সদ্য সরকারিকৃত সারাদেশের ২৯৯ কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বিত পদ সৃজন ও এডহক নিয়োগদানের দীর্ঘসূত্রতা দূর হতে যাচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত পদ সৃজনের (এডহক নিয়োগ) প্রস্তাব গত ৭ ফেব্রুয়ারি অনুমোদন দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবে প্রতিটি কলেজের ১৫ দফা তথ্য যাচাই-বাছাই করে পদ সৃজনের প্রস্তাব পাঠাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট কলেজ থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কলেজ শাখার কর্মকর্তারা সভা করে তিনটি ছক চূড়ান্ত করেছে। এখন শিক্ষামন্ত্রীর অনুমোদন মিললেই তথ্য পাঠাতে নির্দেশনা জারি করবে মন্ত্রণালয়।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কলেজ) ড. মোল্লা জালাল জানান, আত্তীকরণ করতে আগে এক একটি প্রতিষ্ঠানের তথ্য মাউশি ও মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হতো। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যাচাই শেষে আত্তীকরণ করতে দীর্ঘ সময় লাগে। ২৯৯ কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের পদ সৃজন করতে কয়েক বছর লেগে যাবে। দ্রুত পদ সৃজন করতে ঢাকার চারটি কলেজের প্রস্তাব একই ফরম্যাটে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। তারা আমাদের ফরম্যাট অনুমোদন দিয়েছেন। নতুন ফরম্যাটে পদ সৃজনের প্রস্তাব পাঠালেই অনুমোদন দিয়ে দেবে।
নতুন ফরম্যাটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিক্ষক নিয়োগ যথাযথ প্রক্রিয়ায় হয়েছে কি না, প্রাপ্যতা সঠিক আছে কি না- এসব যাচাই করে কলেজের সভাপতির দায়িত্বে থাকা ডিসি বা ইউএনও মাউশিতে পাঠাবেন। মাউশি সার্টিফাইড (সত্যায়ন) করে মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। মন্ত্রণালয় কয়েক ধাপে যাচাই করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পাঠানো হবে। তারা প্রয়োজনীয় যাচাই করে আত্তীকরণের অনুমোদন দিবে। এতে করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে কাজের চাপ কমবে এবং দ্রুত পদ সৃজন হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গত বছর সারাদেশে ২৯৯টি বেসরকারি কলেজ সরকারি করা হয়েছে। এসব কলেজে সমন্বিত পদ সৃজন করতে গত বছরের ২৩ অক্টোবর ঢাকা জেলার চারটি কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের আত্তীকরণের প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত ৭ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি নিয়ে সভা করে। সভায় কলেজগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারীদের আত্তীকরণ কার্যক্রম স্বচ্ছ, ত্রুটিমুক্ত এবং দ্রুত শেষ করতে সংশ্লিষ্ট কলেজের ১৫ দফা তথ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব, যুগ্মসচিব বা অতিরিক্ত সচিবের প্রত্যায়নসহ পাঠাতে মত দিয়েছেন।
তথ্যগুলো হলো- ১. আত্তীকরণের প্রস্তাবিত পদটি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্যাটার্নভুক্ত কি না? প্যাটার্নভুক্তির সমর্থনে মন্ত্রণালয়ের প্রত্যয়ন ও পরিপত্র। ২. প্রস্তাবিত জনবলকে প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ নিষেধাজ্ঞা জারির আগে নিয়োগ দেয়া হয়েছে কি না? ৩. বিধিমোতাবেক সরকারি প্রতিনিধির উপস্থিতিতে সকলের নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে কি না? নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে কি না? প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল কি না অর্থাৎ নিয়োগ প্রক্রিয়াটি যথাযথ কি না- এ বিষয়ে প্রাশসনিক মন্ত্রণালয়ের সুস্পষ্ট প্রত্যয়ন।
শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া যথাযথ ছিল কি না তা যাচাই। ৪. সকল পরীক্ষার সদন ( প্রযোজ্য ক্ষেত্রে এনটিআরসিএ নিবন্ধন সনদ)। ৫. নিয়োগের সিদ্ধান্ত সন্বলিত রেজুলেশন, ৬. নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, ৭. নিয়োগ কমিটি গঠনের রেজুলেশন, ৮. ডিজির প্রতিনিধি মনোনয়নের কপি, ৯. নিয়োগ পরীক্ষার টেবুলেশন শিট, ১০. নিয়োগ অনুমোদন সংক্রান্ত রেজুলেশন, ১১. নিয়োগপত্র, ১২. যোগদানপত্র, ১৩. এমপিও শিট, ১৪. প্রদর্শক ও কর্মচারীদের ক্ষেত্রে সনদ এবং নম্বরপত্র, ১৫. অধিভুক্তির সমর্থনে পত্র/পাঠদানের অনুমতিপত্র।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের বেসরকারি কলেজ শাখার কর্মকর্তারা সভা করেছেন। কলেজ থেকে তথ্যগুলো সংগ্রহ করতে ‘ক’, ‘খ’ ও ‘গ’ এ তিনটি ছক তৈরি করেছে। কলেজগুলো সরকারি হওয়ার পর থেকে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা সদরের ক্ষেত্রে ডিসি ও উপজেলার ক্ষেত্রে ইউএনও এবং সংশ্লিষ্ট কলেজের অধ্যক্ষের যৌথ স্বাক্ষরে কলেজগুলো সকল কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তাদের যৌথ স্বাক্ষরে তথ্য পাঠানো হলে সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়।
এছাড়া প্রতি মাসের ১৫ তারিখ এবং ৩০ তারিখের মধ্যে অন্তত ১৮টি কলেজের পদ সৃজনের প্রস্তাব মন্ত্রণালয় পাঠাতে মাউশিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত করা ‘ক’ ছকে শিক্ষক-কর্মচারীদের পদভিত্তিক জনবল কাঠামো ২০১০ ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাটার্ন মোতাবেক প্রাপ্যতা। কর্মরত পদের সংখ্যা (এমপিও এবং নন-এমপিও)। প্রস্তাবিত পদের সংখ্যা। ‘খ’ ছকে মাউশি কর্তৃক প্রেরিত পদ সৃজন প্রস্তাবের তালিকায় শিক্ষক-কর্মচারীদের নাম, পদবী, বিষয়, জন্ম তারিখ ও ইনডেক্স নম্বর। প্রাপ্ত বেতন গ্রেড ও মূল বেতন। পাঠদানের স্তর এবং অধিভুক্তির স্মারক ও তারিখ। শিক্ষাগত যোগ্যতার বিবরণ। নিয়োগ নিষেধাজ্ঞার তারিখ। প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের তারিখ। বর্তমান প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের তারিখ। এমপিওভুক্তির তারিখ।
সংশ্লিষ্ট পদে নিয়োগ প্রক্রিয়াটি যথাযথ ছিল কি না? পরিদর্শনের সময়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও কর্মচারীদের কাম্য শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল কি না? পদটি উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্যাটার্নভুক্ত কি না? শিক্ষক-কর্মচারীরা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নেই মর্মে প্রতিবেদন দিতে হবে। ‘গ’ ছকে শিক্ষক-কর্মচারীদের নাম ও বর্তমান কর্মস্থল, পদবি ও বিষয় উল্লেখ করতে হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগে সরকারিকরণ করা কলেজের পদ সৃষ্টির প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা আলাদাভাবে জনপ্রশাসন, অর্থ বিভাগের ব্যয় ব্যবস্থাপনা, বাস্তবায়ন এবং প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় পাঠানো হতো। চারটি দফতরে একটি কলেজের পদ সৃজনের প্রক্রিয়া শেষ করতে প্রায় সাত থেকে আট মাস সময় লাগতো। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশির কর্মকর্তাদের মতে, সম্প্রতি সরকারিকৃত ২৯৯ কলেজের পদ সৃজন করতে আাগের প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হলে চার থেকে পাঁচ বছর সময় লাগবে। এই প্রক্রিয়ায় অসংখ্য শিক্ষক-কর্মচারী সরকারি হওয়ার সুবিধাবঞ্চিত হয়ে অবসরে চলে যাবেন। যে কারণে দ্রত পদ সৃজন করতে নতুন করে এ উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জনপ্রশাসন হতে পদ সৃষ্টির অনুমোদনের পর অর্থ বিভাগের ব্যয় ব্যবস্থাপনা, বাস্তবায়ন অনুবিভাগ এবং প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। পরে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় (শিক্ষা মন্ত্রণালয়) নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষক-কর্মচারীদের যোগ্যতা সাপেক্ষে নিয়োগ দেবে। এক্ষেত্রে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সৃষ্ট পদের সঙ্গে জাতীয়করণ করা কলেজে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের কোনো সংশ্লিষ্টতা থাকবে না। পদগুলো প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে সৃষ্টি হবে।
এ প্রক্রিয়ায় পদ সৃজনের প্রস্তাব একবারই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ এবং প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় পাঠানো হবে। ফলে কম সময়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি আত্তীকরণ প্রক্রিয়া শেষ হবে।