দোহারের লটাখোলায় অবস্থিত ‘পীর মতি’র আস্তানা ভেঙ্গে দিয়েছে দোহার উপজেলা প্রশাসন। গতকাল ৯ই অক্টোবর শনিবার রাত ১০;৩০টার দিকে দোহার উপজেলা অফিসার ইনচার্জ সিরাজুল ইসলাম শেখের নেতৃত্বে স্থানীয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ‘পীর মতি’র আস্তানা ভেঙ্গে দেওয়া হয়। এ সময় উচ্ছেদ অভিযানের সঙ্গে ছিলেন দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে.এম.আল-আমীন।
এ সময় আস্তানার ভেতর থেকে আস্তানায় ব্যবহৃত নানারকম সরঞ্জামাদী এবং প্রচুর পরিমানে পর্ণ সিডি উদ্ধার করা হয়। সেগুলো পরে দোহার থানায় নিয়ে আসা হয়। তবে ‘পীর মতি’কে বাড়ীতে পাওয়া যায় নি। অনেক আগেই সে পালিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় জনগণ।
এদিকে সাড়াজাগানো অনুসন্ধান প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য দোহারবাসী ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন নিউজ টোয়েন্টিফোরের সংশ্লিষ্ট রিপোর্টারসহ কর্তৃপক্ষকে। এ প্রতিবেদনে তোলপাড় সৃষ্টি হয় উপজেলাজুড়েই। আর প্রতিবেদনটি প্রচারের খবর পেয়েই গাঢাকা দেন মতিউর রহমান ওরফে হজবাবা। ভণ্ডপীরের লোকেরা বলে বেড়ান ‘হজ করতে আপনাকে লাখ টাকা খরচ করে মক্কায় যেতে হবে না, ঢাকার দোহারেই সেরে নিতে পারেন হজব্রত। যার নেতৃত্বে এই সওয়াবের কাজটি করতে পারবেন তার নাম ডা. মতিউর রহমান ওরফে হজবাবা।’
জানা যায়, প্রতিবেদনটির প্রচার বিঘ্নিত করতে বিভিন্ন এলাকায় ডিস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। দোহারের পালামগঞ্জ এলাকার সাখাওয়াত হোসেনসহ বেশ কয়েকজন জানান, ‘প্রতিবেদনটি প্রচার হবে, আমরা বাংলাদেশ প্রতিদিনে বিজ্ঞাপন দেখে পরিবারের সবাই টেলিভিশন সেটের সামনে অপেক্ষা করছিলাম। যথাসময়ে অনুষ্ঠান প্রচার শুরু হয়। কিন্তু ১০ মিনিট পরই আমাদের ডিস সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়। জানতে পাই এলাকার অনেক বাড়িতে একই অবস্থা।’
লটাখোলার আরমান আলী জানান, ‘৯টায় অনুষ্ঠানটি শুরুর ১০ মিনিটের মধ্যেই ডিস সংযোগ অকেজো হয়ে যায়। খোঁজ নিয়ে জানতে পাই, পাশের জয়পাড়ায় সংযোগ চালু আছে। তখনই বুঝতে পারি এটা ওই ভণ্ডপীর মতির লোকদের কারসাজি।’
রাত ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত অনুষ্ঠানটি প্রচারের পরপরই দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম আল-আমীন ও দোহার থানার ওসি সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ভণ্ডপীর মতিউর রহমানের আস্তানায় অভিযান শুরু করে। এ সময় আস্তানা গুঁড়িয়ে দিয়ে কথিত ওই পীরের প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের বই, সিডি ও ছবি জব্দ করা হয়।
উত্তেজিত জনতা আস্তানায় ভাঙচুর চালাতে যায়। ‘এ ধরনের কর্মকাণ্ড ভবিষ্যতে আর এখানে করতে দেওয়া হবে না’ বলে পুলিশ তাদের আশ্বস্ত করলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এ সময় উত্তেজিত এলাকাবাসী ভণ্ডপীর মতির গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে।
প্রশাসন বাড়ীটি সীলগালা করে দেওয়ার পর পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বদরুল ইলামের হেফাজতে আছে। বর্তমানে বাড়ীটিতে সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে দোহার থানা অফিসার ইনচার্জ সিরাজুল ইসলাম শেখ নিউজ৩৯-কে বলেন, ”ভণ্ডপীর মতিকে যেখানেই পাওয়া যাবে তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে এসে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।“
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম আল-আমীন বলেন, ‘এ ধরনের ভণ্ডামি জঘন্যতম অপরাধ। ভবিষ্যতে এ ধরনের ভণ্ডামি যাতে কেউ করতে না পারে সেদিকে দৃষ্টি রাখবে প্রশাসন।’
নিউজ২৪ টিভির যে রিপোর্ট টিভিতে প্রচারিত হবার পর দোহার উপজেলা প্রশাসন পদক্ষেপ নেয় সেই রিপোর্ট-