নেত্রীর নির্দেশনা মেনে ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া এবং মাঠ জরিপে এগিয়ে থাকা আওয়ামী লীগের ৪০ জন সাবেক সংসদ সদস্যের (এমপি) ভাগ্য খুলছে। ইতিমধ্যে দলীয় হাইকমান্ডের কাছে তাদের ‘আমলনামা’ জমা পড়েছে। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাও তাদের মনোনয়ন দেয়ার বিষয়ে ‘ইতিবাচক’।দলের একাধিক নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে তারা কেউ নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। কারণ রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই।আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, রাজনীতির নানা হিসেব-নিকাশে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমন ৫০ জন নেতাকে মনোনয়ন দেয়া সম্ভব হয়নি।(দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির বর্জন, মহাজোটের শরীক জাতীয় পার্টিকে বিরোধী দল বানানোসহ নানা রাজনৈতিক হিসেব নিকাশে মনোনয়ন নিশ্চিত এমন ৫০ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে এরমধ্যে প্রায় ৪০ জনের ভাগ্য খুলবে। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের কাছে তাদের আমলনামা জমা হয়েছে। দলীয় প্রধানও তাদের মনোনয়ন দেয়ার বিষয়ে ‘ইতিবাচক’।
তবে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে চায় আওয়ামী লীগ। এজন্য সব আসনে প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন করে সংসদ গঠন হয় এমন সংখ্যক সদস্যের জয় নিশ্চিত করতে চায় তারা। আর এজন্য আগামী সংসদ নির্বাচনে শরীকদের কিছু ছাড় দিয়ে বাকি সব আসনে দলটি প্রার্থী দেবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো আভাস দিয়েছে।ক্ষমতাসীন প্রভাবশালী একটি মহল বলছে, জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য শরিক ও দলকে কিছু আসন গত নির্বাচনে ছাড় দেয়া হয়েছিল। আগামী নির্বাচনে এমনটি হবে না। সব জায়গায় বাছাই করে জনপ্রিয় প্রার্থী দেয়া হবে। সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তৃতীয়বারের মত সরকার গঠন করাই এখন আওয়ামী লীগের লক্ষ্য।আওয়ামী লীগের এমন রোডম্যাপ অনুযায়ী, ভাগ্য খুলছে অন্তত সাবেক ৪০ এমপির। এরা ২০০৯ সালে প্রতিযোগিতাপূর্ণ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং ২০১৪ সালের ‘সমঝোতা’র নির্বাচনে বাদ পড়েছিলেন। ওই নির্বাচনে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে পাস করেছেন পরে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন এমন কিছু সদস্যও ওই তালিকায় রয়েছেন।
এসব এমপি হলেন- নীলফামারী-৪ আসনে কর্নেল (অব.) এএ মারুফ সাকলান, কুড়িগ্রাম-২ মো. জাফর আলী, কুড়িগ্রাম-৪ জাকির হোসেন, নওগাঁ-৩ আকরাম হোসেন চৌধুরী বা ছলিম উদ্দীন তরফদার, কুষ্টিয়া-১ আফাজ উদ্দিন আহমেদ বা রেজাউল হক চৌধুরী, ঝিনাইদহ-২ সফিকুল ইসলাম বা তাহজীব আলম সিদ্দিকী, পটুয়াখালি-১ শাহজাহান মিয়া অথবা আফজাল হোসেন, জামালপুর-৪ মুরাদ হাসান, ময়মনসিংহ-৪ অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, ময়মনসিংহ-৫ কেএম খালিদ, ময়মনসিংহ-৭ রেজা আলী, ময়মনসিংহ-৮ আবদুছ ছাত্তার, ঢাকা-১ আবদুল মান্নান খান, ঢাকা-৪ সানজিদা খানম, ঢাকা-৭ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, নরসিংদী-২ আনোয়ারুল আশরাফ খান বা কামরুল আশরাফ খান, নারসিংদী-৩ জহিরুল হক ভূঁইয়া মোহন, নারায়ণগঞ্জ-৩ আব্দুল্লাহ-আল-কায়সার, ফরিদপুর-৪ কাজি জাফল উল্যাহ বা নিলুফার জাফর উল্যাহ, সুনামগঞ্জ-৪ মতিউর রহমান, সিলেট-২ শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট-৫ হাফিজ আহমেদ মজুমদার, কুমিল্লা-৪ রাজী মোহাম্মদ ফখরুল, কুমিল্লা-৮ নাছিমুল আলম বা এনামুল হক, কক্সবাজার-১ সালাহ উদ্দিন আহমেদ, লক্ষ্মীপুর-২ হারুনুর রশিদ, কিশোরগঞ্জ-৩ নাসিরুল ইসলাম খান আওলাদ, হবিগঞ্জ-১ আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরী কেয়া ও কুমিল্লা-২ অধ্যক্ষ আবদুল মজিদ।