এক সময় যাদের গোয়াল ভরা গরু, শস্যে ভরা ক্ষেত আর পুকুর ভরা মাছ ছিলো। তারাই এখন নদী ভাঙ্গনে স্বর্বশান্ত হয়ে ঠাঁই নিয়েছেন রাজধানী ঢাকা শহর অথবা শহরের বস্তিতে। নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে প্রতি বছর এ অঞ্চলের হাজার হাজার পরিবার গৃহহীন হচ্ছে, প্রাণহানী ও নিখোঁজের ঘটনাও রয়েছে অসংখ্য। ভূমিহীন এসব পরিবারগুলো বেড়িবাঁধের ওপর আশ্রয় নেয়া ছাড়াও জীবন-জীবিকার সন্ধানে পাড়ি জমিয়েছে ঢাকা কিংবা উপজেলা সদরে বা গ্রামে। তাদের কাছে নদীকূলে বসবাস করা মানেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে জীবনযুদ্ধে সামিল হওয়া। নদী ভাঙ্গনে মানুষ কত অসহায় তা ছবিতে এক সময়ের স্বচ্ছল ঐ মহিলার রান্না করার দৃশ্যই বলে দিচ্ছে।
আর এভাবেই প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে একরের পর এক বসত ভিটা – জমি। আর শুকনো মৌসুমে বাড়ছে ভাঙ্গনের তীব্রতা। আর এতে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে দোহার ।
বর্তমানে ভাঙ্গন এতোটাই প্রকট যে, ভেঙ্গে যেতে পারে বাহ্রা বাস স্ট্যান্ড। এতে প্লাবিত হবে কয়েক হাজার পরিবার। সম্পূর্ণ হমকীর মুখে পড়বে বাহ্রা, কার্তিকপুর, কুসুমহাটি ইউনিয়ন সহ রায়পাড়া ইউনিয়ন।
এছাড়া নদীর ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারন করেছে জয়পাড়া বিলাশপুর ইউনিয়নে। দিন যায় দিন আসে কিন্তু দোহার উপজেলার নদী ভাঙ্গন রোধে কিছু হয় না। নেতা যায়, নেতা আসে; শুধু উদ্বাস্তু হয়, নিঃস্ব হয়, স্বচ্ছল মানুষ। ২/১ দিন পত্রিকার খবরে নেতাদের টনক নড়ে, তখন তারা লোক দেখানো কিছু সাহায্য নিয়ে দূর্গত এলাকায় যান ফটোসেশনে।
এবার নয়াবাড়ী ইউনিয়নের পদ্মাতীরের মানুষের ভাগ্য বিপর্যস্ত। শুরু থেকেই নদী ভাংছে ভয়ংকর ভাবে। কাছে থেকে না দেখলে কোনভাবেই তা বোঝানো যাবে না। কখন ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয় সেই আতঙ্কে রয়েছেন ইউনিয়নের পাঁচ এলাকার মানুষ।
দোহার-নবাবগঞ্জ রক্ষায় দোহার-মানিকগঞ্জ (কাশিয়াখালী বাঁধ) বেড়িবাঁধে গত দুই বছরে কিছু অংশে ভাঙন দেখা দিলেও তা সংস্কার না করায় এবার দোহার-নবাবগঞ্জের লক্ষাধিক মানুষ হুমকিতে।
সোমবার দেখা যায়, গত কয়েক দিনের বৈরী আবহাওয়ায় পদ্মায় পানি বাড়ায় বাহ্রাঘাট, নয়াডাঙ্গী, অরঙ্গাবাদ, দেওয়ানবাড়ী মোড়, পানকুন্ড ও ধোয়াইর এলাকার মানুষ ভাঙনের ভয়ে রাস্তায় আছেন। এলাকাটি ঘুরে দেখা গেছে, ধোয়াইরে ২৫০মিটার, দেওয়ানবাড়ী মোড়ে ১০০ থেকে ১৫০ ও নয়াডাঙ্গীতে ২০০ মিটারের মতো এলাকায় ভাঙন।
পদ্মার ভাঙনের শিকার নয়াডাঙ্গী গ্রামের তানিয়া আক্তার নিউজ৩৯-কে বলেন, ‘আমরা কয়টা বছর ধইরা গাঙ্গের ভাঙনের ভয় লইয়া আছি। কেউ কিছু করে না। আমাগো খোলা আকাশের তলে তাকুন ছাড়া আর কিছু নাই।’
ধোয়াইর গ্রামের আ. হালিম (৫৫) বলেন, ‘সরকার তো কম প্রতিশ্রুতি দেয় নাই। কিন্তু আমরা কী পাইলাম?’ গতকাল স্রোত বাড়ায় ইউনিয়নের সাংসদ সালমা ইসলাম বলেন, পদ্মার ভাঙন প্রতিরোধে দোহারবাসীকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অবশ্যই বাস্তবায়ন করা হবে। কাগজপত্রের সবকিছুর প্রক্রিয়া সম্পন্ন। নতুন অর্থবছরের টাকা ছাড় পেলেই কাজ শুরু হবে।