২৫ সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তন; আলাদা হয় নি দোহার-নবাবগঞ্জ

592

দোহার নবাবগঞ্জ এর সাধারন মানুষের অন্যতম প্রাণের দাবি ঢাকা-১ সংসদীয় আসন পূর্নবিন্যাসের আবেদন নাকচ করে দিয়েছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। এই অনলের রাজনীতিবিদের ও সাধারন মানুষের দাবিকে কোন আমলে না নিয়ে এই সংসদীয় আসনকে এক রাখার কথাই বলেছে নির্বাচন কমিশন। তবে পরিবর্তন করেছে ২৫টি সংসদীয় আসনের সীমানা।

আগামী অক্টোবরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৫ আসনের সীমানায় পরিবর্তন এনেছে ইসি। গতকাল সোমবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে সোমবার কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, আগামী অক্টোবরে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। তবে অক্টোবরের কত তারিখে তফসিল ঘোষণা করা হবে এবং কবে ভোটগ্রহণ করা হবে- সেটা কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। রফিকুল ইসলাম জানান, ৩০০ আসনের সীমানা গেজেট আকারে প্রকাশের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে।

২৭৫টি আসনের ক্ষেত্রে দশম সংসদের সীমানাই বহাল থাকছে। বাকি ২৫টি আসনে পরিবর্তিত সীমানায় ভোট হবে। ইসি সূত্রে জানা গেছে, পরিবর্তিত ২৫ আসন হচ্ছে- নীলফামারী-৩, ৪; রংপুর-১ ও ৩; কুড়িগ্রাম ৩ ও ৪; সিরাজগঞ্জ ১ ও ২; খুলনা ৩ ও ৪; জামালপুর ৪ ও ৫; নারায়ণগঞ্জ ৪ ও ৫; সিলেট ২ ও ৩; মৌলভীবাজার ২ ও ৪; ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৫ ও ৬; কুমিল্লা ৬, ৯ ও ১০; এবং নোয়াখালী ৪ ও ৫।

সংশোধিত আসন সীমানার চূড়ান্ত গেজেট সোমবারই প্রকাশের কথা জানিয়েছেন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। গত ২১শে এপ্রিল থেকে ২৫শে এপ্রিল পর্যন্ত সংসদীয় আসনের শুনানি চলে। এবার ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ৪০টি আসনে পরিবর্তন এনে খসড়া প্রকাশ করে ইসি। বাকি ২৬০টি আসনে দশম সংসদের সীমানা বহাল রাখা হয়। কিন্তু আপত্তি আবেদন আসে ৬০টি আসন থেকে। ইসি সূত্র জানায়, ৬০টি আসনের সীমানা পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের আপত্তি চেয়ে ৪০৭টি আবেদন পড়ে। বাকি ২২৪টি আবেদন ইসি’র প্রস্তাবিত সীমানার পক্ষে সমর্থন জানিয়ে আসে। সীমানা পরিবর্তন চেয়ে আবেদনের মধ্যে রংপুরে ৬২টি, রাজশাহীতে ৪৫টি, খুলনায় ৪৩টি, বরিশালে ৮টি, ঢাকায় ৮২টি, সিলেটে ১৩২টি ও চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে ৩২টি আবেদন আসে। তবে ময়মনসিংহে কোনো আপত্তি আবেদন আসেনি। গত ২১ থেকে ২৫শে এপ্রিল এসব আপত্তির ওপর শুনানি শেষে ৬০টি আসনের মধ্যে ৩৫টির আপিল মঞ্জুর করে ইসি। ফলে সেসব আসনে দশম সংসদের সীমানাই বহাল থাকছে। বাকি ২৫টির আবেদন নামঞ্জুর হওয়ায় সেখানে পরিবর্তন আসছে। ইসির সঙ্গে সংলাপে বিএনপি নতুন আইন করে ২০০১ সালে সংসদীয় আসনের যে সীমানা ছিল, সেটি ফিরিয়ে আনতে দাবি জানিয়েছিল। কারণ, ২০০৮ সালে অধিকাংশ আসন পরিবর্তন করে ইসি। বিএনপির অভিযোগ, ২০০৮ সালে তাদের আসনগুলোকে ভেঙে দলকে বিপদে ফেলা হয়েছে। কারণ যে এলাকায় বিএনপির দুটি আসনে ভালো সমর্থক ছিল, সেখানে একটি করা হয়েছে। ফলে দলীয় একটি আসন কমে গেছে। অন্যদিকে ইসির সঙ্গে সংলাপে আওয়ামী লীগ চেয়েছে, বর্তমান আইন দিয়ে আগামী সংসদ নির্বাচন। অর্থাৎ ছিটমহলগুলোকে যুক্ত করে ২০১৩ সালের সীমানা দিয়ে নির্বাচন করতে।