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, এসব আসনের প্রার্থীরা নেত্রী নির্দেশনা মেনেছেন এবং তার কাছে নিজেদের ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। মাঠ জরিপেও তারা এগিয়ে আছেন।এছাড়া চট্টগ্রাম-৯, চট্টগ্রাম-৫, ঢাকা-৬, কুড়িগ্রাম-১, কুড়িগ্রাম-৩, বগুড়া-২, বগুড়া-৩, বগুড়া-৬, বগুড়া-৭, বরিশাল-৬ ও ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া-২ আসনে প্রার্থীর নাম উঠে না আসলেও এসব আসনেও শক্তিশালী প্রার্থী দেয়ার কথা ভাবছে আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে দল জরিপও চালাচ্ছে।এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, গত নির্বাচনে নানা ইকুয়েশনে (হিসেব-নিকেশ) প্রায় ৪০/৪৫ জন সাবেক এমপি বা এমপি হওয়ার মত ভালো প্রার্থী বাদ পড়েছেন। এবার তাদের বিষয়টি দলের বিবেচনায় আছে।তিনি বলেন, ‘অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিযোগিতাপূর্ণ নির্বাচন আওয়ামী লীগের টার্গেট। এজন্য নির্বাচনে প্রার্থী দেয়ার ক্ষেত্রে জনপ্রিয় ও নির্বাচিত হওয়ার মত যোগ্যদের মনোনয়ন দেয়া হবে।
কারণ হিসেবে সূত্রটি জানায়, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন না হওয়ায় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। তাই মহাজোটের শরীক দল জাতীয় পার্টি (জাপা) বিরোধী দল করে ক্ষমতাসীন হয় আওয়ামী লীগ।এজন্য নির্বাচনে অনেক আসনে জাপার প্রার্থীর বিপরীতে নিজেদের প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। কোথাও নিজেদের প্রার্থী স্বতন্ত্র নির্বাচন করলেও তাকে বহিস্কার করে। দলের নেতা-কর্মীদের জাতীয় পার্টির পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয় সূত্রটি জানায়।বিএনপিসহ নিবন্ধিত প্রায় তিন-চতুর্থাংশ দলের বর্জনের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হয় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। কার্যত তৎকালীন ক্ষমতাসীন জোট ও তাদের সমর্থিত কয়েকটি দল ছাড়া অন্যরা ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।ওই নির্বাচনে মহাজোটেরই শরিক জাতীয় পার্টিসহ জোটের অন্য শরিকদের বেশ কিছু আসনে ছাড় দিতে হয় আওয়ামী লীগকে। এতে বিনা ভোটেই সংখ্যারিষ্ঠ ১৫৩ আসনে জয় পায় ক্ষমতাসীন জোট। বাকি ১৪৭ আসনে নির্দেশনার বাইরে কোথাও নিজেদের প্রার্থী স্বতন্ত্র নির্বাচন করলে তাকে বহিষ্কার করে আওয়ামী লীগ। মহাজোট এবং সরকারে থেকেই বর্তমানে সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করছে জাতীয় পার্টি।
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর আসনগুলোতে জরিপ করা হচ্ছে। নির্বাচনে যে জয়ী হতে পারে তাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে। সাবেক এমপি, দলের পোড় খাওয়া নেতা, বাদ পড়া ও বঞ্চিতরা সুযোগ পেতেই পারেন।এ বছরের ৭ মে দলীয় এমপিদের এক বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কারও মুখ দেখে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হবে না। জরিপ দেখে একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই করা হবে।গত ৩০ এপ্রিল সাংবাদিকদের ওবায়দুল কাদেরও বলেছিলেন, তৃণমূলে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নিয়ে জরিপ চালানো হচ্ছে। শেখ হাসিনা কয়েকটি জরিপ পরিচালনা করছেন। তার ভিত্তিতে মনোনয়ন দেয়া হবে।