ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহাবস্থান নিশ্চিত এবং গণতন্ত্র রক্ষায় সরকার বিরোধী আন্দোলনকে তরান্বিত করতে ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। নিউজ৩৯ এর কছে এমনটাই জানালেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি কামাল হোসাইন খান(ভিপি কামাল)। দোহার-নবাবগঞ্জের এই ছাত্রনেতা নিউজ৩৯কে বলেন, পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় কমিটি বর্ধিতকরণ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শাখা সংগঠন ও ইউনিটের কমিটি গঠনের কাজ শুরু করেছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
এছাড়া তিনি আরো জানান, পৌর নির্বাচনের পরপর – ই ঢাকা জেলা কমিটিসহ দোহার-নবাবগঞ্জে ছাত্রদলের সকল কমিটি করা হবে বলে জানান ছাত্রদলের প্রভাবশালী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া আস্থাভাজন বলে পরিচিত ভিপি কামাল। তবে ত্যাগী, আদর্শিক, দলের প্রতি অনুগত, দুঃসময়ের কান্ডারী কর্মিরা পদে মনোনয়ন পাবেন। কোন পকেট কমিটি হবে না, এবারের কমিটি হবে হয় এস্পার না হয় ওস্পার। দেশ বাঁচাতে, মানুষ বাঁচাতে এবং গণতন্ত্র রক্ষা করতে নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ের কমিটি রাজপথে আবার সরব হবে, আবার বিজয় ছিনিয়ে আনবে।
তবে এই কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় গত কয়েক বছরের (বিশেষ করে গত এক বছর) আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে থাকা নেতাকর্মীদের গুরুত্ব দেয়া হবে বলে তিনি নিউজ৩৯কে জানিয়েছেন।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় এবং তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মনে করেন, কমিটিতে যদি ত্যাগী ও পরিশ্রমী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হয় তাহলে আন্দোলন সংগ্রাম বেগবান হবে। আর যদি এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে পকেট কমিটি কিংবা নিষ্ক্রিয়দের দিয়ে কমিটি গঠিত হয় তাহলে ছাত্রদল তার অভিষ্ঠ লক্ষে পৌঁছাতে পারবে না। বরং আগের চেয়ে আরো খারাপ অবস্থানে পড়তে পারে।
গত বছরের ১৪ অক্টোবর রাজিব আহসানকে সভাপতি এবং আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক ও দোহার-নবাবগঞ্জের সন্তান আবুজর গিফারি কলেজের সাবেক ভিপি কামাল হোসাইন খান (ভিপি কামাল)কে সিনিয়র সহ সভাপতি নির্বাচিত করে ১৫৩ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। গত এক বছরে রাজপথে সরকারের কঠোর অবস্থানের পরেও বেশ কিছু মিছিল-মিটিং করতে সক্ষম হয় রাজিব আহসান এবং আকরামুল হাসান নেতৃত্বাধীন কমিটি। বিএনপি’র ডাকা অবরোধে রাজপথে ছিল এই কমিটি।
তবে তাদের এই মিছিল-মিটিং ছিলো বিচ্ছিন্ন এবং অনেকটা অকার্যকর। ঐক্যবদ্ধভাবে কোথাও মিছিল হতে দেখা যায়নি গত এক বছরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর এবং ঢাকায় অবস্থিত কলেজগুলোর কমিটি না দিতে পারাটা বর্তমান কমিটির অন্যতম বড় ব্যর্থতা বলেও মনে করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। কোনো সাংগঠনিক পরিচয় না থাকায় অনেকে আবার ছাত্রদলের কর্মসূচিতে যোগদানেও অনীহা প্রকাশ করেছেন। ফলে আন্দোলন কিছুটা হলেও ব্যত্যয় ঘটেছে বলে মনে করছেন খোদ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির অনেক নেতা। এছাড়া ঢাকা জেলার আশে – পাশের উপজেলা কমিটি না থাকায় তরুণ নেতৃত্ব উঠে আসছে না। ফলে আন্দোলন ব্যার্থ হচ্ছে বিএনপি’র।
এদিকে লন্ডন সফরের পর দেশে ফিরে ছাত্রদলের কমিটি গঠন করার জোর তাগিদ দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ভিপি কামালসহ ছাত্রদলের শীর্ষ ছয় নেতাদের নিয়ে ইতিমধ্যে কয়েকবার বৈঠকে বসেছেন খালেদা জিয়া। এই ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তিনি ছাত্রদলের শীর্ষ নেতাদের ত্যাগী এবং পরিশ্রমী নেতাকর্মীদের তালিকা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল কমিটি করারও নির্দেশ দেন তিনি। তালিকা প্রকাশ করতে ছাত্রদল বিভিন্ন উপ-কমিটি গঠন করে কাজ করছে। তবে কমিটি কখন গঠিত হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না ছাত্রদলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান বলেন, ছাত্রদলের স্বাভাবিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। তিনি বলেন, সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসের রাম রাজত্ব কায়েম করেছে। সেখানে কোন সহাবস্থান নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং ইউনিটের কমিটি গঠনের মধ্যে দিয়ে সহাবস্থানের পথ ত্বরান্বিত হবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রহীন বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করাও ছাত্রদলের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তাই বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এবং নির্দেশনায় ছাত্রদল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সকল আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নেবে বলেও তিনি জানান।