অন্য খবর  দোহারে ইয়াবা জব্দ করলেন ইউপি সদস্য

ইসি’র তথ্য মতে, এর আগে ২০০১ সালেও ১৯৯৫ সালের সীমানার গেজেট বহাল রাখা হয়েছিল। ১৯৮৪ ও ১৯৯১ সালের পর ২০০৮ সালে সংসদীয় আসনে ব্যাপক পরিবর্তন করা হয়। এক এগারো পরবর্তী ড. শামসুল হুদার কমিশন সারা দেশের পার্বত্য তিন জেলা বাদে ২৯৭ আসনেই পরিবর্তন নিয়ে আসে। এর মধ্যে ১৩৩টিতে পরিবর্তন আনা হয় বড় পরিসরে। এ ব্যাপক সীমানায় ভাঙচুর ও তছনছ করার মাধ্যমে ঢাকায় আসন বেড়ে হয় ১৮টি। আর কয়েকটি জেলায় কমে যায় আসন সংখ্যা। সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, বরগুনা, বরিশাল ও ফরিদপুরে একটি করে আসন কমে। ২০০৮ সালের সীমানা বহাল রেখে ২০১৩ সালে অল্প কিছু আসনে পরিবর্তন এনে দশম সংসদ নির্বাচন দেয় ইসি।

এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কেনাকাটা শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। গত এপ্রিল থেকে কেনাকাটা শুরু করেছে ইসি। জুনের মধ্যে সংসদ নির্বাচনের ব্যালট পেপারের কাগজসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনাকাটা শেষ করবে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। নির্বাচনী মালামালের মধ্যে ব্যালট পেপারের কাগজ, স্ট্যাম্প প্যাড, অফিশিয়াল সিল, মার্কিং সিল, ব্রাস সিল, লাল গালা, আম কাঠের প্যাকিং বাক্স, অমোচনীয় কালি, বিভিন্ন ফরম, প্যাকেট, সুই-সুতা, খাম, মোমবাতি রয়েছে। ইসি’র কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচনের প্রধান উপকরণ ব্যালট পেপার। এ জন্য বিভিন্ন ধরনের কাগজের প্রয়োজন হয়, তা ভোটের কয়েক মাস আগে সংগ্রহ না করলে সংকটও দেখা দিতে পারে। তাই জুনের মধ্যে কেনাকাটা শেষ করবে ইসি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে ৩০শে অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের জানুয়ারির মধ্যে। এ নির্বাচনের জন্য প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার রিম কাগজ প্রয়োজন হবে। যা জুন মাসের মধ্যে সংগ্রহ করতে চায় ইসি। একাদশ সংসদ নির্বাচনের ব্যালট পেপারের জন্য প্রায় ৩৫ কোটি টাকা লাগছে বলেও জানিয়েছে ইসি। নির্বাচন কমিশন প্রকাশিত ‘নির্বাচনী সংলাপ ২০১৭’ বইটির শুরুতেই বলা হয়েছে, দশম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয় ২৯শে জানুয়ারি। সে অনুযায়ী ২০১৯ সালের ২৮শে জানুয়ারির মধ্যে একাদশ জাতীয় নির্বাচন করার সংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

আপনার মতামত দিন