ঢাকার দোহারের মৈনট ঘাট থেকে নবাবগঞ্জ হয়ে গুলিস্তান গোলাপ শাহ (রহ.) মাজার এলাকায় চলাচলরত যমুনা ডিলাক্স পরিবহন প্রাইভেট লি. নামের বাস সার্ভিস সেক্টরে বেপরোয়া নৈরাজ্য চলছে। যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও সড়কের বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করছে একটি সিন্ডিকেট। তারা মালিক সমিতির নামে প্রতিদিন গাড়িপ্রতি প্রায় ১৭শ’ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে সাধারণ মালিকরা ক্ষুব্ধ ও হতাশা প্রকাশ করেছে। তারা এসব কথিত সমিতি ও শ্রমিক নেতার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। পথে পথে চাঁদাবাজি থেকে রেহাই পেতে সম্প্রতি যমুনা বাসের বেশ কিছু মালিক নবাবগঞ্জে সাংবাদিকদের সঙ্গে দেখা করে এ অভিযোগ করেন।
যমুনা বাস মালিকদের অভিযোগ, দোহার নবাবগঞ্জ তথা ঢাকার দক্ষিণ অঞ্চলের সড়কপথে যমুনা ডিলাক্স পরিবহনের স্বঘোষিত সিন্ডিকেট প্রধান চন্দন বাবু শ্রমিক মালিক সমিতির নামে চাঁদাবাজি করছেন। বাসপ্রতি ১৩শ’ টাকা দৈনিক জমা না দিলে রাস্তায় বাস চালাতে দেয়া হয় না। কেরানীগঞ্জের একজন বাস মালিক বলেন, আমরা লাখ লাখ টাকা দিয়ে গাড়ি কিনে দিনে ১ হাজার টাকা থাকে না। অথচ চন্দনকে দিতে হয় ১৩শ’ টাকা। এছাড়া ৪শ’ টাকা নানা খাতে ব্যয় হচ্ছে।
দোহারের এক বাসচালক বলেন, চন্দন কিছুদিন আগেও বাসের হেলপার ও ড্রাইভার ছিল। বর্তমানে কয়েক কোটি টাকার মালিক বনে গেছে সে। তার নিজের ২টি বাস আছে এই সড়কে। অতিরিক্ত টাকা চাঁদা দিতে হয় বলে দোহার ও নবাবগঞ্জের যমুনা পরিবহনের কিছু মালিক গাড়ি বিক্রি করে এখন অন্য ব্যবসা করছে। কেউ আবার প্রবাসে চলে গেছে।
নবাবগঞ্জের বাহ্রা গ্রামের এক বাসচালক বলেন, আমাদের মতো সাধারণ শ্রমিকরা সারা দিন কষ্ট করে গাড়ি চালিয়ে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পাই, যা দিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে কোনোভাবে বেঁচে আছি। আমরা টাকা না পেলেও তাদের নির্ধারিত চাঁদা দিতে হবে। চন্দন মণ্ডলের সঙ্গে এসব চাঁদাবাজিতে জড়িত রয়েছে ঢাকার কবির হোসেন ও দোহারের মোশারফ হোসেন। ঢাকা সড়কের দোহাই দিয়ে তারা প্রতিদিন এ চাঁদা আদায় করছে। চাঁদার একটি সিংহভাগই সড়ক পরিবহনের নেতা খন্দকার এনায়েত উল্লাহকে দিতে হয় বলে চন্দন ও কবির মালিকদের বলে থাকেন। তা না হলে তাদের বাস রাস্তায় চলতে পারবে না বলে হুমকি-ধমকি দেয়া হয়।
খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, আমরা কোনো সার্ভিস থেকে এক টাকাও নিই না। আমার জানা মতে, শ্রমিক সমিতির নির্ধারিত ৭০ টাকার বাইরে কোনো টাকা নেয়া হয় না। তবে কেউ যদি সড়কের নাম ভাঙিয়ে বাস মালিকদের কাছ থেকে কোনো টাকা আদায় করে, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোনো চাঁদাবাজি সহ্য করা হবে না।
নবাবগঞ্জের যন্ত্রাইল গ্রামের বাসিন্দা মাছুদ বলেন, জমি সংক্রান্ত মামলায় প্রতি মাসে ৩-৪ বার ঢাকায় যেতে হয়। ৬০-৬৫ টাকা ভাড়া নেয় যমুনা বাস কর্তৃপক্ষ। রাস্তায় টিকরপুর, মৈনট ঘাট, ও গুলিস্তানে চাঁদা আদায়কারীদের কারণে সময় মতো আদালতে পৌঁছাতে পারি না। কথিত পরিবহন মাস্তানদের কারণে যাত্রীদের অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে। বিশেষ করে যমুনা পরিবহনে এ অবস্থা চলছে বহুদিন ধরে, যা দেখার কেউ নেই। স্থানীয় বাস মালিক ও শ্রমিকদের দাবি, চন্দনের নেতৃত্বে একটি প্রভাবশালী চক্র নবাবগঞ্জ দোহারের পরিবহন সেক্টরে চরম বিশৃঙ্খলা বাধিয়ে রেখেছে, যার দ্রুত অবসান প্রয়োজন। এ সার্ভিসের আওতায় প্রতিমাসে ১৫-২০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় হয় বলে জানা গেছে।
অভিযুক্ত চন্দন বাবুকে ১৩শ’ টাকা চাঁদা আদায় সম্পর্কে মুঠোফোনে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, মৈনট ঘাটে বালু ফেলে বাসস্ট্যান্ড তৈরি করতে ১১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে আমার। ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীকে প্রতিদিন টাকা দিতে হয়। এছাড়া ঢাকার গুলিস্তানে শ্রমিক ইউনিয়ন, মালিক সমিতির নেতারা বাসপ্রতি দৈনিক ৪শ’ টাকা করে নেয়। সুপারভাইজার আছে, তাদের বেতন দিতে হয়।
ঢাকার দোহার সার্কেলের সিনিয়র এএসপি মাহবুবুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করা হলে দোহার থানার ওসিকে বিষয়টি দেখার জন্য আমি বলব।