নিউজ৩৯♦ স্বাক্ষর জাল করে মোটা অংকের বিল তুলে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে ঢাকা জেলা পরিষদে। শুধু একটি প্যাকেজেই আত্মসাৎ করা হয়ছে ৭২ লাখ টাকা। আর এটি করতে গিয়ে জেলা পরিষদের প্রভাবশালী চক্রটি ৩৬টি প্রতিষ্ঠানের প্যাড ও সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষর জাল করে। অথচ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনপূর্বক বিল ছাড় করার নিয়ম রয়েছে। এক্ষেত্রে জেলা পরিষদের প্রশাসক, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তা পালন করেননি। উল্টো এভাবে জালিয়াতি করে টাকা তুলে নেয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। কেননা সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের নীরব সমর্থন না থাকলে স্বাক্ষর জাল করে টাকা হাতিয়ে নেয়া মোটেই সম্ভব নয়। জেলা পরিষদ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র বলছে, এ রকম স্বাক্ষর জাল ও ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে বিগত কয়েকটি অর্থবছরে কমপক্ষে ২০ কোটি টাকা দুর্নীতিবাজদের পকেটে চলে গেছে। তথ্যানুন্ধানে জানা যায়, ২০১২-২০১৩ এবং ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে ঘটছে এ রকম ভয়াবহ জালিয়াতির ঘটনা। অভিযোগ রয়েছে, এসব জালিয়াতি ও দুর্নীতির পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নে সহায়তা করেছেন ঢাকা জেলা পরিষদের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী নুরুন্নবী পাঠান ও সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মলয় কুমার রায়। আর প্রশাসক হিসেবে হাসিনা দৌলাও এ দায় এড়াতে পারেন না। সূত্র বলছে, তার জানার মধ্যেই সবকিছু হয়েছে। এমনকি স্বাক্ষর জাল করে এসব প্রতিষ্ঠানের নামে যারা বিল উঠিয়ে নিয়েছেন তারা প্রত্যেকের প্রশাসক হাসিনা দৌলার ঘনিষ্ঠজন। এরা হলেন প্রশাসক হাসিনা দৌলার পিএস মনির হোসেন, ঠিকাদার দিদার উদ্দিন, হাজী মিজান প্রমুখ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা জেলা পরিষদের প্রশাসক হাসিনা দৌলা বলেন, ‘জেলা পরিষদে যোগদানের পর প্রতিষ্ঠানের নিয়ম-কানুন বুঝে উঠতে কিছুটা সময় লেগেছিল। ওই সময়ে সাবেক প্রকৌশলী নুরুন্নবী পাঠান, সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মলয় কুমার রায় এবং কিছু ঠিকাদার আমাকে ভুল বুঝিয়ে অনেক ভুয়া প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষর জাল করে বিল উঠিয়ে নেন। এদের মধ্যে ঠিকাদার দিদার উদ্দিন, হাজী মিজান এবং আমার ব্যক্তিগত পিএস মনির হোসেনও এসব অনৈতিক কাজ করেছে বলে বিভিন্ন তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুর্নীতির দায়ে সাবেক প্রধান প্রকৌশলী নুরুন্নবী পাঠান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মলয় কুমার রায়কে অন্যত্র বদলি করেছে প্রশাসন। এতে আমি অত্যন্ত খুশি। আর মনির হোসেনকে আমার পিএস পদ থেকে বাদ দিয়েছি। দুর্নীতিবাজ ঠিকাদারদের কালো তালিকাভুক্ত করে রেখেছি। ভবিষ্যতে এদের জেলা পরিষদে আর কোনো কাজের সুযোগ দেয়া হবে না। তালিকা ধরে ভুয়া বা জালিয়াতি করে উঠিয়ে নেয়া কিছু টাকা ফেরতও নেয়া হয়েছে।’ প্রতিষ্ঠানের প্রধান হয়ে দুর্নীতির দায় এড়াতে পারেন কিনা জানতে চাইলে হাসিনা দৌলা বলেন, ‘দুর্নীতিবাজদের চক্রান্তে আমি কঠিন বিপদে পড়েছি। দোয়া করবেন, আল্লাহতায়ালা যেন আমাকে এসব বিপদ থেকে রক্ষা করেন।’
ঢাকা জেলা পরিষদের সাবেক প্রকৌশলী নুরন্নবী পাঠান বলেন, ‘তার সময়ের কিছু প্রকল্পের কাজের অনিয়মের তদন্ত চলছে। চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর বোঝা যাবে কে দোষী না নির্দোষ।’
ঢাকা জেলা পরিষদের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মলয় কুমার রায় বলেন, ‘ঢাকা জেলা পরিষদে যেসব অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে সেসবের ব্যাপারে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’
স্বাক্ষর জাল করে টাকা আত্মসাৎ : ঢাকা জেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষর জাল করে বিল তুলে নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে সাভার উপজেলার ফুলবাড়ীয়া শীব দেবের মন্দির, দোহার উপজেলার শ্রী শ্রী কালিমন্দির, ধামরাই উপজেলার চণ্ডাইলের শ্রী শ্রী কালিমন্দির, ধামরাই উপজেলার কাকরনি নাটমন্দির এবং দিলীপ মুখার্জি শিব মন্দির, ধামরাই উপজেলার শ্রীরামপুর বাজার জামে মসজিদ, সাভার উপজেলার উত্তর পোড়াবাড়ীর মণ্ডলবাড়ি সরস্বতী মন্দির এবং পোড়াবাড়ী শ্রী শ্রী গঙ্গা মন্দির, আশুলিয়া উপজেলার শ্রী হরী মন্দির, সাভার কবিরাজপাড়া দুর্গামন্দির, সাভার গণকপাড়া শিব মন্দির, দোহার উপজেলার শ্রী শ্রী রাধারায় মন্দির, ধামরাই উপজেলার বালিয়া এলাকার রাস্তা ও কবরস্থান উন্নয়ন, ধামরাই চৌহালির উরজুরি কালিমন্দির, কেরানীগঞ্জ হাসনাবাদ শ্রী শ্রী রাধা কালিমন্দির উন্নয়ন, নবাবগঞ্জের হরিশপুর শীবঠাকুর মন্দির উন্নয়ন, নবাবগঞ্জের শোল্লা শ্রী শ্রী গঙ্গাদেবীর মন্দির, ধামরাই পশ্চিম কেলিয়া বায়তুস সালাম জামে মসজিদ, ধামরাই কুল্লা কেলিয়া এমদাদুল উলুম মাদ্রাসা ও এতিমখানা, ধামরাই মধুডাঙ্গা পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদ, দোহার হরিচণ্ডি ব্যাপারী বাড়ি জামে মসজিদ, কেরানীগঞ্জ সবুরবাড়ী শ্রী শ্রী মহাদেব মন্দির, নবাবগঞ্জ ভাঙ্গাভিটা কালিমন্দির, কোমরগঞ্জ পাঠানকান্দা বায়তুল দাল জামে মসজিদ, ঢাকা গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু সেবাশ্রম উন্নয়ন, ধামরাই বড়কুশিয়ারা বায়তুল আমান জামে মসজিদ, আশুলিয়া বাড়ীগাঁও বোয়ালীপাড়া জামে মসজিদ, আশুলিয়া মোল্লাপাড়া কবরস্থান, ঢাকা রাধা ভোনপাড়া শ্রী শ্রী দুর্গামন্দির, নবাবগঞ্জ করাতিবাড়ী মন্দির, উত্তরখান সর্বজনীন দুর্গামন্দির, নবাবগঞ্জ আশিকুলসীবাড়ী রাস্তা, দোহার শিলাকাঠা বায়তুল জামে মসজিদ, সাভার নামনগর নদীরপাড় জামে মসজিদ, ঢাকার আল-রাইন স্কুল।