুলোর ৮০ শতাংশই আসে বিনা ব্র্যান্ডে অর্থাৎ কোন কোম্পানির পণ্য তা লেখা থাকে না পণ্যে। পরে আমদানিকারকরা ইচ্ছেমতো বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নাম বসিয়ে সেগুলো বাজারজাত করে। বিনা ব্র্যান্ডের এসব পণ্য যখন শোরুমে তোলা হয়, তখন কোনোটি প্যানাসনিক, কোনোটি সনি আবার কোনোটি স্যামসাং অথবা দেশি কোনো ব্র্যান্ডের হয়ে ক্রেতার হাতে যাচ্ছে। তবে বাস্তবে এগুলোর কোনোটিই এসব কোম্পানির উৎপাদিত পণ্য নয়।

অন্য খবর  দোহার-নবাবগঞ্জে সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা

দোহার নবাবগঞ্জের বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে,মোবাইল সেট, টেলিভিশন,ক্যামেরা, মাইক্রোওভেন, ফ্রিজ ও চার্জার টেবিল লাইট, সিলিং লাইট, টর্চলাইট, ফ্যানসহ কয়েক হাজার ধরনের আমদানিকৃত পণ্য বিক্রি হচ্ছে এসব মার্কেটগুলোতে । এছাড়াও মশা মারার ব্যাট, চার্জার ফ্যান, পেন ড্রাইভ, ব্লেন্ডিং মেসিন,রুম হিটার, গিজার, ওয়াটার হিটার, ফিল্টারসহ আধুনিকায়নের বিভিন্ন পণ্য। পণ্যগুলো ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকায় উৎসাহ নিয়ে কিনছে ক্রেতারা।

অনুসন্ধানী সূত্রে জানা গেছে, চীন থেকে পণ্য আমদানি করে লোগো ও স্টিকার পরিবর্তন করে দেশি পণ্য হিসেবে বাজারজাত করছে দোহার নবাবগঞ্জের কিছু অসাধু প্রতিষ্ঠান। এসব পণ্যের সেবার মান খুবই খারাপ যদিও এগুলো দেখতে হুবহু আসল কোন ব্যান্ডের পণ্যের মতই। তাই সাধারণ ক্রেতাদের বোঝারও কোন উপায় থাকে না কোনটি আসল আর কোনটি নকল পণ্য। ওয়ারেন্টি সেবা দেয়ার কথা বলে বিক্রি করে পরবর্তীতে সেই সেবা নিয়ে টালবাহানা করার অভিযোগও পাওয়া গেছে কোন কোন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে । বিশেষ করে মোটরসাইকেল, টিভি, ফ্রিজ, এসি ও হোম এপ্লায়েন্সের ক্ষেত্রে অভিযোগের পরিমাণটা একটু বেশিই রয়েছে ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দোহারের একটি নামকরা ইলেকট্রনিক্স শো-রুমের সদ্য চাকুরীচুত্য এক কর্মকর্তা জানান,

“ঢাকার গুলিস্তান থেকে বিভিন্ন ব্যান্ডের লোগো ও স্টিকার এনে তা চায়না থেকে আমদানি করা নকল পণ্যে এক প্রকার বিশেষ আঠা দিয়ে লাগানো হয়। পরে সেসব ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ক্রেতাদের নিকট বিক্রি করে দেওয়া হয়”।

ফলে বিদেশি পণ্য ভালো মনে করে চড়া দাম দিয়ে কিনেও লোকসানের মুখে পড়ছেন দোহার নবাবগঞ্জের সাধারণ ক্রেতাগন।

অন্য খবর  মাহমুদপুরে ঢাকা জেলা বিএনপির ত্রান বিতরন

বাংলাদেশ রেফ্রিজারেটর ম্যানুফ্যাকচারার অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ২১ হাজার কোটি টাকার ফ্রিজ, এয়ারকন্ডিশনার ও মোটরসাইকেল আমদানি করা হচ্ছে। এর মধ্যে দেশে সাড়ে ৭শত প্রকারের ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রাংশ এবং ৮৬ ধরনের আধাপ্রস্তুত পণ্য আমদানি হয়ে আসছে। এর বাইরে শিশুদের জন্য ইলেট্রনিক্স সামগ্রী আমদানি হয়েছে সাড়ে ৮শ কোটি টাকার।

ভালো কোম্পানির লোগো ব্যবহার করে মূলত নকল পণ্য বিক্রির হিড়িক চলছে। ক্রেতাদের পক্ষে এসবের মান বিচার করা সম্ভব নয়। প্রশাসনকেই এ বিষয়ে উদ্যোগী হতে হবে। নিম্নমানের পণ্য দোহার নবাবগঞ্জের শোরুম গুলোতে প্রবেশ করতে না পারলে সব ক্রেতাই উপকৃত হবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, কঠোরভাবে মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নিম্নমানের এসব পণ্য দোহার নবাবগঞ্জে প্রবেশ রোধ করা সম্ভব। শুধুমাত্র ট্রেডিং করে বিপুল পরিমাণ মুনাফা লুটে নেয়ার মানসিকতা থেকেই একশ্রেণির অসাধু আমদানিকারক বিদেশ থেকে পণ্য এনে ছড়িয়ে দিচ্ছে স্থানীয় বাজারগুলোতে। যার ফলে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন দোহার নবাবগঞ্জের সাধারণ ক্রেতাগণ।

এ প্রসঙ্গে দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে.এম. আল-আমীন বলেন, ”কোন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এমন কোন অভিযোগ পাওয়া গেলে ভোক্তা অধিকার আইনের তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে”।

আপনার মতামত দিন