মহরম মাস নিয়ে মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র দোহারের সন্তান সাদীর কলাম

219

আশুরার গুরুত্ব, করণীয় ও বর্জনীয়

মোঃ দেলোয়ার হোসাইন সাদী, মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত, দোহারের কৃতি সন্তানঃ মহররম অর্থ সম্মানিত। এ নামের মাঝেই ফুটে উঠেছে এ মাসটির অবস্থান। আর এ মাসের দশম দিনকে আশুরার দিন বলা হয়। নিম্নে কুরআন ও হাদীসের আলোকে এ দিনটির গুরুত্ব, করণীয় ও বর্জনীয় তুলে ধরা হলো।

আশুরা সম্মানিত মাসসমূহের একটি দিন
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِنْدَ اللَّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ اللَّهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ فَلَا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنْفُسَكُمْ.
অর্থ- আল্লাহ তা‘আলার বিধান মতে মাসের সংখ্যা মোট বারোটি, আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টির দিন হতেই। এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং এ মাসসমূহে তোমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করো না। (সূরা তওবা, আয়াত ৩৬)
এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা চারটি মাসকে ‘আশহুরে হরুম’ বা সম্মানিত মাস বলে অভিহিত করেছেন। মর্রম মাস এ চারটি মাসের অন্যতম। আর এ মহররম মাসের দশম দিনকে আশুরার দিন বলা হয়।

আশুরা ‘শাহরুল্লাহ’ তথা আল্লাহর মাসের একটি দিন
আগেই বলা হয়েছে, মহররম মাসের দশম দিনকে আশুরার দিন বলা হয়। আর একাধিক হাদীসে মহররমকে ‘শাহরুল্লাহ’ তথা আল্লাহর মাস বলা হয়েছে। হযরত আবু হুরায়রা রাযি. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ شَهْرِ رَمَضَانَ شَهْرُ اللهِ الْمُحَرَّمُ.
রমযানের পর সর্বশ্রেষ্ঠ রোযা হলো ‘আল্লাহর মাস’ মর্হরমের রোযা। (জামে তিরমিযী, হাদীস ৭৪০)

