আজ বিশ্ব হাতি দিবস

837

আজ বিশ্ব হাতি দিবস, হাতি রক্ষায় জনসচেতনতা রক্ষা করা এই দিবসের অন্যতম উদ্দেশ্য। জেনে নিই হাতি সম্পর্কে কয়েকটি তথ্য:

আপনি জানেন কি…

পৃথিবীতে দুই প্রজাতির হাতি আছে, এশিয়ান হাতি ও আফ্রিকান হাতি,  যদিও শারিকরিকভাবে দেখতে প্রায় একইরকম তবু এদের মধ্যে জৈবিক পার্থক্য রয়েছে।

তৃতীয় প্রজাতি?

সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা বলছে বনচারী আফ্রিকান হাতি জেনেটিক্যালী স্বতন্ত প্রজাতি, যা হাতির তৃতীয় প্রজাতি।

এশিয়ান হাতি

পৃথিবীতে এখন ৪০,০০০ এর কম এশিয়ান হাতি আছে।

আফ্রিকান হাতি

পৃথিবীতে ৪,০০,০০০ এর কম আফ্রিকান হাতি (বন ও তৃণভূমি) বেঁচে আছে।

এশিয়ান হাতি ও আফ্রিকান হাতির পার্থক্য:

  • লম্বায় সাধারণত এশিয়ান হাতি ৬-১১ফুট হয়ে থাকে আর আফিকান হাতি হয় ৬-১৩ ফুট।
  • গড় ওজন এশিয়ান হাতির যেখানে ২-৫ টন, আফ্রিকান হাতির সেখানে ২-৭ টন। 
  • এশিয়ান হাতির গায়ের রং বেশ ফর্সা ও মসৃণ তুলনা মূলকভাবে আফ্রিকান হাতির গায়ের রং কালসেটে ও কুচকানো।
  • কানের আকৃতি নিশ্চত প্রমাণ দেয় কোনটা আফ্রিকান আর কোনটা এশিয়ান। আফ্রিকান হাতির আছে প্রকান্ড কান যা দিয়ে প্রচন্ড গরমে বাতাস করে নিজের গা নিজেই জুড়িয়ে নিতে পারে। পক্ষান্তরে এশিয়ান হাতির আছে ছোট কান। 
  • পেটের আকৃতিতেও দেখা যায় ভিন্নতা। এশিয়ান হাতিদের পেট গলা থেকে নীচের দিকে অনেকটা সমান। আর আফ্রিকানদের বেলায় গলা থেকে পেট ক্রমান্বয়ে নীচের দিকে ঝুলে আসে। 
  • এশিয়ান হাতিদের বুকের পাঁজরের হাড় এক জোড়া কম অর্থাৎ আফ্রিকান হাতির রয়েছে ২১ জোড়া হাড় আর এশিয়ান হাতির ২০ জোড়া।
  • আফ্রিকান স্ত্রী পুরুষ উভয় হাতির প্রলম্বিত দাঁত আছে কিন্তু এশিয়ান হাতিদের ক্ষেত্রে শুধু পুরুষ হাতিদের এই দাঁত দেখা যায়। 
  • এশিয়ান হাতির শুড় তুলনামূলক একটু শক্ত ও শুড়ের শেষ প্রান্ত একদিক সামান্য বেড়িয়ে থাকে আঙ্গুলের মত। যা তাকে যে কোন জিনিস শক্ত ভাবে ধরতে সাহায্য করে। আফ্রিকান হাতিদের শুড়ের শেষ প্রান্তে দু’দিক বেড়িয়ে থাকে।
  • খাদ্য পছন্দের তালিয়ায় এশিয়ান হাতিরা বেশি পছন্দ করে ঘাস পক্ষান্তরে আফ্রিকান হাতির পছন্দ পাতা।
অন্য খবর  নরক খুঁজে পেলেন বিজ্ঞানীরা!

 

একটি হাতির আয়ুষ্কাল কিন্তু খুব বেশি নয় মাত্র ৬০ -৭০ বছর।

বাংলাদেশে হাতি:

বাংলাদেশের স্থায়ী বন্যহাতির আবাসস্থল হচ্ছে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি। এর মধ্যে চট্টগ্রামের চন্দনাইনা, বাঁশখালী, পটিয়া ও রাঙ্গুনিয়া; কক্সবাজারের কাসিয়াখালি, রামু, উখিয়া ও টেকনাফ; বান্দরবানের লামা ও আলিকদম; রাঙ্গামাটির কাউখালি, কাপ্তাই ও লংদু এবং খাগড়াছড়িসহ দেশের ১১টি বনবিভাগে এদের বিচরণ করতে দেখা যায়।

ড. রেজা খানের জরিপ অনুযায়ী, ১৯৮০ সালে বাংলাদেশে বন্যহাতির সংখ্যা ছিল ৩৮০টি। ২০০০ সালে ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ডের গবেষণা অনুযায়ী বাংলাদেশে বন্যহাতির সংখ্যা ২৩৯টি। সর্বশেষ ২০০৪ সালে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন)-এর করা জরিপে পাওয়া যায় ২২৭টি। উল্লিখিত পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্টত বোঝা যায়, বাংলাদেশে হাতির সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে। 

বাংলাদেশের হাতি এশিয়ান প্রজাতির। আইসিইউএনের দেয়া তথ্যানুযায়ী বনবিভাগের চট্টগ্রাম দক্ষিণ অঞ্চলে হাতি আছে ৩০ থেকে ৩৫টি, কক্সবাজার উত্তর ও দক্ষিণ বিভাগ মিলিয়ে আছে ৮২ থেকে ৯৩টি। বান্দরবানে আছে ১২ থেকে ১৫টি এবং লামা বিভাগে আছে ৩৫ থেকে ৪০টি হাতি। এছাড়া কক্সবাজার উত্তর বিভাগে আরো ৭ থেকে ৯টি এবং দক্ষিণ বিভাগে ৩০ থেকে ৩৫টি হাতি রয়েছে। আর অভিবাসী হাতির সংখ্যা ৮৪ থেকে ১০০টি। 

অন্য খবর  অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএসে মুজিব ১০০ অ্যাপ উদ্বোধন

বাংলাদেশে হাতি কমে যাওয়ার ৯টি কারণ আইইউসিএনের গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বনাঞ্চল নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া, খাদ্য সংকট, চলাচলের পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়া, যত্রতত্র জনবসতি গড়ে ওঠা এবং চোরাশিকারিদের নিষ্ঠুরতাসহ আরো কয়েকটি কারণ। তবে ভয়ঙ্কর হচ্ছে চোরাশিকারিদের উপদ্রব। ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত শুধু বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার ৬টি উপজেলার সংরক্ষিত বনাঞ্চলে দাঁত ও হাড়গোরের জন্য ৩২টি হাতি হত্যা করা হয়। সুতরাং হাতি রক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে জরুরি ভিত্তিতে। 

আপনার মতামত দিন