সম্ভাবনাময় এলাকা দোহার উপজেলার নয়াবাড়ি ইউনিয়ন। বিগত কয়েক বছরে পদ্মার ভাঙ্গনে পদ্মার গর্ভে হারিয়ে গেছে নয়াবাড়ি ইউনিয়নের বেশ কিছু অঞ্চল। তার উপর এখন আবার পদ্মার পাড় দখল করে কিছু অসাধূ বালু ব্যবসায়ীরা গড়ে তুলেছেন এক জমজমাট ব্যবসা। একই সাথে পদ্মা বাধের উপর ড্রেজারের পাইপ, ময়লা আবর্জনা, এবং শুকনো কাঠ, রড, সিমেন্ট ইত্যাদি মালামাল আনলোডিং এর কারনে হুমকির কবলে পড়ে গেছে এই অঞ্চলের সাধারন মানুষের স্বপ্নের পদ্মা বাঁধ।
দোহার উপজেলার নয়াবাড়ি ইউনিয়নে চলমান পদ্মা বাঁধ প্রকল্পের অদূরে দিনরাত চলছে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। দোহারবাসীর আকাঙ্ক্ষিত বাঁধ প্রকল্পের ক্ষতি করেই নির্বিঘ্নে ব্যবসা করে যাচ্ছে বালুখেকোরা। বাঁধের মূল কাজে ব্যবহৃত বালুর বস্তার ভেতর দিয়ে নেয়া হয়েছে বড় বড় পাইপ। যার ফলে বাঁধ থাকার পরেও নদী ভাঙ্গন কমছেই না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নয়াবাড়ি ইউনিয়নে চলমান বাঁধ প্রকল্পের বাহ্রা হাবিল উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের দৃশ্য। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে বাঁধের কিছুটা অদূরে চলছে অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। নদীপারে রাখা অসংখ্য আনলোডিং ড্রেজার ও পাইপের ছড়াছড়ি দেখলে ঝুঝা যাবে পদ্মার বালুকে কেন্দ্র করে কতটা জমজমাট হয়ে উঠেছে বানিজ্য। নয়াবাড়ি ইউনিয়নের বাহ্রাঘাট থেকে শুরু করে বালেঙ্গা পর্যন্ত ১০ থেকে ১৫ টা ড্রেজার দিয়ে পদ্মা তীর থেকে বালু উত্তলন করা হচ্ছে। কেউ কেউ মানিকগঞ্জ থেকে ড্রেজারে বালু কেটে এনে বিক্রি করছে আবার কেউ নদীর পদ্মার ফরিদপুরের অংশ থেকে বালূ কেটে এনে বিক্রি করছে। এই ড্রেজারের পাইপ সরকারি রাস্তার উপর দিয়ে গিয়ে বালু ফেলছে বিভিন্ন স্থানে। ফলে সরকারি কার্পেটিং সড়ক কেটে বা সড়কের উপর দিয়ে উঁচু করে নেয়া হয়েছে বালুর পাইপ। আর সেখানে প্রায়ই ঘটছে দূর্ঘটনা। বালুর পাইপের কারণে নয়াবাড়ির রাস্তাঘাট এখন বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। পাইপে ধাক্কা লেগে প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনা ঘটছে। এর ফলে অনেক মোটর সাইকেলসহ ইজিবাইক দূর্ঘটনা ঘটছে। ছোট খাট থেকে শুরু করে মারাত্মক আহত হচ্ছে প্রতিনিয়িত।
গ্রামজুড়ে এমন নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি বিরাজ করলেও অসহায় মানুষ। ভেতরে ক্ষোভ থাকলেও যেন প্রকাশের সুযোগ নেই। কারণ বালু সিন্ডিকেটের সবাই সরকারি দলের নেতা বা প্রভাবশালী।
বালু বানিজ্যের সাথে সম্পৃক্ত অধিকাংশরাই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী হওয়ায় প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও অনেকটা অসহায় তাঁরা। কর্মকর্তারা বলছেন, এভাবে নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন ও বাঁধের ভেতর দিয়ে পাইপ নিতে থাকলে ভবিষ্যতে ক্ষতিগ্রস্থ পয়েন্টগুলো থেকেই হুমকির মুখে পড়তে পারে বৃহৎ এ বাঁধ প্রকল্প।
প্রকল্পের দায়িত্ব থাকা এক কর্মকর্তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, স্থানীয়রাই বালু ব্যবসা করছে। আমরা কি করব বলুন। নিজেদের এলাকার ভাল-মন্দ যদি তারা না বুঝেন তাহলে কি করার আছে। বালুর পাইপের কারনে ড্যাম্পিং-এর কাজে ব্যবহৃত বস্তাগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলা কোনভাবেই ঠিক নয়। তারপরে এখানে আবারে ২১৭ কোটি টাকার বড় একটি প্রকল্প হচ্ছে। বাঁধের আশপাশে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন চলতে থাকলে বাঁধও হুমকির সম্মুখীন হতে পারে। এই কর্মকর্তা বলেন, যারা এই কর্মকান্ড করছে তারা সবাইতো নেতা, আমরা কি বলতে পারি। তবে বিষয়টি আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
নয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামীম আহমেদ হান্নান নিউজ৩৯ কে বলেন, যারা বালু কেটে ব্যবসা করছে তাদের মধ্যে প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। অথচ সেই আওয়ামী লীগ সরকার দোহারকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষায় বাঁধের কাজ করছে আবার তারাই সেই বাঁধ প্রকল্পের ক্ষতি করছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এটা ঘৃনা করি। যারা এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের উচিত সরকারের ভাবমূর্তি ঠিক রেখে যার যার অবস্থান থেকে ব্যবসা বানিজ্য করা।
বালু উত্তলন ও বাধের উপর ময়লা আবর্জনা ফেলে বাধকে নষ্ট করার ব্যাপারে দোহার উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আলমগীর হোসেন নিউজ৩৯ জানান, বালু উত্তলন ও বাধের উপর ময়লা আবর্জনা ফেলে বাধের সুন্দর্য নষ্ট হওয়ার ব্যাপারে আমি শুনেছি। এই ব্যাপারে আমি উপজেলার মিটিংএ কথা বলেছি। আমি প্রশাসনকে অতি দ্রুত তদন্ত করে এই ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছি। যারা বালি উত্তলন করে তারা সরকারি নিয়ম মেনে যদি উওত্তলন করে তাহলে ঠিক আছে, যদি সেটা না হয়, তাহলে এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পদ্মা তীরবর্তী অঞ্চল থেকে বালু উত্তলনের ব্যাপারে নয়াবাড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দা, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সাখাওয়াত হোসেন নান্নু নিউজ৩৯ কে বলেন, যদি বাধের ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার কোন আশংকা থাকে তাহলে অবশ্যই এই বালি উত্তলন বন্ধ করতে হবে। প্রশাসনের এই ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত। কিন্তু যদি বালি উত্তলন নির্দিষ্ট সীমার বাইরে হয়, পানি চলাচলের পথ করে দেয় তাহলে অবশ্যই সেটা বাধের জন্য ভাল হবে, তীরবর্তী অঞ্চলে পানির চাপ কম পড়বে। তাছাড়া কিছু বেকার ছেলেরা কাজ করছে। আমাদের তো ওদের আরো উৎসাহিত করা উচিত।