দোহার উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের কার্তিকপুর সংলগ্ন মৈনট আজ ইন্টারনেটের কল্যানে ঢাকার অন্যতম এক পর্যটন স্পটে পরিনত হয়েছে। এপারে ঢাকা ওপারে ফরিদপুর জেলাকে সংযুক্ত করা পদ্মা তীরবর্তী এই স্থানটি আজ ঢাকার অন্যতম জনপ্রিয় একটি বিনোদন স্পট। চরভদ্রাসন উপজেলা আর এপাড়ে ঢাকার দোহার উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা মৈনট। পদ্মা নদীই মূলত পৃথক করেছে এ দু’টি জেলাকে।
এক যুগ আগে দোহারের মৈনটঘাট থেকে চরভদ্রাসনের গোপালপুর ঘাটের মাধ্যমে যাত্রী পারাপার শুরু হলে ধীরে ধীরে মৈনটের নাম পরিচিতি পেতে থাকে। মৈনট ট্রলারঘাট দিয়ে ফরিদপুর জেলার দু’টি উপজেলার মানুষ পারাপার হয়ে থাকেন। তারপরও ভরা বর্ষায় এ পথে যাতায়াত কমে যায় অনেকাংশে। মৈনট ট্রলার ঘাট দিয়ে স্থানীয়রা বিকেলে বেড়াতে এলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে এটাকে অনেকে মিনি কক্সবাজার হিসেবে চিনেন। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার মানুষজন একটু বিনোদনের জন্য এখানে স্বস্তির নিস্বাস ফেলতে চলে আসেন এই মৈনটে। পদ্মা নদী বছরের বেশির ভাগ সময়ই উত্তাল থাকে। পদ্মার তলদেশ অসমতল ও উচুঁনিচু। পদ্মা নদীর এ বৈশিষ্ট্য জানা না থাকা সত্ত্বেও ঢাকার দর্শনার্থীরা মৈনটে পদ্মার পানিতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। অথচ এটি অনুমোদিত কোনো পর্যটন এলাকা নয়। সাঁতার জানা ও না জানা উভয় শ্রেণীর দর্শনার্থীদের জন্য মৈনট একটি মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। গত এক বছরে মৈনটের পদ্মায় পড়ে মারা গেছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ ১০ জন। স্থানীয় প্রশাসন নানা উদ্যোগ নিলেও তা মানছেন না অনেক পর্যটক।
গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ১৪ জন শিক্ষার্থী মৈনটে বেড়াতে আসেন। তারা কেউ সাঁতার জানতেন না। পানিতে নেমে গোসল করার সময় স্রোতের তোড়ে ভেসে যায় পাঁচ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে স্থানীয়রা দু’জনকে জীবিত উদ্ধার করলে আবরার তাজোয়ার, আহমেদ হাসান ও নির্ঝর এই তিনজনের লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে ১৫ সেপ্টেম্বর পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়া এলাকার দুই শিক্ষার্র্থী মিরাজ ও তালহা পানিতে তলিয়ে গেলে একদিন পর দু’জনের লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। এ বছরের ১০ ফেরুয়ারি মৈনটঘাটের অদূরে জেগে ওঠা বালুচরে ফুটবল খেলতে গিয়ে পানিতে ডুবে মারা যান প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান মিন্টু ও শাওন সরকার।
ঈদুল ফিতরের এক দিন পর মঙ্গলবার ঢাকার মিরপুর এলাকা থেকে পাঁচ শিক্ষার্থী ঘুরতে আসেন মৈনটে। দুপুরে ওই পাঁচ শিক্ষার্থী গোসল করতে পদ্মায় নামেন। কিন্তু সাঁতার না জানায় একপর্যায়ে স্রোতে ভেসে যান পাঁচ শিক্ষার্থী। স্থানীয়দের সহযোগিতায় অপূর্ব ও ফাহিমকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও সালমান বিন জামাল, ইশতিয়াক আহমেদ মহিন ও সুপ্রিয় ঢালী নিখোঁজ হন। পরের দিন বুধবার বেলা ১১টায় নৌবাহিনীর একটি দল ইশতিয়াক মহিনের লাশ উদ্ধার করে। তবে সাত দিনেও সন্ধান মেলেনি অন্য দু’জনের। ঘটনার পর থেকে নদীর পাড়ে অপেক্ষা করছেন নিখোঁজের স্বজনেরা। একের পর এক প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও পদ্মার পানিতে নামা থামেনি। এ বিষয়ে দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম আল আমিন বলেন, গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার পর থেকে কোনো দর্শনার্থী যাতে পানিতে নেমে গোসল করতে না পারেন এ জন্য মাইকিংসহ অন্যান্য সচেতনতামূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ সত্ত্বেও এক শ্রেণির মানুষ তা অমান্য করে পানিতে গোসল করতে গেলে এসব দূর্ঘটনা ঘটছে।