মৈনটের মাছের হাট

1571
মৈনটের মাছের হাট

ঢাকার দোহার উপজেলার মিনি কক্সবাজার খ্যাত পদ্মার তীরবর্তী মৈনটঘাটে জমে উঠেছে মাছের হাট। ছোট, বড় সব ধরনের মাছই পাওয়া যায় এ হাটে । কম মূল্যে মাছ কিনতে অনেকেই আসছেন এ হাটে। আর বিক্রি ভালো হওয়ায় অনেক কিক্রেতাও আসছেন।

 ভোঁরের আলো ফোঁটার সঙ্গে সঙ্গে পদ্মার পাড়ে ভিড়ে ছোট বড় সারি সারি নৌকা। তার পর কেউ খালই, কেউ ছোট ডালা, কেউ ঝাকা আবার কেউবা ককসীটের বাক্সে থাকা মাছ মাথায় নিয়ে নৌকা থেকে নেমে আসছেন হাটে। এদিকে পদ্মার পাড়ে মাছ কেনার জন্য অপেক্ষায় থাকে দোহার-নবাবগঞ্জ এলাকার শত শত ক্রেতা।

তবে এই হাটে ছোট মাছ যেমন তেমন বড় কোন মাছ আসলেই তা কিনতে যেন মরিয়া হয়ে উঠে সবাই।

সেখানে চোখে পরে বড় একটি রুই মাছ। সদ্য পদ্মার মৈনটঘাট পয়েন্ট থেকে মাছটি এক জেলের জালে ধরা পরে। যা বিক্রি করার জন্য মৈনটঘাটের আরতদার সোহান মৃধার আরতে এনে ডাকে তোলার জন্য রাখে। মাছটি রাখতেই আরতদার মাছটি মূল্যে জেনে প্রথমেই ডাক তোলে পাঁচ হাজার টাকা। যা পাইকারদের মধ্যে থেকে লটাখোলা বাজারের মাছ ব্যবসায়ী সুকুমার আট হাজার ৫০০ টাকায় ক্রয় করে। জানা যায়, উপজেলার লটাখোলা নতুন বাজারে গিয়ে এই মাছটি বিক্রি করা হবে অন্তত ১৩ হাজার টাকা।

একই চিত্র পাশের আরেকটি আরত আবুল কাশেম মেম্বারের আরতে। সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত সামাদ মেম্বার তিনটি ছোটবড় বোয়াল মাছের দাম আরতে ডাক দেয় আট হাজার টাকা যা পাইকাররা ৯ হাজার টাকায় ক্রয় করে। জানা যায এই আরতে কয়েক মাস আগে পদ্মার একটি বাঘাইর মাছ বিক্রির জন্য আনা হয়। যা ক্রয় করে এক ক্রেতা মাথায় করে বাড়িতে নিয়ে যায়। যেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বেশ আলোচিত হয় এবং ওই ছবিটি ভাইরাল হয়ে যায়।

অন্য খবর  এবারের গ্রন্থমেলায় আসছে রাজু আহমেদের ‘তোমার মৃত্যু দেখবো’

এ বিষয়ে কথা হয় মাছ কিনতে আসা দক্ষিণ জয়পাড়া এলাকার মো. মনিরের সঙ্গে। তিনি জানান, ঢাকায় থাকা বড় বোনের জন্য মাছ কিনতে এসেছেন।

তিনি বলেন, এখানে দেশি নানা প্রকারের ছোট মাছ ও পদ্মার আইর, বাঘাইর, রুই ও বড়  বোয়াল মাছ পাওয়া যায়। যা দোহারের অন্য বাজারের তুলনায় একটু ব্যতিক্রম। বড় বোন দেশি ছোট মাছটা পছন্দ করে তাই এ মাছের হাট থেকেই কয়েকমাস পর পর মাছ কিনতে আসি। এছাড়া কথা হয় শ্রীনগর জগন্ন্যাতপট্টি এলাকার কাপর ব্যবসায়ী আব্দুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, এই মাছের হাট থেকে আমি মাঝেমধ্যেই মাছ কিনে থাকি। দামটাও আমাদের বালাসুর বাজার থেকে কম। তাই এখান থেকে দেখে শুনে ভাল মাছ কিনা যায়।

এ বিষয়ে মাছের আরতদার রশীদ দেওয়ান বলেন, আমাদের পদ্মার পারের এই হাটট আজ থেকে অন্তত ৫০ বছর আগে হয়েছিল। তখন আজকের হাটটি এখান থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ছিল। পদ্মার ভাঙ্গনের স্বীকার হয়ে তা বর্তমানে এখানে এসেছে। এই ঐতিহ্যবাহী মাছের হাটটি প্রতিষ্ঠা করেন ডা. আজিজ। পরে বিরিন ও নিহা নামে দুই ব্যক্তি যুক্ত হন হাটটির আরতদার হিসেবে। তখন মাছের হাটটি ছিল চর পুরুলিয়া এলাকায়। কিন্তু বর্তমানে হাটটি অবস্থিত মাহমুদপুর এলাকার পদ্মার তীরবর্তী মৈনটঘাটে । বর্তমানে ২০ জন আরতদার দ্বারা পরিচালিত হয় এই মাছের হাট। ভোর পাঁচটা থেকে সকাল সাড়ে সাতটা পর্যন্ত চলে পুরোদমে এই মাছের হাট।

অন্য খবর  পদ্মা সরকারি কলেজ রোভার স্কাউট গ্রুপের বার্ষিক ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

জানা যায়, মানিগঞ্জের, হাতিঘাটাচর, ধলুস্বুরা, মনিপুর, কবিরপুর, ফরিদপুরের, চরভদ্রশন, শালিপুর, শয়তানখালি, হাজীগঞ্জ, দোহারের নারিশা, নারিশা জোয়ার, মেঘুলা, মধুরচর, বিলাসপুর, হাজারবিঘা, মাহমুদপুর, নয়াবাড়ির বাহ্রা, ধোয়াইর ও নবাবগঞ্জের বিভিন্ন  এলাকা থেকে প্রতিদিন ভোর থেকে সকালের আলো ফোটা পর্যন্ত সারি সারি ছোট-বড় অন্তত দের শতাধিক নৌকা ভিড়ে এই মাছের হাটে। এ হাটকে প্রথমে দেখলে মনে হবে কোন মেলা চলছে এখানে।

এই হাটে দোহার উপজেলাসহ পার্শবর্তী নবাবগঞ্জ, শ্রীনগর ও নদীর ওপার ফরিদপুরের কয়েকটি এলাকার শত শত মানুষ আসে এই ঐতিহ্যবাহী পদ্মা নদীর তীরবর্তী মৈনটঘাটের মাছের হাটে। তবে সপ্তাহের সাতদিনের মধ্যে শুক্র ও শনিবার সরকারি বন্ধ থাকায় পদ্মা নদীর কোল ঘেষে গড়ে ওঠা মৈনটঘাটের এই মাছের হাটে দোহার-নবাবগঞ্জ ছাড়াও শ্রীনগর কেরানীগঞ্জ ও ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অনেক মানুষ আসে দৈনন্দিক জীবনে খাদ্যের তালিকায় থাকা মাছ কিনতে।

আপনার মতামত দিন