পদ্মার অব্যাহত ভাঙনে আতংকে মেঘুলা ও নারিশা’র মানুষ দিশেহারা

366

আসাদ সবুজ৩, নিউজ৩৯.নেট ♦ দোহারে পদ্মার অব্যাহত ভাঙনে আতংকে মেঘুলা ও নারিশা’র মানুষ দিশেহারা। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে দোহারের নারিশা পশ্চিমচর, রানীপুর, অরঙ্গবাদ এলাকায় পদ্মার পাড় ভাঙন মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করে চলেছে। গত এক মাসে পাঁচ শতাধিক বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনকবলিত অসহায় মানুষ খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সরকারি অনুদান এতই সামান্য যে, তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

পদ্মা ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়া হবে মর্মে সরকার বারবার প্রতিশ্র“তি দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। দোহার ভৌগোলিক মানচিত্র ক্রমেই ছোট করে চলেছে রাক্ষুসী পদ্মা। গত বছর বাড়িঘর ভেঙে অসহায় হয়ে পড়ে সহস্রাধিক মানুষ। অনেকেই ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি হাড়িয়ে নিঃস্ব হয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করছে।

সরেজমিন দেখা যায়, দোহারের নারিশা পশ্চিমচর, রানীপুর, মধুরচর এলাকাজুড়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক নদী ভাঙন। গত এক মাসে এসব এলাকার অন্তত পাঁচ শতাধিক বাড়ি, বিস্তীর্ণ ফসলি জমি, রাস্তাঘাট, কবরস্থান, দোকানপাটসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা চলে গেছে নদীগর্ভে। যার সঙ্গেই দেখা হয়েছে, দেখা গেছে তার রোদে পোড়া, অনাহারী শীর্ণ মুখ। যেখানেই চোখ গেছে, কেবলই ভাঙন আর ভাঙন। ভিটে নেই, শুধুই ধ্বংসস্তূপ। আর এমন চিত্র প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ফিরে ফিরে এলেও ভাঙনরোধে নেই কোনো কার্যকরী উদ্যোগ।

নারিশা এলাকার বাসিন্দারা বলেন, গত কয়েকদিন ধরে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় বাঁশ ও ছন দিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে আমরা ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু উত্তাল ঢেউয়ে সব ভেঙে গেছে। এই এলাকার মানুষের যে দুর্দশা তা ভাষায় প্রকাশ করার নয়। সরকার জরুরি কোনো পদক্ষেপ না নিলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।

অন্য খবর  লটাখোলা ব্রীজ ভেঙ্গে পড়লো

দোহারের বিলাসপুর, বাহ্রা, ধোয়াইর পানকুন্ডু, অরঙ্গবাদ ও নবাবগঞ্জ এলাকার জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বেশিরভাগ গ্রাম পদ্মা ভাঙনকবলিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। যখনই বর্ষ পরিক্রমায় ফিরে আসে বর্ষা, নদীপাড়ের লোকজন বুকফাটা কান্নায় ভেঙে পড়ে। শুধু বলে কবে, কখন এর সমাধান হবে। দোহারের লাখো মানুষের একটাই দাবি : পদ্মার আগ্রাসন থেকে মুক্তি চাই।

নারিশা পশ্চিমচর এলাকার বাসিন্দা জয়নব বিবি ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, পদ্মাপাড়ের দুঃখীজনদের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে নির্বাচনের সময় অনেকেই ভোট আদায়ের কৌশলে সুন্দর সুন্দর প্রতিশ্র“তি দেয়। ভাঙন শুরু হলে পাঁচ-দশ কেজি চাল বিতরণ করে। এভাবেই যুগের যুগের পর যুগ পার করে দিচ্ছেন এমপি-মন্ত্রী ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এমন চিত্র দেখতে দেখতে পদ্মাপাড়ের মানুষ চরম ক্ষুব্ধ। পাঁচ-দশ কেজি নয়। পদ্মাপাড়ের মানুষের প্রত্যাশা- ভাঙনরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা। অন্যদিকে, গত ৭ দিনে ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় বাহ্রা ঘাটবাজার ও ধোয়াইরবাজার ভাঙনের কবলে পড়েছে। দোকানিরা তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নিতে শুরু করেছেন।

ভাঙনকবলিত পরিবারগুলো অন্যের জমিতে কেউবা আবার মসজিদে, কেউবা আবার মন্দিরে, আবার কেউ কেউ স্কুলে ঘর তুলে থাকছে। যাদের সামর্থ্য নেই তারা রাস্তার ওপর ঝুপড়ি তুলে গবাদি পশুর সঙ্গে বসবাস করছে।অরঙ্গবাদ এলাকার পদ্মার পাড়ে দাঁড়ালেই চোখ আটকে যায়। এ এলাকায় দুই যুগ আগেও প্রায় চার হাজার পরিবারের বাস ছিল। এখন ‘বিরাণ প্রান্তর’ বললেই চলে। অনেকেই নদীর দিকে আঙুল তুলে দেখাতে পারেন ওইখানে ছিল অমুকের বাড়ি, তমুকের বাড়ি, জমি আরও কত কি। ওসব এখন কেবলই স্মৃতি।

অন্য খবর  দোহারে অন্তরা হুদার শীতবস্ত্র বিতরন

এখনও পরিত্যক্ত ভিটের ওপর দুমড়েমুচড়ে পড়ে থাকা বসতবাড়ির কিছু কংকাল। পাকা বাড়িগুলোর ইট, লোহালক্কড় বেরিয়ে আছে। কিছু নলকূপ চোখে পড়ল, ভাঙনে উপড়ে আছে। হয়তো এগুলো কয়েকদিন পরে চলে যাবে নদীর পেটে। আর এমন আতংকে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকা পাকা-আধাপাকা ঘর ভেঙে নিয়ে অন্যত্র ছুটছেন অনেকেই।

এ ব্যাপারে দোহারের নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল করিম ভুইয়া বলেন, সরকারিভাবে স্থানীয় এমপি ত্রাণের ব্যবস্থা করেছেন। আরও সাহায্য আনার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। নদী ভাঙন প্রতিরোধ করতে মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় এমপি অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বলেন, পদ্মার ভাঙন ঠেকাতে আগের মন্ত্রী-এমপিরা কিছু করে নি। সরকারিভাবে ৫৫ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৪ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়া দুস্থদের তালিকা করে খাস জমি বণ্টনের ব্যবস্থা করা হবে। ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

আপনার মতামত দিন