মৃত্যুর আগে মহিমের ফেইসবুক স্ট্যাটাস

1113

‘মানি ব্যাগে ১৫ হাজার টাকা, কিন্তু ঈদের কোনও প্ল্যান নাই এইবারও। ঘুম ছাড়া কোনও ওয়ে নাই’,নিজের ফেসবুক ওয়ালে গত ২৫ জুন ৬টা ৩৪ মিনিটে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন ইশতিয়াক আহমেদ মহিম। সেই মহিম আসলেই ঘুমের দেশে চলে গেলেন ঈদের দ্বিতীয় দিনে।

ঢাকার দোহার উপজেলায় অবস্থিত মৈনট ঘাটে পদ্মা নদীতে ডুবে যাওয়া তিন নিহত শিক্ষার্থীর একজন এই ইশতিয়াক আহমেদ মহিম। বুধবার (২৮ জুন) সকাল আটটার দিকে মহিমের মৃতদেহ উদ্ধার করে উদ্ধারকারী দল। মৃতদেহটি ঝাউকান্দা এলাকায় নদীর তীরে ভেসে উঠেছিল। নিহত ইশতিয়াক আহমেদ মহিম ছিল  ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিবিএ প্রথম বর্ষের ছাত্র।

মহিমের সঙ্গে নিখোঁজ হওয়া অন্য দুজন হলেন মণিপুর কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. সালমান বিন জামাল ও মিরপুর কমার্স কলেজের সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সুপ্রিয় ঢালী। তাদের বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার ঈদের পরদিন মহিমসহ এই তিনজন ঢাকা থেকে দোহারে বেড়াতে যান। মৈনট ঘাট থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে ঝাউকান্দা এলাকায় বিকাল পাঁচটার দিকে তারা গোসল করতে নদীতে নামেন। নদীর তীব্র স্রোতে পাঁচ জনের মধ্যে মহিমসহ তিন জন তলিয়ে যান। মহিমের মৃতদেহ উদ্ধার হলেও জামাল ও সুপ্রিয় এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। আর বুয়েটের শিক্ষার্থী ফাহিম ও অপূর্বকে ঘটনার পরপরই এলাকাবাসী জীবিত উদ্ধার করে।

অন্য খবর  সবাইকে মিলেই দোহার-নবাবগঞ্জকে বাংলাদেশের মডেল পরিনত করতে হবেঃ সালমান এফ রহমান

আজ  (বুধবার) সকালে মহিমের মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ার সংবাদ গণমাধ্যমে দেখে তার ফেসবুক ওয়ালে বন্ধুরা স্মৃতিচারণ করেছেন। এমন একটি হাসিখুশী তরুণের মৃত্যু তারা মেনে নিতে পারছেন না।

মহিমের স্কুলবন্ধু জিহাদ হাওলাদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ওর মতো হাসিখুশী ছেলে আমরা কেউ না, যেকোনও পরিস্থিতিতে সে হাসতে পারতো। আমাদের কারও কখনও মন খারাপ হলে আমরা ওর কাছে আসতাম, মন ভালো করার জন্য। অথচ আজ আমরা ওর জন্যই কাঁদছি, সেটা দেখার জন্যও মহিম আমাদের মধ্যে থাকলো না।’

চঞ্চল আর উচ্ছ্বল মহিম সবার সঙ্গে মুহূর্তের মধ্যেই মিশে যেতে পারতো জানিয়ে জিহাদ বলেন, ‘সবার সঙ্গে মিশে যাবার এক অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল ওর। আমাদের বন্ধুদের মধ্যে সবচেয়ে মিশুক ছেলেটিই আজ নাই হয়ে গেল।’

এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে মহিম ছিল বড়। ওর ছোট বোনটি কাল রাত থেকে ভাইকে খুঁজছে জানিয়ে জিহাদ বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে সবসময় ঝগড়া করা বোনটি কাল রাত থেকে বলছে, ভাইয়ার সঙ্গে আর ঝগড়া করবো না, ভাইয়াকে এনে দাও।’

ফেসবুকে নিজের ঘুমের কথা বলে দেওয়া শেষ স্ট্যাটাসটিতে ইতোমধ্যেই ভরে গেছে কমেন্টের পর কমেন্টে। সায়মা জাহান নামের একজন লিখেছেন, ‘তোমার ঘুম আর ভাঙলো না!’

অন্য খবর  দোহারে নারী মাদক ব্যবসায়ীর কারাদন্ড

তানভীর রহিম নামের এক বন্ধু সেখানে লিখেছেন, ‘সারাজীবনের জন্য ঘুমাইয়া গেলিরে।’ মৃত্যুঞ্জয়ীতা অনন্যা নামের আরেক বন্ধু লিখেছেন, ‘বিশ্বাসই করতে পারছি না- তুই নাই। তোকে অনেক জ্বালাইসি, মাফ করে দিস দোস্ত। একদিন আমরাও তোর কাছে আসছি।’

শারমীন মালিহা নামের আরেক বন্ধু লিখেছেন, ‘এতই ঘুমানোর ইচ্ছা ছিল তোমার, তাই বলে এভাবে ঘুমাতে চলে যেতে হবে? তোমার কি এভাবে চলে যাওয়াটা ঠিক হয়েছে? সবাইকে কাঁদিয়ে কেন না ফেরার দেশে চলে গেছো? ’

মহিমের বন্ধু মারজিয়া কাশফিন বলেন, ‘গত ১৩ এপ্রিল খোলা ছাদের কার্নিশে দাঁড়িয়ে ফেসবুকে সেলফি পোস্ট করে মহিম লিখেছিল, ‘ওয়ান স্টেপ বিহাইন্ড ফ্রম ডেথ (One Step Behind From Death)। সেই মহিম যে এভাবে চলে গেল, ভাবতেই পারছি না।’

মহিমের মৃতদেহ ইতোমধ্যেই ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে জানিয়েছেন বন্ধু জিহাদ। বাদ আসর মিরপুরে বাসার পাশেই মহিমের জানাজা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মহিমকে মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

 

আপনার মতামত দিন