বিক্রমপুরের সেই মৃত্যুঞ্জয়ী ক্রিকেটার ‘বীর বিক্রম’ আব্দুল হালিম চৌধুরী জুয়েল

    760

    মুক্তিযুদ্ধে আহত হবার পরে, শারীরিক কষ্ট ভুলে সাহসী এই কথাগুলো বলেছিলেন মাত্র ২১ বছর বয়সী এক তরুণ। স্বাধীন দেশে গর্ব করে অবশ্য এই কথাগুলো বলা হয়নি তাঁর। বলবেন কি করে! স্বাধীন মাতৃভূমি যে তিনি দেখে যেতেই পারেননি। স্বাধীনতার যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন, যে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। সেই মুক্তিযুদ্ধে শুধুমাত্র তাঁর আঙ্গুলগুলোই শহীদ হয়নি। শহীদ হয়েছিলেন তিনি নিজেও। আমাদের জন্য একটি স্বাধীন দেশ এনে দেয়ার জন্যই শহীদ হয়েছিলেন তিনি। একটি মানচিত্রের জন্য অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছিলেন বুকের তাজা রক্ত। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা অপারেশনে মারাত্মকভাবে আহত হবার পরেও এমন করে কেউ কথা বলতে পারে!”হেভি আরাম লাগতেছে। দেশের জন্যে রক্ত দেওয়াও হইল, আবার জানটাও রাখা হইলো। কইয়া বেড়াইতে পারুম দেশের জন্যে যুদ্ধ কইরা আঙ্গুল শহীদ হইছিলো। হা হা হা।” কিভাবে পারে! একমাত্র ক্র্যাক না হলে কেউ মনে হয় না এমন করে বলতে পারে। হ্যা, উনি তো ছিলেন পুরো দস্তুর ক্র্যাক! ছিলেন বিখ্যাত ক্র্যাক প্লাটুন এর গর্বিত গেরিলা যোদ্ধা। মাত্র ২১ বছরের টগবগে যুবক। নিজের ব্যক্তিগত স্বপ্ন দূরে ঠেলে দিয়ে লড়াই করেছেন একটি জাতির স্বপ্নের জন্য। একটি জাতির জন্য নিজের প্রাণটাকেও তুচ্ছ জ্ঞান করেছিলেন। আর আমরা তাঁদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা পেয়ে ফতোয়া জারি করি, খেলার সাথে রাজনীতি মিশাবেন না!

    ১৯৫০ সালের ১৮ই জানুয়ারি বাবা আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী এবং মা ফিরোজা বেগম এর ঘর আলো করে জন্ম নিয়েছিল এক ছোট্ট দেব শিশু। সেদিন বিক্রমপুরের (বর্তমান মুন্সিগঞ্জ জেলা) শ্রীনগরের দক্ষিন পাইকশা গ্রামে জন্ম নেয়া শিশুটা যেন দেশকে আলোকিত করার জন্যই এসেছিলেন। তিন ভাই আর চার বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। পুরো নাম আব্দুল হালিম চৌধুরী। ডাক নাম জুয়েল। আমাদের শহীদ জুয়েল (বীর বিক্রম)। জন্ম বিক্রমপুরে হলেও শৈশব, কৈশোর, তারুণ্যের প্রতিটি সময় কাটিয়েছেন সেই সময়কার প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকাতেই। টিকাটুলির ৬/১ কে এম দাস লেনের পৈত্রিক বাড়িতেই বেড়ে উঠেছিলেন জুয়েল। একদম ছোট বেলা থেকেই তাঁর ধ্যান জ্ঞানে মিলে মিশে ছিল ক্রিকেট। যেখানেই ক্রিকেট সেখানেই জুয়েল। বাসার কাছাকাছিই ঢাকা স্টেডিয়াম। সুযোগ পেলেই ছুটে যেতেন স্টেডিয়ামে। শুধু ক্রিকেট খেলাটা দেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, ক্রিকেটটা যে অন্য সবার চেয়ে একটু বেশিই ভালো খেলতেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী যে তিনি নিজেই, অনেক ক্ষেত্রে পশ্চিম পাকিস্তানেও যে তাঁর সমতুল্য খেলোয়াড় খুবই সামান্য। মধ্যবিত্ত পরিবারের এই ছেলেটির প্রথম ভালোবাসা ছিল এই ক্রিকেট। তাই তো প্র্যাকটিসে আসতেন সবার আগে আর ফিরতেন সবার শেষে। অল্প সময়ের মধ্যেই নিজেকে একজন ক্রিকেটার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন। হুক, পুল, স্কয়ার কাট আর অফ ড্রাইভে তিনি ছিলেন তুখোড়। সবচেয়ে ভালো খেলতেন স্লগ সুইপ। ঘরোয়া ক্রিকেটে অভিষেকের পর থেকেই এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী নাম জুয়েল। উইকেটরক্ষক পরিচয়েও নিজের আলাদা অবস্থান গড়ে নিয়েছিলেন তিনি। ঘরোয়া ক্রিকেটে আসেন তাঁরই বন্ধু শহীদ মোশতাক এর গড়া আজাদ বয়েজ ক্লাব এর হাত ধরে। ১৯৬৯ সালে যোগ দেন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবেই ছিলেন তিনি।

