নিউজ৩৯♦ ঢাকা সিভিল সার্জন অফিসের নিয়ন্ত্রণাধীন ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সেবা ও সরবরাহ খাতের অধীনে নিয়োগ পাওয়া দোহার, নবাবগঞ্জ ও কেরানীগঞ্জের ৩৭ জন এমএলএসএস গত ৮ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। অথচ এই চাকরি পেতে তাদের ৭০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়েছে।
সিভিল সার্জন অফিস থেকে বলা হচ্ছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অর্থ বরাদ্দ না দেয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্মচারীদের বেতন দিতে পারছে না।
নবাবগঞ্জ, দোহার ও কেরানীগঞ্জ এলাকার একাধিক স্টাফ চাকরি হারানোর ভয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দাবি করেছিল তারা সরকারি চাকরি দেবে। প্রলোভনে পড়ে বেকার থাকার চেয়ে চাকরিটা জরুরি এমনটা ভেবে ঘুষ দিয়ে চাকরি পেলেও বেতন না পাওয়ায় পরিবার নিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অনেকে ২-৩ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন। রোজার মাসে ও ঈদকে সামনে রেখে তারা এখন দারুণভাবে হতাশ হয়ে পড়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ১৮ জুলাই একটি ইংরেজি দৈনিকে বিজ্ঞাপন দিয়ে অস্থায়ী ভিক্তিতে ঢাকা জেলার সাভার, ধামরাই, নবাবগঞ্জ, দোহার ও কেরানীগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য মাস্টাররোলে টিকেট ক্লার্ক, বাবুর্চি, ঝাড়–দার, আয়া, ওয়ার্ড বয়, সুইপার ও গার্ড পদে জনবল নিয়োগের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে দরপত্র আহ্বান করা হয়। ঠিকাদারি কাজ পায় ১৮/১, ডিআইটি রোড (৫ তলা), পূর্ব রামপুরার হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড। চুক্তিমতো তারা ৫টি উপজেলায় মাস্টাররোলে ৩৭ জনকে বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেয়। কিন্তু গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে গত মে মাস পর্যন্ত ৮ মাস ধরে নিয়োগ প্রাপ্তরা কেউ বেতন পাচ্ছেন না।
অভিযোগ রয়েছে, উল্লিখিত বিভিন্ন পদে এক বছরের জন্য চাকরি পেতে পদভেদে ৭০ হাজার টাকা থেকে দেড়লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়েছে। আর ঘুষের টাকার সূত্র ধরে নির্ধারণ করা হয়েছে তাদের মাসিক বেতন। যার মধ্যে ৪ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত রয়েছে। ৮ হাজার টাকা মাসিক বেতন হিসেবে অনেকের বাৎসরিক বেতন দাঁড়ায় ৯৬ হাজার টাকা। তাও আবার বকেয়া রয়েছে গত ৮ মাস ধরে। অথচ এই চাকরি পেতে দেড় লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। এখন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড অফিসে বারবার ধর্না দিয়েও মিলছে না বেতনের টাকা। অফিসে গেলে পিস্তল উঁচিয়ে হুমকি দেয়ার ঘটনা ঘটেছে বলেও অনেকে অভিযোগ করেছেন। এছাড়া বেশি তাগাদা দিলে চাকরিচুত্যির ভয় দেখানো হচ্ছে এমন অভিযোগও রয়েছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেডের পরিচালক সাহারুল ইসলাম সিকদার বলেছেন, ৩৭ জনের বেতন যোগ্যতা অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অর্থ ছাড় না দেয়ায় তারা ৮ মাস ধরে বেতন পাচ্ছে না। তিনি ঘুষ নিয়ে চাকরি দেয়া ও বেতন চাইতে যাওয়া স্টাফদের অস্ত্র দেখিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, টাকার জন্য সিভিল সার্জন অফিস ও মন্ত্রণালয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে হচ্ছে। ঈদের আগে সবাই বকেয়া বেতন পেতে পারেন বলে তিনি দাবি করেছেন।
সাহারুল ইসলাম সিকদার নিজেকে মানবাধিকার সংস্থার (এইচএফবি) চেয়ারম্যান দাবি করে জানান, ঢাকার সিভিল সার্জনের গাফলতির কারণে লোকজন ৮ মাস বেতন পাচ্ছেন না। সিভিল সার্জন সংস্থাপন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের আদেশ অনুসরণ না করায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বাজেট শাখায় ওই কাজের বিপরীতে অর্থ বরাদ্দ হয়নি।
সাহারুল ইসলাম সিকদার বলেন, এক বছরের জন্য তারা ঠিকাদারি কাজ পেলেও তা প্রয়োজনে বাড়ানো যাবে বলে চুক্তিতে উল্লেখ রয়েছে।
প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার জীবলু মিয়া বলেছেন, স্টাফরা বেতনের জন্য প্রায়ই অফিসে আসেন। এরই মধ্যে কয়েকজনকে কোম্পানির পক্ষ থেকে কিছু টাকা দেয়া হয়েছে।
ঢাকার সিভিল সার্জন ডা. মো. আবদুল মালেক মৃধা বলেছেন, স্টাফদের বেতন বকেয়া রয়েছে। তাই মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ ছাড় পেতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সার্ভিস চেষ্টা করছে। পুরো বিষয়টি দেখে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এক্ষেত্রে তার কিছু করার নেই দাবি করে ডা. মো. আবদুল মালেক মৃধা বলেন, নিয়োগে ঘুষ নেয়ার বিষয়টি তার বিষয় নয়। তিনি এ ব্যাপারে কিছু জানেন
স্বাস্থ্য সচিব সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেছেন, বিষয়টি তার জানা নেই।