সারাদেশের মত দোহার-নবাবগঞ্জে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে পর্নোগ্রাফি। দ্রুত বিকাশমান প্রযুক্তির কল্যাণে তা এখন সর্বসাধারণের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। যে কেউ চাইলে মোবাইলেই তা দেখতে পারে এখন। পর্নোগ্রাফির বিস্তারে বেশি পথভ্রষ্ট হচ্ছে প্রবাসী অধ্যুষিত দোহার-নবাবগঞ্জের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।
দোহার-নবাবগঞ্জে পর্নোগ্রাফি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মাঝে চরম ও প্রকট আকার ধারণ করেছে। এতে বাড়ছে সামাজিক অসংগতি। নীতি-নৈতিকতা, পারিবারিক মূল্যবোধ ও সামাজিক সম্মান এবং শৃঙ্খলা আজ হুমকির মুখে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এ ব্যাপারে দোহার-নবাবগঞ্জের অভিভাবকেরা তেমন সচেতন নয়। সচেতন নয় শিক্ষকেরাও। ক্লাশ রুমে মোবাইল ফোন শিক্ষা মণত্রাণালয় কর্ত্রিক নিষিদ্ধ হলেও তা মানাতে পারছেন না শিক্ষকেরা। এর কারণ হিসাবে তারা অভিযোগ করেন, ছাত্রদের মাঝে থেকে আজ বড়দের প্রতি শিক্ষকের প্রতি সম্মানবোধ উঠে গেছে। আর প্রায় প্রতিটি ছাত্রই কোন না কোন ভাবেই রাজনীতির দ্বারা প্রভাবিত। তাই তাদের মোবাইল আটকালেও স্কুল-কলেজের ক্যাম্পাসের বাইরে তাদের দ্বারা লাঞ্চিত হওয়ার ভয়ে তারা কড়ারোপ করেন না।
এ ব্যাপারে দোহারের একটি খ্যাতনামা বালিকা বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক তার নিজের অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে বলেন, তিনি একদিন তার নবম শ্রেণির ক্লাশে কয়েক ছাত্রীর কাছ থেকে মোবাইল কেড়ে নেন ক্লাশে ব্যবহার করার কারণে। এ সময় একটি স্মার্টফোন মোবাইলে তিনি একটি ওপেন ফাইলে কয়েকটি ন্যূড ছবি দেখতে পান। সাথে সাথে তিনি মোবাইলটি অফ করেন। পরবর্তীতে ঐ মোবাইলটি তিনি উক্ত ছাত্রীকে ফেরত দিলে সে পরেরদিন এসে জানতে চায় যে তিনি কিছু দেখেছেন কিনা। তখন ঐ ছাত্রীকে তিনি ভর্তসনা করলে সে মাফ চায় আর স্বীকার করে যে সে তার বয়ফ্রেন্ডকে ছবিগুলা দিবে বলে নিজের ছবি এভাবে তুলেছে। তবে বাস্তবিক ঐ ছাত্রীর মাঝে তিনি কোন অনুষচনা বা লজ্জ্বাবোধ দেখতে পাননি বলেও নিউজ৩৯ কে জানান।
যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল ১৯৫৫ সালে পর্নোগ্রাফি ও অশ্লীলতাকে সভ্যতার কালো দাগ বলে মন্তব্য করেছিলেন। রয়েল সোসাইটিতে দেওয়া এক বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, ‘একদিন অশ্লীলতা চর্চার মাশুল গুনতে হবে মানবজাতিকে।’
বিশ্বব্যাপী যৌনসন্ত্রাস বৃদ্ধির ঘটনাকে বিভিন্ন সময়ে পর্নোগ্রাফি ও অশ্লীলতা চর্চার ফল হিসেবে দেখিয়েছেন গবেষকরা। এদিকে দোহার-নবাবগঞ্জে অভিভাবকেরা বরং সন্তানের আবদার মেটাতে, তাকে তথাকথিতভাবে আধুনিক করতে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে তারা খেয়াল করছেন না তাদের বয়ঃসন্ধির বিষয়টি।
হাইস্কুলের শিক্ষার্থীদেরও হাতে হাতে রয়েছে মোবাইল এবং ইন্টারনেট প্রযুক্তি। পর্নো আসক্তি থেকে অনেকে জড়িয়ে পড়ছে নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। পর্নোগ্রাফির বিস্তার এবং পর্নো আসক্তি বিষয়ে প্রায়ই উদ্বেগজনক তথ্য বেরিয়ে আসছে বিভিন্ন জরিপ এবং গবেষণায়।
তাই সকল সচেতন মহলের আশাবাদ ধর্মীয় অনুশাসন বৃদ্ধি, পারিবারিক মূল্যবোধ তোইরি এবং অভিভাবকদের সচেতনতা-ই পারে এই রাহু গ্রাস থেকে দোহার-নবাবগঞ্জের আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করতে। নতুবা এই অঞ্চলে মাদক ও পণ্যগ্রাফি মিলে ভয়াবহ সামাজিক অসংগতি দেখা দিতে পারে যাতে অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে পারিবারিক বন্ধন এবং সামাজিক সম্পর্ক।