সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, এসবিপি, ওএসপি, এনডিইউ, পিএসসি, পিএইচডি ঢাকা জেলার দোহার উপজেলাধীন মাঝিরচর থেকে নারিশা বাজার হয়ে মোকসেদপুর পর্যন্ত পদ্মা নদীর বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি পরিদর্শন করেন। শনিবার সকালে এই বাঁধ পরিদর্শনকালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব সালমান এফ রহমান, এমপি এবং সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। সেনাবাহিনীর প্রধান প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র নির্দেশনায় পদ্মা সেতুর উজানে ঢাকা জেলার দোহার উপজেলাধীন মাঝিরচর থেকে নারিশা বাজার হয়ে মোকসেদপুর পর্যন্ত পদ্মা নদীর বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্প বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড এর অধীনস্ত ২৫ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়নের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
উন্নত দেশের মর্যাদা অর্জনের লক্ষ্যে রূপকল্প-২০৪১ অনুযায়ী শিল্পায়নকে অগ্রাধিকার প্রদান করছে বর্তমান সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকার দোহারে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলে শিল্পায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বর্তমান সরকার। তবে, এই বিপুল সম্ভাবনার পথে হুমকি প্রমত্তা পদ্মার ভাঙ্গন।
প্রকল্পটি গত ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে একনেক এ অনুমোদিত হলে গত এপ্রিল ২০১৯ এ ২৫ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন কর্তৃক প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা হয়। প্রকল্পের মূল কাজ ছিল দুইটি: দোহারে পদ্মা নদীর বাম তীর ঘেঁষে ৬ কিঃমিঃ বাঁধ প্রতিরক্ষা এবং ১২.২০ কিঃ মিঃ ড্রেজিং। এরই মধ্যে অতি অল্পসময়েই ২৫ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়নের সদস্যদের নিরলস প্রচেষ্টায় ৬ কিঃ মিঃ এলাকায় জিওব্যাগ ডাম্পিং ও প্লেসিং এর মাধ্যমে দোহার এলাকাকে পদ্মার ভাঙ্গন হতে রক্ষা করা হয়েছে। সেই সাথে ৬ কিঃ মিঃ স্থায়ী বাঁধ প্রতিরক্ষা কাজের ৩.৪৮ কিঃ মিঃ ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে এবং অবিশিষ্ট ২.৫২ কিঃমিঃ স্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়াও আইডব্লিউএম এর হাইড্রোলজিক্যাল ও মরফোলজিক্যাল স্টাডির সুপারিশ মোতাবেক গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখ হতে ১২.২০ কিঃমিঃ ড্রেজিং কাজ শুরু হয়েছে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমের পূর্বেই প্রকল্পের ৫০% ড্রেজিং কাজ সম্পন্ন করা হবে এবং অবশিষ্ট ৫০% কাজ আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে বর্ষা মৌসুমের পূর্বেই সম্পন্ন হবে বলে আশা করা যায়। তাছাড়া আইডব্লিউএম এর প্রতিবেদন মোতাবেক আওরাঙ্গবাদ হতে শাইনপুকুর পর্যন্ত ১৯.২০ কিঃমিঃ প্রিকশনারী নদীর তীর প্রতিরক্ষা কাজ আরডিপিপি’তে নতুন করে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে যা মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আগামী ২০২৪ সালের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সাথে কাজ করে চলেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দৃঢ়প্রত্যয়ী সেনাসদস্যগণ। এই পদ্মা নদীর বাঁধের কাজে চল্লিশটি ড্রেজার খনন কাজে রয়েছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দোহারে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পথ সুগম হবে এবং এই অঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।
পদ্মা নদী বাঁধ পরির্দশন কাজের সময় সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আজকে আমার এই পদ্মা নদীর বাঁধ পরির্দশনের কারন হল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড এর অধীনস্ত ২৫ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়নের কাজের কর্মকান্ড দেখা। তারা আজকে আমাকে পেয়ে মনবল বৃদ্ধি পেয়েছে। আমি খুব খুশি আমাদের যে কাজ দেওয়া হয়েছে তা আমরা সময় ভিতরে শেষ করতে পারবো এবং সেই সাথে কাজের কোয়ালিটিও রক্ষা করতে পারবো।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সব সময় জনগণের পাশে বা সরকারের প্রদত্ত দায়িত্ব পালন করতে সব সময় প্রস্তুত থাকে। আর এটা আমরা করতে পেরে নিজেদেরকে আনন্দিত ভৌতকরি। এই কাজগুলোতে আমরা সর্বচ্ছো কোয়ালিটি মেন্টেন করি।
বাঁধ পরিদর্শন কালে সালমান এফ রহমান বলেন, আমাদের এই প্রজেক্টটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একনেক সভায় পাশ করিয়েছিলেন। তখন এই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে। আজকে এই স্থানে এসে পরিদর্শন করার জন্য সেনা প্রধানকে ধন্যবাদ জানাই। সেনাবাহিনী বলেছে এই কাজটি সময়মত শেষ হবে। দোহারের প্রধান সমস্যা ছিল নদী ভাঙ্গন তাই দোহারের মানুষের দাবি ছিল পদ্মা নদীর ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পাওয়ার। এটি বাস্তবায়িত্ব হলে আমার দোহারবাসী পদ্মা নদীর ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পাবে।
তিনি আরো বলেন, এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দোহারবাসী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সেনাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে বলে আমি মনে করেছি।
সে সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, সেনাবাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তা, পানি উন্নয়ন বোডের উর্ধতন কর্মকর্তা, দোহার উপজেলায় চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন, দোহার উপজেলায় সহকারী কমিশনার ভূমি ফজলে রাব্বি, দোহার থানা ওসি মোস্তফা কামাল, ঢাকা জেলা দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি গিয়াসউদ্দিন সোহাগ, দোহার উপজেলা নারিশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন প্রমুখ।