মুরাদ বাহিনীর তাণ্ডবে অতিষ্ঠ নয়নশ্রীবাসী

785
মুরাদ বাহিনী

নবাবগঞ্জ উপজেলার নয়নশ্রী ইউনিয়ন এক শান্তির জনপদ। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার উত্তরে ইছামতি নদী ও মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার সীমান্ত দিয়ে গড়ে উঠেছে এ এলাকা। মুসলিম, হিন্দু ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ এখানে সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করে আসছে। কিন্তু সম্প্রতি ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে এ জনপদ।

সরেজমিন এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মুরাদ বাহিনীর অত্যাচার ও তাণ্ডবে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। মুরাদ বাহিনীর মহড়ায় এলাকার সাধারণ মানুষ, ভোটার ও বিভিন্ন রাজনৈতক দল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের আতংকে দিন কাটছে। মুরাদের নেতৃত্বে একজন প্রার্থীর পক্ষে প্রতিনিয়তই মোটরসাইকেল মহড়া, প্রতিপক্ষের ওপর হামলা ও নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে। শনিবার দুপুরে দুটি দোকানে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।

বেলা ২টায় নয়নশ্রী ইউনিয়নের বাংলাবাজার এলাকায় ১৫-২০ জনের একটি বাহিনী নিয়ে মহড়ায় দেখা যায় মুরাদকে। মুরাদের নামে নবাবগঞ্জ থানা ও আদালতে একাধিক মামলা এবং প্রায় ১০-১২টি সাধারণ ডায়েরি রয়েছে। মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতন, জমি দখল থেকে এমন কোনো অপকর্ম নেইÑ যা এই বাহিনী করছে না।

উল্লেখ্য, গত জোট সরকারের আমলের শেষ দিকে নয়নশ্রী ইউনিয়নের তাশুল্যা বাংলাবাজার এলাকায় মোশারফ হোসেন ওরফে মুশা ও সেলিম নামে দুই সন্ত্রাসী এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। প্রকাশ্যে গুলিসহ হত্যা, ধর্ষণ করত এ বাহিনীর সদস্যরা। সংবাদ মাধ্যমে তাদের এসব অপকর্মের কাহিনী প্রকাশ পেলে প্রশাসনের টনক নড়ে। পরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় মুশা। নিখোঁজ হয় সেলিম। ফলে স্বস্তি ফিরে পায় এলাকাবাসী। কয়েক বছর ওই এলাকার মানুষের মধ্যে শান্তি বিরাজ করে। কিন্তু বিধিবাম, তাদের সেই সুখের দিন বেশি সময় স্থায়ী হা না। ২ বছর ধরে ঠিক একই কায়দায় শান্ত জনপদকে আবার অস্থির করে তুলছে এই মুরাদ বাহিনী। ভয়ে মুখ খুলছে না এলাকাবাসী।

অন্য খবর  নয়নশ্রীতে ছোট ভাইয়ের আঘাতে বড় ভাই নিহত

মুরাদ বাহিনীর কর্মকাণ্ড : ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে বিলপল্লী এলাকার বেবী হোসেনের একটি জমি দখল করে গাছ-পালা কেটে নেয় মুরাদ ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। তাকে প্রাণনাশের হুমকিও দেয়া হয়। এ বিষয়ে আদালতে মামলা করেন বেবী। মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য তাকে ভয়ভীতি দেখানো হয়। তিনি নবাবগঞ্জ থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরিও করেছেন। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় তিনি পুলিশের গ্রেফতার থেকে বারবারই রেহাই পেয়ে যাচ্ছেন।

মাদক মামলায় ফাঁসানোর হুমকি : ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে প্রভাব বিস্তারে বাধা দেয়ার কারণে আজাদ মোল্লাকে মাদক মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়। এ বিষয়ে প্রশাসনের সাহায্য নিলে সপরিবারে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেয়। নিরাপত্তা চেয়ে ওই ব্যক্তি নবাবগঞ্জ থানায় জিডি করেন।

এরকম শত শত অভিযোগ আছে মুরাদের বিরুদ্ধে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে মাদক ব্যবসায় সহযোগিতা না করায় সোলায়মান নামক এক ব্যবসায়ীর দোকান বন্ধ করে দিয়ে খুন করার হুমকি দেয়। তিনিও থানায় ডায়েরি করেন। পুলিশ তাকে যতবারই আটক করতে যায় প্রভাবশালী ওই নেতার আশীর্বাদে রক্ষা পেয়ে যায়। সম্প্রতি পুলিশ তাকে ইয়াবা ব্যবসার অভিযোগে আটক করে থানায় আনলেও পরে তাকে ছেড়ে দেয়।

অন্য খবর  দোহারের হাসান মতিউর রহমানের গান ষষ্ঠ শ্রেণির পাঠ্যসূচিতে

বাংলাবাজার, তাশুল্যা, বিলপল্লী, খেজুরবাগ, ঘোষপাড়া, চর তুইতাল, বিপ্রতাশুল্যাসহ প্রায় ৮-১০টি গ্রামের মানুষের কাছে আতংকের নাম মুরাদ। নবাবগঞ্জ থানা পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মুরাদকে গ্রেফতার করতে গেলে নানামুখী তদবির আসে। এ নিয়ে আমরাও বেকায়দায় আছি। নবাবগঞ্জ থানার ওসি সায়েদুর রহমান বলেন, মুরাদের বিষয়ে কিছু অভিযোগ আমরাও পেয়েছি। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

আপনার মতামত দিন