ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করেছিলেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নিজে প্রার্থী না হয়ে প্রার্থী করেছিলেন তাকে। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে যখন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সালমা ইসলাম এম পি নির্বাচিত হলেন ঠিক তখনই ২০১৪ সালের মার্চের ১৭ তারিখে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে নিজের কর্মী সমর্থকদের নিয়ে যোগ দিলেন জাতীয় পার্টিতে। অথচ দীর্ঘদিন আওয়ামীলীগ করে আসা এই নেতা যেদিন আওয়ামীলীগ ছেড়ে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন সেদিন ছিল “ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন অর্থাৎ জাতীয় শিশু দিবস।“
কিন্তু এখানেই শেষ নয়, ২০১৫ সালের শেষ মুহূর্তে যখন সিদ্ধান্ত হলো দলীয় ভাবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হবে তখনই পাল্টে গেল পরিস্থিতি। সবার অগোচরে আবারও শুরু করলেন আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের সাথে মেশা; তৈরি করতে লাগলেন পুরানো সখ্যত। উদ্দেশ্য — নিজেকে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসাবে পরিচয় করিয়ে দেয়া।
উপরের ব্যক্তিটি কোন নাটকের কল্পিত চরিত্র নয়, উনি নবাবগঞ্জ উপজেলার একটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। উনি নবাবগঞ্জের জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের মোতাহার হোসেন চেয়ারম্যান। সময়ের সাথে সাথে নিজের রাজনৈতিক মতাদর্শ পরিবর্তন করতে সিদ্ধহস্ত একজন চেয়ারম্যান। সব কিছু ভুলে উনি আবার যোগ দিতে চাচ্ছেন আওয়ামী লীগে। বিভিন্ন স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ চেয়ারম্যান হিসাবে।
২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী আব্দুল মান্নান খানকে হারিয়ে সালমা ইসলাম নির্বাচিত হন দোহার-নবাবগঞ্জ নিয়ে গঠিত ঢাকা-১ আসনের সংসদ সদস্য। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই ১৭ মার্চ নিজের অনুসারি নেতা কর্মীদের নিয়ে সালমা ইসলামের যমুনা ফিউচার পার্কে সালমা ইসলামের অফিসে গিয়ে যোগদান করেন এই আওয়ামী লীগ নেতা। পরবর্তীতে জাতীয় পার্টির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়মিত বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকেছেন।
কিন্তু যখনই স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার, তখনই আবার আওয়ামী লীগে যোগদানের তোড়জোড় শুরু করেন মোতাহের হোসেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে মোতাহার হোসেন স্থানীয় পত্রিকা ও ব্যানার ফেস্টুনে জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা হিসাবে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নেয়ার জন্য তোড়জোড় শুরু করেছেন।
কিন্তু তার এই আওয়ামী লীগ থেকে জাতীয় পার্টি, আবার জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামী লীগ, ব্যাপারটা ভালভাবে নেননি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
এই ব্যাপারে নিউজ৩৯ এর কথা হয় নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাসির উদ্দিন ঝিলুর সাথে। নাসিরুদ্দীন ঝিলু নিউজ৩৯কে বলেন, কেউ কখনই বলতে পারেনা, কে মনোনয়ন পাবে, কে পাবে না। আর মনোনয়নের ব্যাপারে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের মতামতকে প্রাধান্য দেয়া হবে। তাদের অখুশি করে সুবিধাভোগী কাউকে মনোনয়নের জন্য সুপারিশ করা হবে না। আর মনোনয়ন দিবেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। এই জায়গায় কে মনোনয়ন পাবেন তার কোন নিশ্চয়তা নেই। জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দিবে তিনিই নির্বাচন করবেন। তৃনমূলের নেতা কর্মীদের কষ্ট দিয়ে কোন সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেবে না।
এই ব্যাপারে জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বিতর্কিত চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন নিউজ৩৯কে বলেন, তিনি সব সময় আওয়ামী লীগেই ছিলেন, এখনও আওয়ামী লীগেই আছেন। জাতীয় পার্টিতে যোগ দেয়ার খবর ছিল ভিত্তিহীন। ২০১৪ সালের ১৭ মার্চ বংগবন্ধুর জন্মদিনে অর্থাৎ জাতীয় শিশু দিবসে; জাতীয় পার্টিতে যোগ দেয়া নিয়ে তিনি বলেন, এলাকার এমপি হিসাবে আমি তার সাথে দেখা করতে যাই, এসময় তিনি তার সাংবাদিক দিয়ে আমার জাতীয় পার্টিতে যোগদানের নিউজ করেন। ব্যাপারটি আমার জানা ছিল না।
কিন্তু তিনি কখনো কেন এর প্রতিবাদ করেননি এ ব্যাপারে নিউজ৩৯কে বলেন, তিনি ব্যাপারটাকে আমলে নেন নি। এছাড়া স্থানীয় ও জাতীয় বিভিন্ন সংবাদ পত্রে তাকে জাতীয় পার্টি নেতা হিসাবে উল্লেখ করা হলে তিনি কেন তা সংশোধন করেননি এই প্রশ্নের জবাব তিনি এড়িয়ে যান। এ সময় তিনি বলেন, তিনি এবারের নির্বাচনে শতকরা ১০০ ভাগ নিশ্চিত আওয়ামীলীগের মনোনয়নের ব্যাপারে এবং চেয়ারম্যান পদে জয়ী হওয়ার ব্যাপারে। তিনি জোর দিয়ে নিউজ৩৯কে বলেন, কেউ তার মনোনয়ন ফেরাতে পারবে না।
মোতাহের হোসেনের জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদানের ব্যাপারে, নিউজ৩৯ এর সাথে কথা হয় নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক জালাল উদ্দিনের সাথে। নিউজ৩৯কে তিনি বলেন, মোতাহার হোসেন জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি আবার দলে ফেরত এসেছেন এবং দলের জন্য কাজ করছেন। মোতাহার হোসেনের দাবী – শতভাগ মনোনয়ন নিশ্চিত এই ব্যাপারে তিনি বলেন, নির্বাচন বোর্ড গঠন করে মনোনয়ন দেয়া হবে।
কিন্তু নিউজ৩৯ অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে তথ্য এসেছে যে, যদিও মোতাহার হোসেন জাতীয় পার্টিতে নিজের যোগদানের কথা অস্বীকার করেছেন কিন্তু নবাবগঞ্জ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দিন কিন্তু ঠিক-ই স্বীকার করেছেন মোতাহার হোসেন ২০১৪ সালের ১৭ মার্চ আওয়ামী লীগ থেকে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন।
মোতাহার চেয়ারম্যানের এমন দল বদলের কারনে বিরক্ত আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা কর্মীরা। তারাও তার এই সুবিধাজনক আচরনের জন্য তাকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে দেখতে চান না। তারা দলের প্রতি অনুগত এমন একজনকেই তারা জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে দেখতে চান। সুবিধাবাদী কাউকে তারা আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে মেনে নিবেন না বলে জানিয়েছেন।
জাতীয় পার্টিতে যোগদানঃ ১৭ ই মার্চ ২০১৪
নিউজ লিংকঃ https://news39.net/4414/
দৈনিক যুগান্তরঃ http://www.jugantor.com/news/2014/03/18/78591
জাতীয় পার্টি নেতাঃ https://news39.net/4455/
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ দৈনিক যুগান্তর ।