জয়পাড়াকে ঘিরে প্রাধান সড়কগুলোর ফুটপাতের অধিকাংশই চলে গেছে হকারদের দখলে। সড়কগুলোর পাশে জনসাধারণের চলাচলের জন্য যে ফুটপাত রাখা হয়েছে তার অর্ধেকেরও বেশি চলে গেছে তাদের দখলে। দেখে বোঝার উপায় নেই, এটি ফুটপাত নাকি ব্যবসাকেন্দ্র। হাঁটার জায়গাজুড়ে পণ্যসামগ্রীর পসরা আর হকারদের ব্যস্ততা। পথচারীরা ফুটপাতে জায়গা না পেয়ে রাস্তায় হাঁটবেন, সেখানেও একই অবস্থা। রাস্তা দখল করে চলছে গাড়ি পার্কিং আর হকারদের ব্যবসা।
প্রায় একই চিত্র দোহারের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে খ্যাত জয়পাড়াকে ঘিরে প্রধান সড়কগুলোর। একই অবস্থা দোহারের লটাখোলা করম আলীর মোর থেকে শুরু করে লটাখোলা নতুন বাজার জয়পাড়া ব্রিজ হয়ে থানার মোর পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানের ফুটপাতের। হকাররা রাস্তার পাশে ফুটপাতের উপরই বসে আছে ছোট ছোট দোকান এবং ব্যবসাসামগ্রী নিয়ে। আবার কোন কোন দোকান মালিকেরা দোকানের সামনে বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী রেখে নিজেরাই দখল করেছেন ফুটপাত।
মতিঝিলের পর দ্বিতীয় ব্যাংকপাড়া হিসেবে খ্যাত জয়পাড়া । ছোট বড় প্রায় ৩০ টি ব্যাংকের শাখা রয়েছে এখানে। শুধু ব্যাংকগুলোর কারনেই নয়, শপিংমল, ক্লিনিক,থানা,উপজেলা পরিষদসহ প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে দোহারের এই অংশটুকুতে। তাই প্রতিদিনই নানা প্রয়োজনীয় কাজে দোহারের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসেন জয়পাড়তে। সপ্তাহের সাত দিনের মধ্যে সাত দিনই ব্যস্ত থাকে জয়পাড়া। এর মাঝে সপ্তাহের দুটি হাঁট বার সোমবার এবং বৃহস্পতিবার ব্যস্ততা বাড়ে বহুগুণে। হকারদের ঠেলে গন্তব্যে পৌঁছাতে প্রতিদিনই হয়রানি পোহাচ্ছেন নানা কাজে বিভিন্ন স্থান থেকে জয়পাড়াতে আসা পথচারীরা। একদিকে ফুটপাত দখল, অন্যদিকে রাস্তায়ও ঠিকভাবে হাঁটার অবস্থা নেই। ফুটপাত থেকে নামতেই রাস্তার পাশ জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ভ্যান আর মোটরসাইকেল। হাটার সময় তখন পথচারী এবং স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের পড়তে হচ্ছে নানা দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনায়।
জয়পাড়া কলেজের রাস্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মো.শিহাব শিকদার বলেন, হকারদের কারণে ফুটপাত ছেড়ে রাস্তায় হাঁটতে হয় আমাদের। ফলে যানবাহনে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে । যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটে এই শঙ্কায় থাকতে হয়।’
নতুন পোশাক, জুতা, চশমা ও অন্যান্য প্রসাধনী সামগ্রীর দোকানের কারণে জয়াপাড়া এবি ব্যাংকের সামনের ফুটপাতের পুরোটাই প্রায় সাড়া বছর দখলে থাকে হকারদের। ফুটপাতের চলাচলের জায়গা কোথাও কোথাও আবার চায়ের দোকানিদের দখলে।