আশুরার দিনে মূসা আ. শোকরানা রোযা রাখতেন
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. বলেন,
أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدِمَ الْمَدِينَةَ فَوَجَدَ الْيَهُودَ صِيَامًا، يَوْمَ عَاشُورَاءَ، فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا هَذَا الْيَوْمُ الَّذِي تَصُومُونَهُ؟ فَقَالُوا: هَذَا يَوْمٌ عَظِيمٌ، أَنْجَى اللهُ فِيهِ مُوسَى وَقَوْمَهُ، وَغَرَّقَ فِرْعَوْنَ وَقَوْمَهُ، فَصَامَهُ مُوسَى شُكْرًا، فَنَحْنُ نَصُومُهُ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: فَنَحْنُ أَحَقُّ وَأَوْلَى بِمُوسَى مِنْكُمْ فَصَامَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় এসে দেখতে পেলেন, ইহুদিরা আশুরার দিনে রোযা রাখে। তিনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, কী ব্যাপার তোমরা এ দিনে রোযা রাখছ যে? তারা বলল, এটি একটি মর্যাদাপূর্ণ দিন। এ দিনে আল্লাহ তা‘আলা মূসা আ. ও তাঁর কওমকে ফেরাউনের কবল থেকে রক্ষা করেন আর ফেরাউন ও তার কওমকে সমুদ্রে ডুবিয়ে মারেন। তাই শোকর আদায় করার জন্য মূসা আ. এ দিনে রোযা রেখেছেন। আমরাও এ দিনে রোযা রাখি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মূসা আ.এর বিষয়ে আমরা তোমাদের চেয়ে বেশি হকদার। এরপর তিনি রোযা রাখলেন এবং অন্যদেরকেও রোযা রাখতে আদেশ করলেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৩০)
উক্ত হাদীস হতে বোঝা যায়, এ দিনে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বিশেষ কুদরতের প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন। সমুদ্রের মধ্যে পথ করে দিয়ে মূসা আ. ও তাঁর অনুসারীদেরকে রক্ষা করেছেনে। আর সেই পথ পারি দিতে গিয়ে ফেরাউন ও তার কওম ডুবে মরেছে। তাই শোকর আদায় করার জন্য মূসা আ. এ দিনে রোযা পালন করতেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও গুরুত্বের সঙ্গে রোযা রাখতেন
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. বলেন,
مَا رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَحَرَّى صِيَامَ يَوْمٍ فَضَّلَهُ عَلَى غَيْرِهِ إِلَّا هَذَا اليَوْمَ، يَوْمَ عَاشُورَاءَ، وَهَذَا الشَّهْرَ يَعْنِي شَهْرَ رَمَضَانَ.
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আশুরার দিন এবং রমযান মাসে যেরূপ গুরুত্বের সঙ্গে রোযা রাখতে দেখেছি, সেরূপ অন্য কখনো দেখিনি। (সহীহ বুখারী, হাদীস ২০০৬)
এ হাদীস হতে বোঝার যায়, আশুরার দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুবই গুরুত্বের সঙ্গে রোযা পালন করতেন। এমনকি জাহেলি যুগেও তিনি এ দিনের রোযার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। হযরত আয়েশা রাযি. বলেন,
كَانَ يَوْمُ عَاشُورَاءَ تَصُومُهُ قُرَيْشٌ فِي الجَاهِلِيَّةِ، وَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُومُهُ، فَلَمَّا قَدِمَ المَدِينَةَ صَامَهُ، وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ، فَلَمَّا فُرِضَ رَمَضَانُ تَرَكَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ، فَمَنْ شَاءَ صَامَهُ، وَمَنْ شَاءَ تَرَكَهُ.
জাহেলি যুগে কুরায়শরা আশুরার দিনে রোযা রাখত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও রোযা রাখতেন। মদীনায় আসার পরেও তিনি এ দিনে রোযা রাখেন এবং অন্যদেরকে রোযা রাখতে আদেশ করেন। এরপরে যখন রমযানের রোযা ফরয হলো, তখন আশুরার রোযা (ফরয হিসেবে) রাখা ছেড়ে দেন। এরপর যে রোযা রাখার ইচ্ছা করত, সে রোযা রাখত আর যে রোযা না রাখার ইচ্ছা করত, সে রোযা রাখত না। (সহীহ বুখারী, হাদীস ২০০২)

এ দিনের রোযার বদৌলতে বিগত এক বছরের গুনাহ মাফ হয়
সাহাবী হযরত আবু কাতাদাহ রাযি. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ، أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ، وَالسَّنَةَ الَّتِي بَعْدَهُ، وَصِيَامُ يَوْمِ عَاشُورَاءَ، أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ.
আমি আল্লাহ তা‘আলার নিকট আশাবাদি যে, আরাফার দিনের রোযার ওসিলায় তিনি পূর্ববর্তী এক বছর ও পরবর্তী এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। আমি আল্লাহ তা‘আলার নিকট আরো আশাবাদি যে, আশুরার দিনের রোযার ওসিলায় তিনি পূর্ববর্তী এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৬২)

অন্য খবর  আব্দুল মান্নানের বাসায় পুলিশি তল্লাশির অভিযোগ

উক্ত হাদীস হতে বোঝা যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশা করতেন, আশুরার দিনের রোযার বদৌলতে আল্লাহ তা‘আলা বিগত এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। তাঁর উম্মত হিসেবে আমরাও আল্লাহ তা‘আলার নিকট এ আশা করতে পারি।

