নবাবগঞ্জের দোহারে স্ত্রী জাহানারা বেগমের কবরের পাশেই চিরশায়িত করা হয়েছে স্বাধীনতা, দেশ ও লোকগানের অন্যতম পুরধা, একাধারে গীতিকার, সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী কুটি মনসুরকে।
গতকাল বুধবার সকাল ৭টার দিকে রামপুরায় প্রথম জানাজা নামাজ আদায় শেষে নেওয়া হয় দোহারে। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা নামাজ আদায় শেষে দাফন পর্ব শেষ করা হয়। দোহারে কুটি মনসুরের শ্বশুরবাড়ি। যেখানে কুটি মনসুরকে দাফন করা হয়েছে, সেটা তার শ্বশুরবাড়ির পারিবারিক কবরস্থান। রামপুরায় পরিবারসহ তিনি দীর্ঘদিন ধরে বাস করে আসছিলেন। কুটি মনসুরের ছোট সন্তান মো. মুজাহিদুল ইসলাম জাহিদ বুধবার বিকালে এ প্রতিবেদককে বলেন, বাংলাদেশ টেলিভিশন চেয়েছিল আরও একটি জানাজা আয়োজন করতে। কিন্তু দাফনের তাগিদ থাকা ও দূরবর্তীস্থানে দাফনের প্রস্তুতি থাকায় সেটা সম্ভব হয়নি। বুধবার সকালে রামপুরায় জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ায় সঙ্গীত জগতের বিশিষ্ট তেমন কেউ আসতে পারেননি। যদিও মঙ্গলবার রাতে দেখতে এসেছিলেন কয়েকজন বলে জানান জাহিদ।
নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) সাপোর্ট প্রয়োজন হলেও শয্যা খালি না পেয়ে ওয়ার্ডেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে হয়েছে কুটি মনসুরকে। এমনদিন তার মৃত্যু ঘটল যেদিন তিনিসহ আরও ১২জন গীতিকার, সুরকার ও কণ্ঠশিল্পীকে সংবর্ধনা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগ।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ৯০ বছর বয়স্ক এই ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে বলে নিশ্চিত করেছেন মো. মুজাহিদুল ইসলাম।
গত ২২ ডিসেম্বর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে (ব্রেইনস্ট্রোক) আক্রান্ত হন কুটি মনসুর। ২৩ তারিখ তাকে ভর্তি করা হয় ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে। কিন্তু অবস্থার উন্নতি না ঘটায় ২৯ জানুয়ারি তাকে স্থানান্তর করা হয় ঢামেক হাসপাতালে।
জাহিদ জানান, সোমবার রাতে কুটি মনসুরের অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। এ সময় আইসিইউ সাপোর্ট পাওয়া জরুরি হয়ে পড়ে। কিন্তু শয্যা খালি না থাকায় তা পাওয়া সম্ভব হয়নি। কুটি মনসুরের মূল নাম মো. মনসুর আলী খান হলেও তিনভাই দুই বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট হওয়ায় আদর করে মায়ের ডাকা নাম কুটি মনসুর নামেই তিনি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন।
২৯ ডিসেম্বর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সংজ্ঞাহীন ছিলেন ১৯২৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর ফরিদপুর জেলার লোহারটেক গ্রামে জন্ম নেয়া কুটি মনসুর। কুটি মনসুরের পিতার নাম আবেদ আলী খান ও মাতার নাম আবেদুন্নেসা। ২০০২ সালে তার স্ত্রী জাহানারা বেগমের মৃত্যু ঘটে।