    13223613743_02429f9371_b

    নিজের ছোট্ট ক্যারিয়ারে খেলেছেন ৭ টি প্রথম-শ্রেনির ম্যাচ। ১৩ ইনিংসে ২১.৫৮ এভারেজে করেছেন ২৫৯ রান। অর্ধ শতক একটি। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে সেঞ্চুরি না পেলেও কারদার সামার ক্রিকেট টুর্নামেন্টে অবশ্য একটি সেঞ্চুরি আছে তাঁর। ১৯৬৬ সালের ২১শে মে ঢাকার হয়ে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষিক্ত হন জুয়েল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে প্রতিপক্ষ পিডব্লিউডি (পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট)। প্রথম ইনিংসে ৩৮ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ রানের ইনিংস খেলেন। এখানে উল্লেখ্য যে ৩৮ রানের সেই ইনিংসটাই ছিল ম্যাচের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর। ফলাফল ম্যাচ ড্র। ১৯৬৬ সালের ৫ই অক্টোবর হায়দ্রাবাদের নিয়াজ স্টেডিয়ামে হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে ইস্ট পাকিস্তান দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি। প্রথম ইনিংসে ৪ রান এবং দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁর ব্যাট থেকে আসে ২৯ রান। এই ম্যাচটি পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক দল জিতে নেয় পাঁচ উইকেটে। তাঁর সবচেয়ে সেরা প্রথম শ্রেণীর ম্যাচটা ছিল ১৯৭১ সালের ১৫ই জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপক্ষে। ইস্ট পাকিস্তান হোয়াইট এর হয়ে খেলতে নেমে প্রথম ইনিংসে করেন ৪৭ রান এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ৬৫ রান। ঘরোয়া ক্রিকেট, প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটের পাশাপাশি জাতীয় অনূর্ধ্ব ১৯ চ্যাম্পিয়নশিপেও খেলেছেন জুয়েল।

    অন্য খবর  দোহার-নবাবগঞ্জের কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের প্ল্যাণ্ট স্থাপন

    জুয়েলের ক্রিকেটের মহাকাব্য রচনার নাম ডাক শুধুমাত্র প্রাদেশিক ক্রিকেটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। পুরো পাকিস্তান জুড়েই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তিনি। যার ফলস্বরূপ ১৯৬৯ সালে পাকিস্তান টেস্ট দলের ক্যাম্পেও ডাক আসে তাঁর। নিউজিল্যান্ড এর বিপক্ষে তিন টেস্টের সিরিজে ছিলেন প্রাথমিক দলে। যথেষ্ট যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও টেস্ট দলে অবশ্য জায়গা হয়নি তাঁর।

    ক্রিকেট খেলতে গিয়ে পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে তাঁকে ঘুরতে হয়েছে। সে সময়ই পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যকার বৈষম্য রাজনৈতিক সচেতন জুয়েলের হৃদয়ে দারুণভাবে দাগ কেটেছিল। একটু একটু করে বুকের মধ্যে যে রাজনৈতিক বোধ সঞ্চার হতে থাকে, এক সময় তার বিস্ফোরণ ঘটে। যুক্ত ছিলেন ৬৯ এর গন আন্দোলনের সাথেও। সমাপ্তিটা নিজের প্রাণ বিলিয়ে দিয়ে একটি স্বাধীন মাতৃভূমি এনে দেয়ার মাধ্যমে।

    ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ। ভয়াল এক কালো রাত্রি। পাকিস্তানি পশুরা মেতে উঠল ইতিহাসের নৃশংস গনহত্যায়। রাতের আঁধারে নিরস্ত্র নিরীহ বাঙ্গালির রক্ত পানে মেতে উঠল পাকিস্তানি জানোয়াররা। সেই রাতেই নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয় আজাদ বয়েজ ক্লাবের সংগঠক মুশতাককে। ২৭ মার্চ পর্যন্ত ঢাকা জেলা ক্রীড়া পরিষদের সামনে তাঁর মৃতদেহ পরে থাকে। দ্রোহের আগুন বুকের মধ্যে লালন করতেন আগে থেকেই। প্রিয় সঙ্গীর লাশ দেখে সেই আগুনটা যেন দাবানলে রূপ নিয়েছিল। মনে মনে শপথ নিয়েছিলেন, জীবন দিয়ে হলেও এই দেশ স্বাধীন করবেন। বন্ধুর রক্ত কখনোই বৃথা যেতে দিবেন না। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু মায়ের তীব্র স্নেহের বন্ধন ছিন্ন করে যেন পালিয়ে যেতে পারছিলেন না। অবশেষে সেই বাঁধন আলগা করে ৩১ মে ঘর ছাড়লেন। যাবার আগে নিজের বাঁধাই করা একটি ছবি মায়ের হাতে তুলে দিয়ে বললেন, ‘আমি যখন থাকবো না, এই ছবিতেই আমাকে পাবে।’

    এবার আর ২২ গজে ব্যাটে বলের লড়াই নয়। শত্রুর বিপক্ষে জীবন মরণ লড়াই। ক্রিকেট নিয়ে যে রকম সিরিয়াস ছিলেন দেশের জন্যে যুদ্ধক্ষেত্রেও একই রকম সিরিয়াস তিনি। গেরিলা যুদ্ধের ট্রেনিং নিলেন দুই নাম্বার সেক্টরে। খালেদ মোশাররফ এবং এটিএম হায়দারের তত্ত্বাবধায়নে ট্রেনিং সমাপ্ত করে ফিরলেন চিরচেনা ঢাকায়। সেরাদের জায়গা সবসময়ই সেরাদের কাতারে হয়ে থাকে। তাঁর ক্ষেত্রেও এর ব্যাতিক্রম নয়। তিনি ছিলেন লিজেন্ডারি ক্র্যাক প্লাটুন এর গর্বিত গেরিলা। ঢাকার মধ্যে এই ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্যরাই পাকিস্তানি হানাদারদের নাভিশ্বাস উঠিয়ে ফেলেছিল। পুরো আগস্ট মাস জুড়ে তাঁদের গেরিলা আক্রমণে নাস্তানাবুদ পাকিস্তানি জানোয়াররা। শহীদ জুয়েল ছিলেন এই দলের সক্রিয় গেরিলা। বেশ কয়েকটি গেরিলা আক্রমনে অংশ নেয় জুয়েল। যার মধ্যে ফার্মগেট অপারেশন অন্যতম। এই আক্রমনে ৬ জন পাকিস্তানি মিলিটারি পুলিশ এবং ৬ জন রাজাকার মারতে সমর্থ হয় জুয়েলরা।

    ৭ই আগস্ট ১৯৭১, সামাদের নিউ ইস্কাটনের বাসায় বসেই হামলার প্ল্যান করা হয়। অপারেশনের সময় নির্ধারন করা হয় রাত আটটা। আক্রমণে যাবে পাঁচ জনের একটি দল। গাড়ি চালকের আসনে সামাদ। আর বাকি সদস্যরা হলেন- জুয়েল, বদিউল আলম, পুলু এবং স্বপন। সবার হাতেই স্টেনগান, আলমের হাতে চাইনিজ এলএমজি। অতিরিক্ত অস্ত্রের মধ্যে সামাদের কাছে একটি রিভালবার, জুয়েল আর পুলুর কাছে ফসফরাস গ্রেনেড এবং গ্রেনেড – ৩৬। নির্দিষ্ট সময়ে ফার্মগেট চেক পয়েন্টের কাছে এসে থামল সবুজ রঙের টয়োটা করোনা গাড়িটি। মুহূর্তের মধ্যে নেমে এল চার গেরিলা। ঘড়ির কাঁটায় পুরো এক মিনিট চলল ব্রাশ ফায়ার। সাথে গ্রেনেড এর বিস্ফোরণ। নিমিষের মধ্যেই চেকপোস্টের রাজাকার আর মিলিটারি পুলিশের দেহগুলো নিথর হয়ে পরে রইল।

    অন্য খবর  দোহারে সরকার ঘোষিত আনন্দ র‍্যালী অনুষ্ঠিত

    ঢাকা এবং আশেপাশের পাওয়ার ষ্টেশন ধ্বংস করার দায়িত্ব ছিল ক্র্যাক প্লাটুন এর উপরে। যে কাজটা অত্যন্ত দক্ষতার সাথেই পূর্ণ করেছিলেন তারা। গুলবাগ পাওয়ার ষ্টেশন উড়িয়ে দেয়ার অপারেশনে ছিলেন জুয়েল। এই অপারেশনে জুয়েলের সঙ্গী ছিলেন পুলু, সাইদ, হানিফ, মুখতার, মোমিন, মালেক এবং বাশার।