পথচারিরা জানান, ফুটপাতের রাস্তা পথচারিদের চলাফেরার জন্য। আর সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ দোকানপাট। ফুটপাতে দোকান বসার কারণে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে করা মুল মার্কেটের ভেতরে ঢুকছেন না ক্রেতারা। এতে লক্ষ লক্ষ টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন বাজারের অনেক ব্যবসায়ীরা। রাস্তার ফুটপাত ও রাস্তার অর্ধেক দখল করে দোকান বসানো হয়েছে। দ্রুত এসব হকারদের উচ্ছেদ চান তারা।
সম্প্রতি কিছু দিন আগে সালমান এফ রহমানের গণ সংবর্ধনার জন্য দোহার পৌরসভা থেকে মাইকিং করে ২ দিনের জন্য জয়পাড়ার ফুটপাতে বসতে দেওয়া হয়নি হকারদের। তার পর দিন থেকেই আবার যথাস্থানে বসেছে হকার দোকানীরা। ফলে একদিকে যেমন মানুষের চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে অপরদিকে বাড়ছে যানজট, বাড়ছে নগরবাসীর দুর্ভোগ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যে হকার উচ্ছেদের জন্য অভিযান চললেও দিন কয়েক পরে তা আবার আগের রূপে ফিরে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হকার বলেন, প্রায় প্রতিটি হকারদেরকেই বসান রাস্থার পাড়ে অবস্থিত দোকান মালিকেরা। বিনিময়ে তারা নেন কিছু টাকা। এ টাকার হিসেবটা আবার একটু আলাদা। কোন কোন দোকান মালিক হকারদের থেকে টাকা নেন দৈনিক হিসেবে, আবার কেউবা নেন মাসিক হিসেবে।
সরেজমিনে জয়পাড়ার বিভিন্ন প্রধান সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, জয়পাড়া কাজী সুপার মার্কেটের সামনের ফুটপাতে ভ্যানে এবং কিছু দোকানের স্যামনে মালামাল নিয়ে বসেছেন ভাসমান ব্যবসায়ীরা। একটু সামনে ব্রিজে উঠলেই চোখে পড়বে ইদুর,চিকা মারার বিভিন্ন ঔষূধ ব্রিক্রি করছেন কয়েকজন হকার। ব্রিজ পার হলেই চোখে পড়বে বিভিন্ন ফলের পসরা সাজিয়ে রাস্তার উপর ফুটপাত দখল করে বসেছেন কয়েকজন হকার। আরেকটু সামনে এগিয়ে বেগম আয়েশা পাইলটের সামনেই দেখা যাবে বসে আছে বেশ কয়েকটি দোকান। শুধু এখানেই নয়,জয়পাড়া রতন স্বাধীনতা চত্তরের পাশেই শশান ঘাটে যাবার সময় রাস্তার দুধারে বসেছে ২০ থেকে ২০ টি ভ্রাম্যমাণ দোকান। একটির ও নেই দোহার পৌরসভা কতৃক কোন অনুমোদন। এসবের মধ্যেই লোকজন চলাচল করছে খুব কষ্ট করে। একদম গা ঘেঁষাঘেঁষি করে। ভীরের মধ্যে ঠেলাঠেলি করে চলতে গিয়ে অনেকেই স্বীকার হচ্ছেন পকেট মারের। হারাচ্ছেন টাকা পয়সাসহ মূল্যবান অনেক কাগজপত্র।
জয়পাড়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এস এম কুদ্দুস নিউজ থার্টিনাইঙ্কে বলেন, এর আগেও বেশ কয়েকবার হকারদের উচ্ছেদ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা আবারো বসেছে।
জয়পাড়া পূর্ব বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি করিম ব্যাপারী বলেন, হকারদের বিষয়ে পরবর্তী সভায় আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে দোহার পৌরসভার মেয়র আব্দুর রহীম মিয়া নিউজ থার্টিনাইনকে বলেন, “যারা পথচারী তাদের কোন ম্যাথা ব্যাথা নেই এ বিষয়ে। সাংবাদিকদের এত ম্যাথ্যা ব্যাথ্যা কেন ? বেশ কয়েকবার হকারদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। প্রয়োজনে আবারো তাদেরকে উচ্ছেদ করা হবে”।