চলতি (সেপ্টেম্বর) মাসেই চালু হচ্ছে পুলিশের মালিকানাধীন কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। গুলশানের পুলিশ প্লাজায় প্রধান কার্যালয়ের পাশাপাশি প্রিন্সিপাল শাখাসহ ছয়টি শাখায় ব্যাংকটির কার্যক্রম চালু হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যাংকটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। ওই দিনই ব্যাংকের গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট খোলা শুরু হবে।
এ প্রসঙ্গে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিহুল হক চৌধুরী সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) বলেন, ‘আশা করি, এ মাসেই কমিউনিটি ব্যাংকের ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু হবে। আমরা ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যাংকিং কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছেপোষণ করলে তার নামে প্রথম অ্যাকাউন্টটি খোলা হতে পারে। তবে, এটি নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর রাজি থাকার ওপর।’
মশিহুল হক চৌধুরী আরও বলেন, ‘গুলশানের পুলিশ প্লাজায় প্রধান কার্যালয় ও প্রিন্সিপাল শাখাসহ ছয়টি শাখা দিয়ে ব্যাংকটির কার্যক্রম চালু হবে।’
জানা গেছে, কমিউনিটি ব্যাংকের প্রিন্সিপাল ব্রাঞ্চের কার্যক্রম চালু হবে গুলশানের পুলিশ প্লাজায়। এছাড়া, উদ্বোধনের দিন থেকেই মতিঝিল, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, হবিগঞ্জ ও চট্টগ্রামের শাখা চালু করা হবে। ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ও থাকবে গুলশানের পুলিশ প্লাজায়। অন্যান্য তফসিলি ব্যাংকের মতো এই ব্যাংকেও হিসাব খোলা, ঋণসহ সব সেবা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। ব্যাংকটির কর্মকর্তারা বলছেন, কমিউনিটি ব্যাংক চালু করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগ ও কোর ব্যাংকিং সফটওয়্যারের (সিবিএস) স্থাপনসহ যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
এর আগে, ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর পুলিশ বাহিনীর ‘কমিউনিটি ব্যাংক অব বাংলাদেশ’ ব্যাংককে তফসিলি ব্যাংক হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার-১৯৭২ এর ৩৭ (২) (এ)-এ ধারার ক্ষমতা বলে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর থেকে কমিউনিটি ব্যাংক অব বাংলাদেশকে তফসিলি ব্যাংকরূপে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এরফলে সরকারি-বেসরকারি মিলে দেশে তফসিলি ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়ালো ৫৯টিতে।
গত বছরের ২৯ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় নতুন এই ব্যাংকের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। যার মালিকানায় রয়েছে পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট। গত বছরের মার্চে ব্যাংকটির অনুমোদন চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করে পুলিশ সদর দফতরের কল্যাণ ট্রাস্ট।
এর আগে বাংলাদেশ পুলিশ বাণিজ্যিকভাবে এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে ২০১৭ সাল থেকে কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে মূলধনের ৪০০ কোটি টাকা সংগ্রহ শুরু করে। পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে গত ফেব্রুয়ারিতে মূলধন সংগ্রহ শেষ হয়।
গুলশানে পুলিশ প্লাজা কনকর্ডে করা হয়েছে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়। এরই মধ্যে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে মিডল্যান্ড ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি মশিউহুল হক চৌধুরীকে।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারি পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠানে পুলিশ ব্যাংক গঠনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রথম দাবি তোলা হয়। এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ওই দিনই প্রধানমন্ত্রী দাবিটি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন। এর ফলে পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের মালিকানায় চালু হচ্ছে কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড।
এই ব্যাংকের মাধ্যমে সারাদেশে পুলিশ সদস্যদের বেতন দেওয়া হবে। আপাতত পুলিশ সদস্যরাই হবেন এই ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার। তিন বছর পর ব্যাংকটির শেয়ার ছাড়া হবে বাজারে। কমিউনিটি ব্যাংকের লভ্যাংশ যাবে পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের অ্যাকাউন্টে। ট্রাস্টের মাধ্যমে ওই টাকা ব্যয় হবে পুলিশ সদস্যদের কল্যাণে। ব্যাংক লাভজনক হলে তিন বছর পর মূলধন জোগানের ওপর প্রত্যেকে নির্ধারিত হারে লভ্যাংশ পাবেন অংশীজনরা। এ ছাড়া পুলিশ সদস্যদের জমি কেনা, বাড়ি নির্মাণ, ব্যবসা উদ্যোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা দেওয়া হতে পারে। পুলিশ সদস্যরা অবসর সুবিধা, তাদের সন্তানের শিক্ষাবৃত্তি, কারিগরি শিক্ষাবৃত্তি, ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপনসহ বিভিন্ন সুবিধা পাবেন এই ব্যাংক থেকে।
এর আগে সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত ট্রাস্ট ব্যাংকের আদলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’র (বিজিবি) ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট’র মালিকানাধীন সীমান্ত ব্যাংক নামে একটি ব্যাংক চালু হয়।
সবশেষে চালু হতে যাচ্ছে পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের মালিকানায় কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ।