বিশ্ব বাঘ দিবস: সঙ্কটে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার

1150
বিশ্ব বাঘ দিবস: সঙ্কটে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার

জলবায়ু পরিবর্তন, শিকারিদের দৌরাত্ম্য, অবাধ চলাচলে বাধা সৃষ্টি ও খাদ্য সঙ্কটসহ প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট ত্রিবিধ হুমকিতে (থ্রেটের কারণে) বাঘের বাসযোগ্য প্রতিবেশ ধ্বংস হচ্ছে।  প্রাকৃতিক দুর্যোগ, গণপিটুনি, চোরা শিকারিসহ নানা কারণে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। আর এ কারণে সঙ্কটে পড়েছে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার। তাই সুন্দরবনে বাঘের আবাসস্থলকে নির্বিঘ্ন করা না গেলে সংরক্ষণ, প্রজনন প্রক্রিয়া ও প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত’ হয়ে বিলুপ্তির আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।

সুন্দরবনে বাঘের অবাধ বিচরণ ও যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব বাধা চিহ্নিত করে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছেন বনবিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।

এদিকে, সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার সংরক্ষণে বনবিভাগের নানা প্রক্রিয়া কাজে আসছে না। সর্বশেষ গত ২১ জুলাই সুন্দরবনের বাঘের ১৫ পিস হাড়সহ দুই পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৬। কিছুদিন পর পর খুলনাঞ্চল থেকে বাঘের চামড়া ও হাড় উদ্ধার করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এভাবে ক্রমেই বাঘশূন্য হতে চলেছে সুন্দরবন। এ অবস্থায় আজ (২৯ জুলাই) পালিত হচ্ছে বিশ্ব বাঘ দিবস।

পৃথিবীতে বাঘ রয়েছে এমন ১৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। কিন্তু সুন্দরবনের বাঘ রক্ষায় যথাযথ পরিকল্পনা ও উদ্যোগ না থাকায় আশঙ্কাজনকভাবে কমছে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা। ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের সুন্দরবনে ১৯৮২ সালে বাঘ ছিল ৪৫৩টি। ২০০৪ সালে শুমারি অনুযায়ী তা কমে দাঁড়ায় ৪৪০টিতে। আর সর্বশেষ ২০১৫ সালের জরিপে সুন্দরবনের ভারত অংশে বাড়লেও বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১০৬টিতে।

অন্য খবর  যে কারণে গরমে শরীরের তাপমাত্রা বাড়ে

বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের প্রধান আবাসস্থল সুন্দরবন হলেও জলবায়ু পরিবর্তনে পানি-মাটিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, শিকারি ও দস্যুদের দৌরাত্ম, অবাধ চলাচলে বাধা সৃষ্টি ও খাদ্য সঙ্কটসহ প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট বেশকিছু কারণে বাঘের বাসযোগ্য প্রতিবেশ ধ্বংস হচ্ছে। ফলে সুন্দরবনে বাঘের আবাসস্থল, জীবনাচারণ ও প্রজনন প্রক্রিয়ায় নিরাপত্তাহীণতার সৃষ্টি হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সুন্দরবনের বাঘ রক্ষায় যথাযথ পরিকল্পনা ও উদ্যোগ না থাকায় বেড়েছে বাঘের মৃত্যুর হার। গত তিন দশকে সুন্দরবন ও সংলগ্ন এলাকায় চোরা শিকারি ও বনদস্যুদের হানা, গণপিটুনি আর প্রাকৃতিক দুর্যোগে ৬৭টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. দিলীপ কুমার দত্ত বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন, আইলা ও সিডরের আঘাতে সুন্দরবন লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়ায় বন্যপ্রাণীর খাদ্যসঙ্কট দেখা দিয়েছে। যে কারণে হিংস্র বাঘ খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে এবং গ্রামবাসীর গণপিটুনির শিকার হচ্ছে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত সুন্দরবন গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক সরদার শফিকুল ইসলাম জানান, বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রধান প্রাণী রয়েল বেঙ্গল টাইগারের অস্তিত্ব ও প্রবৃদ্ধি হুমকির মুখে পড়েছে। তাই সুন্দরবনে বাঘের আবাসস্থলকে নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ করা না গেলে সংরক্ষণ, প্রজনন প্রক্রিয়া ও বংশবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়ে বিলুপ্তির আশঙ্কা রয়েছে।

অন্য খবর  চায়না জালে দেশীয় মাছ সংকটে

বন সংরক্ষক জহির উদ্দিন আহমেদ জানান, সুন্দরবনের বাঘের সুষ্ঠু সংরক্ষণ ও প্রবৃদ্ধির প্রধান অন্তরায় বাধাগুলোকে চিহ্নিত করে অবাধ বিচরণ ও আবাসস্থলকে নির্বিঘ্ন করতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ ও নিরাপদ প্রজনন পরিবেশ তৈরির কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ানের (র‌্যাব-৬) পরিচালক খোন্দকার রফিকুল ইসলাম জানান, সুন্দরবনের বাঘসহ বন্যপ্রাণী রক্ষায় চোরাশিকারি, বনদস্যু ও তাদের আশ্রয়দাতাদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযানের পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে র‌্যাবের অভিযানে বিভিন্ন স্থান থেকে বনদস্যু ও জলদস্যুদের আটক করা হয়েছে। র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাড়াশি অভিযানের মুখে সুন্দরবনের বনদস্যু মাস্টার বাহিনী, মজনু ও ইলিয়াস বাহিনীর সদস্যরা বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করেছে।

আপনার মতামত দিন