নয় বা এগারো তারিখেও রোযা রাখা উচিত
সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. বলেন,
حِينَ صَامَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّهُ يَوْمٌ تُعَظِّمُهُ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: فَإِذَا كَانَ الْعَامُ الْمُقْبِلُ إِنْ شَاءَ اللهُ صُمْنَا الْيَوْمَ التَّاسِعَ قَالَ: فَلَمْ يَأْتِ الْعَامُ الْمُقْبِلُ، حَتَّى تُوُفِّيَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নিজে আশুরার দিনে রোযা রাখা শুরু করলেন এবং অন্যদেরকে রোযা রাখতে আদেশ করলেন, তখন সাহাবায়ে কেরাম আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এই দিনটিকে তো ইহুদি-খ্রিস্টানরা সম্মান করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইনশাআল্লাহ, আগামী বছর নয় তারিখেও রোযা রাখব। ইবনে আব্বাস রাযি. বলেন, আগামী বছর আসার আগেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তিকাল হয়ে যায়। (সহীহ মুসলিম, হাদিস ১১৩৪)
উক্ত হাদীস হতে বোঝা যায়, ইহুদিদের সাথে সাদৃশ্য হওয়া থেকে বাঁচার জন্য নয় তারিখেও রোযা রাখা উচিত। যদি কোনো কারণে নয় তারিখে রোযা রাখা সম্ভব না হয়, তাহলে এগারো তারিখে অবশ্যই রোযা রাখবে।
অপর এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
صُومُوا يَوْمَ عَاشُورَاءَ، وَخَالِفُوا فِيهِ الْيَهُودَ، صُومُوا قَبْلَهُ يَوْمًا، أَوْ بَعْدَهُ يَوْمًا. (رواه الإمام أحمد في مسنده برقم ২১৫৪، وفي التعليق عليه: إسناده ضعيف، قلت: وله شواهد عدة قوية.)
তেমরা আশুরার দিন রোযা রাখবে। আর রোযা রাখার ক্ষেত্রে ইহুদিদের বিপরীত করবে এভাবে যে, তার আগে একদিন কিংবা তার পরে একদিন রোযা রাখবে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২১৫৪)

তওবা ও ইস্তিগফারের সুবর্ণ সুযোগ
হযরত আলী রাযি.-কে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছিল, রমযানের পরে আর কোনো মাস আছে, যাতে আপনি আমাকে রোযা রাখতে বলেন? উত্তরে তিনি বললেন, ঠিক এই প্রশ্ন এক সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে করেছিলেন, তখন আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। তিনি উত্তরে বলেছিলেন,
إِنْ كُنْتَ صَائِمًا بَعْدَ شَهْرِ رَمَضَانَ، فَصُمُ الْمُحَرَّمَ، فَإِنَّهُ شَهْرُ اللهِ، فِيهِ يَوْمٌ تَابَ فِيهِ عَلَى قَوْمٍ، وَيَتُوبُ فِيهِ عَلَى قَوْمٍ آخَرِينَ. (رواه الإمام الترمذي في جامعه برقم ৭৪১، في باب بَابُ مَا جَاءَ فِي صَوْمِ الْمُحَرَّمِ، وقال: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ.)
রমযানের পরে যদি তুমি রোযা রাখতেই চাও, তবে মহররম মাসে রাখো। কেননা এটা আল্লাহ তা‘আলার মাস। এ মাসে এমন একটি দিন আছে, যে দিনে আল্লাহ তা‘আলা একটি জাতির তওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অন্যান্য জাতির তওবা কবুল করবেন। (জামে তিরমিযী, হাদীস ৭৪১)
উক্ত হাদীস থেকে বোঝা যায়, আশুরার দিনে আল্লাহ তা‘আলা পূর্ববর্তী উম্মতের তওবা কবুল করেছেন এবং এ উম্মতের তওবা কবুল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাই এ দিনে আল্লাহ তা‘আলার দরবারে বেশি বেশি ইস্তিগফার পাঠ করা এবং খালেস দিলে তওবা করা প্রতিটি
মুমিনের কর্তব্য।

