আগামীতে এককভাবে নির্বাচন করার জোরালো প্রস্তুতি চলছে জাতীয় পার্টির। ইতোমধ্যে ১০৫ আসনের প্রার্থী তালিকা প্রাথমিক পর্যায়ে চূড়ান্ত করেছে।তারই অংশ হিসাবে দোহার নবাবগঞ্জ নির্বাচনী আসনে জাপা থেকে সালমা ইসলামকে চূড়ান্ত করা হচ্ছে। একই সাথে ঢাকার ধামরাই থেকে খান মো. ইসমাইল খোকনকে মনোনীত করা হয়েছে বলে নিউজ৩৯ এর বিশেষ প্রতিবেদক জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে সালমা ইসলামের একান্ত সহকারী ও ঢাকা জেলা ছাত্র সমাজের সভাপতি মশিউর রহমান নিউজ৩৯ কে জানান, পার্টির চেয়ারম্যান যোগ্য প্রার্থী হিসাবে সালমা ইসলামকে মনোনীত করেছেন। আগামীকাল রবিবার পার্টির বনানী অফিসে পার্টির চেয়ারম্যান ১০৫ আসনের প্রার্থীদের নিয়ে এক মিটিং এ বসবেন; সেখান থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়া হবে।
তবে কিছু আসনে প্রার্থী তালিকায় একাধিক ব্যক্তির নাম রাখা হয়েছে। গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন না বর্তমান দুই এমপি।
এ দিকে রাজধানীর কোনো আসন থেকে আর নির্বাচন করতে চান না পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি আগামী নির্বাচনে বর্তমান নির্বাচনী এলাকা ঢাকা-১৭ আসনটি ছেড়ে দিয়ে রংপুর, কুড়িগ্রাম ও সিলেট সদর আসন থেকে নির্বাচন করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে কুড়িগ্রাম সদরের পরিবর্তে তিনি চট্টগ্রামের যেকোনো আসন থেকেও নির্বাচনে লড়তে পারেন বলে জানা গেছে।
ঢাকা-১৭ (গুলশান-বনানী-ক্যান্টনমেন্ট -ভাসানটেক) আসনে এরশাদের পরিবর্তে মহানগর (উত্তর) জাতীয় পার্টির সভাপতি এস এম ফয়সল চিশতীকে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে।
তবে এ আসনে এইচআরসি গ্রুপের চেয়ারম্যান দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার মালিক আবু সাইদ চৌধুরীর নামও বিবেচনায় রাখা হয়েছে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।
পার্টি সূত্র জানিয়েছে, সিলেট সদর আসনে নির্বাচনের লক্ষ্যে এরই মধ্যে শাহপরান মাজার এলাকায় এরশাদের জন্য একটি জমি কেনা হয়েছে। সেখানে ইতোমধ্যে একটি বাড়ি তৈরির কাজও চলছে। লন্ডন প্রবাসী এক জাপা নেতা এর সার্বিক দায়িত্বে রয়েছেন।
এ দিকে কপাল পুড়ছে বর্তমান এমপি কুড়িগ্রাম-৩ (উলিপুর) আসনের এ কে এম মাইদুল ইসলাম ও গাইবান্ধা-২ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের কর্নেল (অব:) আব্দুল কাদেরের। নির্বাচনী এলাকায় তারা গণবিছিন্ন হয়ে পড়ায় এ দুই এমপিকে আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে না এটা অনেকটাই নিশ্চিত।
সে ক্ষেত্রে কর্নেল কাদেরের আসনে সাবেক এমপি ওয়াহিদুজ্জামান বাদশা এবং মাইদুল ইসলামের আসনে সাবেক এমপি মতিউর রহমানকে মনোনয়ন দেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে।
এরশাদপতœী বেগম রওশন এরশাদের শারীরিক কোনো সমস্যা না হলে এবারো ময়মনসিংহ সদর ও গাইবান্ধা-৫ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। বিগত নির্বাচনে এ দু’টি আসনে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছে হেরে যান তিনি। পরে এরশাদের ছেড়ে দেয়া রংপুর সদর আসন থেকে উপনির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সংসদে যান রওশন এরশাদ।
এরশাদের অনুজ পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মহাজোট সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদের এবার নির্বাচন করবেন লালমনিরহাট সদর অথবা পাটগ্রাম-আদিতমারি আসনে। এ ছাড়া নীলফামারীর (জলঢাকা- কিশোরগঞ্জ) আসনটিও জি এম কাদেরের বিকল্পের তালিকায় রয়েছে।
প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমদ গত নির্বাচনে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম আসনে হেরেছেন। সেখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিজয়ী হন। এবারো এ আসনটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। কারণ একই আসনের অন্যতম দাবিদার তারই হাত ধরে জাতীয় পার্টিতে আসা সাবেক জামায়াত নেতা বর্তমানে পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান আইসিএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের পরিচালক এইচ এন এম শফিকুর রহমান। তিনিও ওই আসনে জাপার জোরালো প্রার্থী।
পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার এবার উজিরপুরের পাশাপাশি পটুয়াখালী-২ আসন থেকেও নির্বাচন করতে চান।
পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ঢাকা মহানগর দেিণর সভাপতি ও মেয়র প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী কাজী ফিরোজ রশীদ ঢাকা-৮ (ধানমন্ডি-হাজারীবাগ-মোহাম্মদপুরের একাংশ) আসন থেকে নির্বাচন করতে চান। তিনি বলেন, আমি যেহেতু এ এলাকার বাসিন্দা, তাই এই এলাকা থেকেই নির্বাচন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত রয়েছে।
আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান ঢাকা-৬ (খিলগাঁও-সবুজবাগ-মতিঝিল) আসন থেকে নির্বাচন করবেন।
বরিশাল-৩ (উজিরপুর-বাবুগঞ্জ) আসনের বর্তমান এমপি প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু ও পার্টিতে নবাগত প্রেসিডিয়াম সদস্য চিত্র নায়ক মাসুদ পারভেজও (সোহেল রানা) মনোনয়ন প্রত্যাশী।
পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের প্রেস ও রাজনৈতিক সচিব প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায় খুলনার (দাকোপ-বাটিয়াঘাটা) আসনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন। ফেনী-২ (সদর) আসন থেকে যুগ্ম মহাসচিব হাজী আলাউদ্দিন, ফেনী-৩ (দাগনভুঁইয়া-সোনাগাজী) আসনে মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে এরশাদের প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক উপদেষ্টা রিন্টু আনোয়ারকে।