    জুয়েলের শেষ অপারেশন ছিল ১৯ শে আগস্ট। এই দিন সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার ষ্টেশন উড়িয়ে দেয়ার কথা ছিল। এই হামলায় গুরুত্বর আহত হন তিনি। দুইটি নৌকা করে আক্রমণে ক্র্যাক প্লাটুন। প্রথম নৌকায় কাজী কামাল, জুয়েল, বদিউল আলম, পুলু। দ্বিতীয় নৌকায় রুমি, ইব্রাহিম, জিয়া আর আজাদ। জুয়েলদের প্রথম নৌকা একটি মিলিটারি ভরা নৌকার মুখোমুখি হয়ে যায়। সবার অস্ত্র নৌকার পাটাতনে লুকিয়া রাখলেও, বদির স্টেনগান তাঁর কোলের উপরই ছিল। মিলিটারি দেখা মাত্রই বদি তড়িৎ রিএক্ট করেন। বদির ব্রাশ ফায়ার এর সামনে পাকিস্তানিরা টিকতে পারেনি। হানাদাররা পাল্টা গুলি করলেও তেমন সুবিধা করতে পারেনি। ক্র্যাক প্লাটুনের কেউ নিহত না হলেও জুয়েলের হাতে গুলি লাগে। তিনটি আঙ্গুল মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আহত জুয়েলকে নিয়ে ফিরে আসে গেরিলারা। জুয়েলের কষ্টে সবাই শোকে নিমজ্জিত থাকলেও, ব্যাথা নিয়েই উজ্জীবিত জুয়েল। সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “হেভি আরাম লাগতেছে। দেশের জন্যে রক্ত দেওয়াও হইল, আবার জানটাও রাখা হইলো। কইয়া বেড়াইতে পারুম দেশের জন্যে যুদ্ধ কইরা আঙুল শহীদ হইছিলো। হা হা হা।” আহত জুয়েলকে চিকিৎসার জন্য মগবাজারে একটি বাড়িতে রাখা হয়। স্বপ্ন সারথি এই মানুষটি তখনো স্বপ্ন দেখতেন একদিন স্বাধীন বাংলাদেশের হয়ে ক্রিকেট খেলবেন। তবে সেই স্বপ্নটি তাঁর পূর্ণ হয়নি। ১৯৭১ সালের ২৯ আগস্ট ক্র্যাক প্লাটুনের অধিকাংশ সদস্যদের সাথে তাকেও ধরে নিয়ে যায় পাকিস্তানি হানাদাররা। পাকিস্তানি ক্যাম্পে তাঁদের উপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। ৩১ আগস্টের পর তাঁর আর কোন খোঁজ পাওয়া যায় নি।

    তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন এই দেশ একদিন স্বাধীন হবে। সেই স্বপ্নটা তাঁর পূর্ণ হয়েছে। তাঁর নিজের রক্তের বিনিময়ে এই দেশটাকে স্বাধীন করেই গিয়েছিলেন। শুধু স্বাধীন বাংলাদেশের হয়ে ক্রিকেটটাই খেলা হল না তাঁর। কিন্তু আজকে তাঁর হয়েই যে মাঠে নামছে আমাদের বাংলার বাঘরা। শহীদ জুয়েলের আত্মত্যাগের বিনিময়েই যে আজ আমরা স্বাধীন দেশের হয়ে ক্রিকেটে অংশ নিচ্ছি। বাংলাদেশের প্রতিটি ক্রিকেটার এর মাঝেই যে রয়েছেন তিনি। আব্দুল হালিম চৌধুরী জুয়েল একজন ক্রিকেটার এবং গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা হয়েই চিরকাল বেঁচে থাকবেন আমাদের মাঝে।

    গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার মুক্তিযুদ্ধে অসীম বীরত্বের কারণে আব্দুল হালিম চৌধুরী জুয়েলকে মরণোত্তর ‘বীর বিক্রম’ খেতাবে ভূষিত করেন। ১৯৯৭ সালে তাঁকে ক্রিকেটে মরণোত্তর ‘জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার’ দেওয়া হয়। মিরপুর শের-এ-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তাঁর নামে একটি স্ট্যান্ডের নামকরণ করা হয়। এছাড়াও প্রতি বছর শহীদ জুয়েল একাদশ এবং শহীদ মুশতাক একাদশ-এর মধ্যে প্রদর্শনী ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজন করে থাকে বিসিবি। দেশের জন্য তিনি যে আত্মত্যাগ করেছেন, তা ইতিহাসের পাতায় অমলিন হয়ে থাকবে।

    আপনার মতামত দিন