আশুরা সংশ্লিষ্ট বানোয়াট বর্ণনা
আশুরার দিনটির গুরুত্ব প্রমাণ হওয়ার জন্য উপরোল্লিখিত আয়াত ও হাদীসসমূহই যথেষ্ট। কিন্তু বড়ই দুঃখের বিষয়, অনেকেই এ দিনের মাহাত্ম্য ও গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে আবেগের বশে জাল হাদীস ও অনেক ভিত্তিহীন কথাবার্তার আশ্রয় নিয়ে থাকেন। এরকম কিছু ভিত্তিহীন বর্ণনা নিচে উল্লেখ করা হলো,
আশুরার দিন আল্লাহ তা‘আলা হযরত ঈদরীস আ.-কে আসমানে উঠিয়ে নিয়েছিলেন। এ দিনেই তিনি হযরত ইবরাহীম আ.-কে অগ্নিকু- থেকে রক্ষা করেছেন, মূসা আ.-কে তাওরাত দিয়েছেন, ঈসমাঈল আ.-এর জন্য আসমান থেকে দুম্বা পাঠিয়েছন, ইউসুফ আ.-কে জেলখানা থেকে মুক্তি দিয়েছেন। এ দিনেই ইয়াকূব আ. তাঁর দৃষ্টিশক্তি ফিরে পান। এ দিনেই আইয়ূব আ.-কে আরোগ্য দান করা হয়, ইউনুস আ.-কে মাছের পেট থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। এ দিনেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পূর্বাপর সব গুনাহ ক্ষমা করা হয়। এ দিনেই ইউনুস আ.-এর কওমের তওবা কবুল করা হয়, ঈসা আ.-কে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয়, সুলায়মান আ.-কে রাজত্ব দান করা হয়। এ দিনেই আসমান-জমিন, নদী-নালা, পাহাড়-পর্বত ও সমুদ্ররাজি সৃষ্টি করা হয়। এ দিনেই আল্লাহ তা‘আলা লওহে মাহফূয ও কলম সৃষ্টি করেছেন। এ দিনেই আল্লাহ তা‘আলা আদম আ. ও জিবরাঈল আ.-কে সৃষ্টি করেছেন। এ দিনেই ইবরাহীম আ. ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়াতে জন্মগ্রহণ করেছেন। এ দিনেই দাউদ আ.-এর গুনাহ ক্ষমা করা হয়, এ দিনেই আল্লাহ তা‘আলা আরশে সমাসীন হন।

অন্য খবর  নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় আহতদের পাশে সালমান এফ রহমান

আশুরার আমল সম্পর্কে বানোয়াট কতগুলো বর্ণনা
নিচে আরো কয়েকটি ভিত্তিহীন বর্ণনা উল্লেখ করা হলো,
مَنْ صَامَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ كُتِبَتْ لَهُ عِبَادَةُ سِتِّينَ سَنَةً بِصِيَامِهَا وَقِيَامِهَا.
যে ব্যক্তি আশুরার তারিখে রোযা রাখে, তার আমলনামায় ষাট বছর রোযা রাখার এবং ষাট বছর রাত জেগে নামায পড়ার সওয়াব লিখে দেওয়া হয়।
مَنْ صَامَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ أُعْطِي ثَوَابَ عَشَرَةِ آلَافِ مَلَكٍ.
যে ব্যক্তি আশুরার তারিখে রোযা রাখে, তাকে দশ হাজার ফেরেশতার সওয়াব দেওয়া হবে।
مَنْ صَامَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ أُعْطِي ثَوَابَ أَلْفِ حَاجٍّ وَمُعْتَمِرٍ.
যে ব্যক্তি আশুরার তারিখে রোযা রাখে, তাকে এক হাজার হাজী ও উমরাকারীর সওয়াব দেওয়া হবে।
مَنْ صَامَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ أُعْطِي ثَوَابَ عَشَرَةِ آلَافِ شَهِيدٍ.
যে ব্যক্তি আশুরার তারিখে রোযা রাখে, তাকে দশ হাজার শহীদের সওয়াব দেওয়া হবে।
مَنْ صَامَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ كُتِبَ لَهُ أَجْرُ سَبْعِ سَمَاوَاتٍ.
যে ব্যক্তি আশুরার তারিখে রোযা রাখে, তার আমলনামায় সাত আসমানের সওয়াব লিখে দেওয়া হবে।
مَنْ أَفْطَرَ عِنْدَهُ مُؤْمِنٌ فِي يَوْمِ عَاشُورَاءَ فَكَأَنَّمَا أَفْطَرَ عِنْدَهُ جَمِيعُ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ.
আশুরার তারিখে যার নিকটে কোনো রোযাদার মুমিন ইফতার করল, যেন উম্মতে মুহাম্মাদীর সকলে তার নিকট ইফতার করল।
مَنْ أَشْبَعَ جَائِعًا فِي يَوْمِ عَاشُورَاءَ فَكَأَنَّمَا أَطْعَمَ جَمِيعَ فُقَرَاءِ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَشْبَعَ بُطُونَهُمْ.
যে ব্যক্তি আশুরার তারিখে কোনো ক্ষুধার্তকে পরিতৃপ্ত সহকারে খাবার খাওয়াবে, সে যেন উম্মতে মুহাম্মাদীর সকল ফকীরকে আহার করালো এবং তাদের উদর পূর্ত করে দিল।
مَنْ مَسَحَ يَدَهُ عَلَى رَأْسِ يَتِيمٍ فِي يَوْمِ عَاشُورَاءَ رُفِعَتْ لَهُ بِكُلِّ شَعْرَةٍ عَلَى رَأْسِهِ دَرَجَةٌ فِي الْجَنَّةِ.
যে ব্যক্তি আশুরার তারিখে কোনো এতিমের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল, মাথার প্রতিটি চুলের বদৌলতে জান্নাতে তার মর্যাদা বুলন্দ হবে।
বিভিন্ন পুস্তিকা ও পত্র-পত্রিকায় এان সব কথা উল্লেখ করা হয়ে থাকে এবং বিভিন্ন ওয়ায-মাহফিলে এগুলো বলা হয়ে থাকে। অথচ এগুলোর কোনোটাই গ্রহণযোগ্য সূত্র দ্বারা প্রমাণিত নয়। এগুলো বিশ্বাস করা জায়েয নয়। ওয়াযে বা বক্তৃতায়, বলায় বা লেখায় এগুলো উল্লেখ করাও ঠিক নয়।
ইমাম বায়হাকী রহ. ‘ফাযায়েলুল আওকাত’ গ্রন্থে একটি জাল বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। উক্ত কথাগুলো সেই জাল বর্ণনারই অংশবিশেষ। ইমাম বায়হাকী রহ. উক্ত জাল বর্ণনাটি উল্লেখ করার পর তাঁর শায়খের বরাত দিয়ে বলেছেন,
هَذَا حَدِيثٌ مُنْكَرٌ، وَإِسْنَادُهُ ضَعِيفٌ بِمَرَّةٍ وَأَنَا أَبْرَأُ إِلَى اللَّهِ مِنْ عُهْدَتِهِ، وَفِي مَتْنِهِ مَا لَا يَسْتَقِيمُ، وَهُوَ مَا رُوِيَ فِيهِ مِنْ خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرَضِينَ وَالْجِبَالِ كُلِّهَا فِي يَوْمِ عَاشُورَاءَ، وَاللَّهُ تَعَالَى يَقُولُ: {اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ} وَمِنَ الْمُحَالِ أَنْ تَكُونَ السِّنَّةُ كُلُّهَا فِي يَوْمِ عَاشُورَاءَ، فَدَلَّ ذَلِكَ عَلَى ضعْفِ هَذَا الْخَبَرِ، وَاللَّهُ أَعْلَمُ.

