আগামী ৭ মে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে অস্ত্রবাজ সন্ত্রাসীদের মহড়া শুরু হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে অস্ত্র নিয়ে নির্বাচনী সভায় প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করায় ভোটারদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাছাড়া প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে বিভিন্ন চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে ভাড়াটে মাস্তান, সন্ত্রাসী ও অস্ত্রবাজরা ভোটারদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে বলেও জানিয়েছেন ভোটাররা।
সরেজমিন ঘুরে কয়েকটি ইউনিয়নের প্রার্থী, ভোটার, সুধী সমাজ ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্বাচনে জয়ী হতে বিভিন্ন গুজব ছড়াচ্ছে। এতে ভোটার ও সাধারণ মানুষের মাঝে শংকা এবং আতংক বিরাজ করছে। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, কৈলাইল, শোল্লা, বাহ্রা, গালিমপুর, নয়নশ্রী ও শিকারিপাড়া ইউনিয়নের কেন্দ্র দখলের প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে এক শ্রেণীর চেয়ারম্যান প্রার্ধীর সমর্থকরা। ফলে সাধারন ভোটাররা আতংকে দিন কাটাচ্ছেন।
নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে চিহ্নিত সন্ত্রাসী, মাস্তান, মাদক ব্যবসায়ী, ও বখাটেদের আনাগোনা ততই বাড়ছে। অভিযোগ আছে, উপজেলার বাহ্রা ইউনিয়নে এক প্রার্থীর গণসংযোগে হত্যা মামলার আসামি, কুখ্যাত এক সন্ত্রাসী, ডাকাতি মামলার আসামি প্রকাশ্যে ভোট চাইছে। প্রচারণার সময় অস্ত্র নিয়ে ঘুরতেও দেখা গেছে। শনিবার কান্দামাত্রায় এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর নির্বাচনী সভায় প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করেছে মুন্সীগঞ্জের চিহ্নিত সন্ত্রাসী মো. লিটন। এ সময় তার সঙ্গে আরও কয়েকজন সন্ত্রাসী ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
বাহ্রা ইউনিয়নের আরেক প্রার্থী সুবেদুজ্জামান আওয়ামী লীগের প্রার্থীর দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলে বলেন, র্যাব-পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সফরসঙ্গী হয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছে। প্রশাসন জেনেও কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
এদিকে শিকারিপাড়ায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর হয়ে কাজ করছে মনিকান্দা এলাকার মাসুদ বাহিনী। অপরদিকে ভূমি ও বালুদস্যু হিসেবে খ্যাত বাদল ওরফে ল্যাংড়া বাদল সাভার থেকে অস্ত্রধারী ক্যাডার বাহিনী এনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনে প্রভাব খাটাচ্ছে।
শিকারিপাড়া ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোজাম্মেল হক টিপু অভিযোগ করেন, ইউনিয়নের সোনাতলা, মনিকান্দা, বিষমপুর, ভদ্রকান্দা, হাগ্রাদিসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় তার পোস্টার, ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আলিমোর রহমান খান পিয়ারার লোকজন। পিয়ারারের একটি বখাটে গ্রুপ নির্বাচনী প্রচারণায় গেলে জানে মেরে ফেলার হুমকিও দিচ্ছে। বখাটেরা এলাকার সাধারণ ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে না যেতে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। থানায় অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি বলে তিনি জানান।
এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আলিমোর রহমান খান পিয়ারা বলেন, তার কোনো সন্ত্রাসী বাহিনী নেই। একটি গ্রুপ মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে অহেতুক ঝামেলা করার চেষ্টা করছে।
কৈলাইলে পার্শ্ববর্তী কেরানীগঞ্জের হজরতপুর, কলাতিয়া, ঢালীকান্দা, আঁটিপাড়া ও লাকির চরের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা প্রতিদিনই এলাকায় ঘোরাফেরা করছে। তারা ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে কৈলাইল ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোক্তার হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শংকায় আছি। এলাকায় অচেনা চেহারা তরুণ যুবকদের দেখা যাচ্ছে। এতে করে সাধারণ ভোটারদের মাঝে ইতিমধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ছে।’
এদিকে রোববার সকালে চুড়াইন ইউনিয়নের মুসলিমহাটি গ্রামে নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা (বিএনপির বিদ্রোহী) স্বতন্ত্র প্রার্থীর আনারস প্রতীকের আবু সাঈদের সমর্থক রইস উদ্দিন মোল্লা ও বোরহান উদ্দিন মোল্লাকে পিটিয়ে আহত করে। এ সময় আনারস প্রতীকের পোস্টার-ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা হয় এবং তাদের প্রাণে মারার হুমকি দেয়া হয় বলে অভিযোগ করেন আবু সাঈদ।
নবাবগঞ্জ থানার ওসি সায়েদুর রহমান এ ব্যাপারে বলেন, ‘বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার সংবাদ পেয়েছি। তবে দলীয় ও সেই দলের বিদ্রোহীরাই বেশি সমস্যা করছে। নির্বাচনী পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। এ ছাড়া পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও সব পর্যবেক্ষণ করছেন।