(বিস্তারিত জানতে দেখুন, আলআসরারুল মারফুআহ ২৯৪-৩০০; আলমানারুল মুনীফ ৪৭-৫২; তানযীহুশ শরীয়াহ ২/১৪৯-১৫১; এসব হাদীস নয় ২/১১৮-১২৫)

আশুরায় বর্জনীয় কতগুলো বিষয়
আশুরাকে কেন্দ্র করে সমাজে নানান কুপ্রথা ও বিদআত সৃষ্টি হয়েরছ। কিছু কিছু কাজ এমনও করা হয়, যেগুলো শিরক পরযায়ের। এ সকল কুপ্রথার নেপথ্যে রয়েছে শিয়াসম্প্রদায়। তাদের দৃষ্টিতে আশুরার গুরুত্ব কেবল কারবালার ঘটনা এবং শাহাদাতে হুসায়নকেই কেন্দ্র করে। এ দিকে লক্ষ করে তারা তাজিয়া, মরসিয়া, হায় হুসায়ন বলে আহাজারী, বুক চাপড়ানো, শোক পালন, বিবাহ বা অন্যান্য অনষ্ঠান হতে বিরত থাকা, এ দিনকে অশুভ মনে করা, শরবত পান করানো, খিচুরি পাক করে বিতরণ ইত্যাদি প্রথা চালু করেছে। এদের সাথে তাল মিলিয়ে সমাজের মূর্খ ও বিদআতী লোকেরাও এসব ইসলামবিরোধী বিষয়কে দ্বীন ও শরীয়ত হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে। যা থেকে বেঁচে থাকা সকল মুসলিমের জন্য আবশ্যক।

                                               

আপনার মতামত দিন