নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন না থাকলেও আগামী একাদশ নির্বাচনের প্রস্তুতিতে থেমে নেই জামায়াতে ইসলামী। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন বিরোধী জামায়াত বেশ আগে-ভাগেই নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। আগামী নির্বাচনে অন্তত ৫০ থেকে ৬০টি আসন ২০-দলীয় জোটের কাছে চাইবে দলটি। এরই মধ্যে ৪৩টি আসনে প্রাথমিকভাবে দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জামায়াত সূত্র নিশ্চিত করেছে। জানতে চাইলে জামায়াত আমির মকবুল আহমাদ সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য আন্দোলনে আছি। এটা অর্জন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, জামায়াতের নির্বাচনী প্রস্তুতি রয়েছে। জামায়াতকে নির্বাচনের জন্য আলাদা প্রস্তুতি নিতে হয় না। দল নিষিদ্ধ হলে নতুন সংগঠন করবেন কিনা এমন প্রশ্নে মকবুল আহমাদ বলেন, জামায়াতের নিবন্ধনের বিষয়টি এখনো উচ্চ আদালতে বিবেচনাধীন। আর দল হিসেবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার আইনি ও নৈতিক অধিকার সরকারের নেই।
সূত্র জানায়, রাজনৈতিক স্বকীয়তা অক্ষুণ্ন রেখেই জামায়াত নির্বাচনী মাঠে লড়াই করবে। তারা ভিন্ন কোনো রাজনৈতিক দলে মিশবে না। নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে পেতে আইনি লড়াই দলটি অব্যাহত রাখবে। এক্ষেত্রে কোনো সুযোগ তৈরি না হলে স্বতন্ত্র পরিচয়েই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে দলটি। জোটের সঙ্গে আলোচনা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড় করাবে তারা। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতীকও যাতে একই থাকে সে জন্যও তারা পরিকল্পনা করে রেখেছে, যাতে প্রতীক দেখে জামায়াতের অস্তিত্ব বোঝা যায়। দলের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির নেতাদের বেশিরভাগই কারাগারে। বাকিরা পলাতক। দলীয় নিবন্ধন আদালতের রায়ে অবৈধ ঘোষিত হয়েছে। এ অবস্থায় বিএনপি জামায়াতকে এতগুলো আসন দেবে কি না জানতে চাইলে দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা বলেন, আন্দোলনে জামায়াত সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছে। জান ও মাল দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আগামী দিনের আন্দোলনেও জামায়াত সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করবে। ত্যাগের বিবেচনায় ৬০ আসন কিছুই নয়। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দলের পার্লামেন্টারি বোর্ড সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা প্রণয়নের কাজ করছে। ২০-দলীয় জোট থেকেই নির্বাচনের বিষয়টি চূড়ান্ত রেখে প্রার্থী যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়া অনেকটাই গুছিয়ে এনেছে জামায়াত। এক্ষেত্রে ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৩৯টি আসনে নির্বাচন করলেও এবার এই সংখ্যাটি বাড়িয়ে নিতে চাইছে দলটির নীতিনির্ধারকরা। ২০০১ সালের নির্বাচনে ৩০টি আসনে জোটের মনোনয়ন পায় জামায়াত। আর চট্টগ্রাম-১৪ আসনে বিএনপি-জামায়াত দুই দলেরই প্রার্থী ছিল। এবারও দাবি করা আসনে জোটের মনোনয়ন না পেলে ছাড় দেবে না জামায়াত। যে ৪৩টি আসনে জামায়াতের প্রার্থিতা চূড়ান্ত হয়েছে সেগুলো এম এ হাকিম ঠাকুরগাঁও-২, মোহাম্মদ হানিফ দিনাজপুর-১, আনোয়ারুল ইসলাম দিনাজপুর-৬, মনিরুজ্জামান মন্টু নীলফামারী-২, আজিজুল ইসলাম নীলফামারী-৩, হাবিবুর রহমান লালমনিরহাট-১, শাহ হাফিজুর রহমান রংপুর-৫, নূর আলম মুকুল কুড়িগ্রাম-৪, আবদুল আজিজ গাইবান্ধা-১, নজরুল ইসলাম গাইবান্ধা-৩, আবদুর রহিম সরকার গাইবান্ধা-৪, নুরুল ইসলাম বুলবুল চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২, মো. লতিফুর রহমান চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩, আতাউর রহমান রাজশাহী-৩, রফিকুল ইসলাম খান সিরাজগঞ্জ-৪, আলী আলম সিরাজগঞ্জ-৫, মতিউর রহমান নিজামীর পরিবারের কোনো সদস্য পাবনা-১, মাওলানা আবদুস সোবহান পাবনা-৫, ছমিরউদ্দিন মেহেরপুর-১, মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান চুয়াডাঙ্গা-২, মতিয়ার রহমান ঝিনাইদহ-৩, আজিজুর রহমান যশোর-১, আবু সাইদ মুহাম্মদ সাদাত হোসাইন যশোর-২, অ্যাডভোকেট আবদুল ওয়াদুদ বাগেরহাট-৩, শহীদুল ইসলাম বাগেরহাট-৪, মিয়া গোলাম পরওয়ার খুলনা-৫, শাহ মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুছ খুলনা-৬, ইজ্জতউল্লাহ সাতক্ষীরা-১, আবদুল খালেক মণ্ডল সাতক্ষীরা-২, মুফতি রবিউল বাশার সাতক্ষীরা-৩, গাজী নজরুল ইসলাম সাতক্ষীরা-৪, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী অথবা তার দুই ছেলে পিরোজপুর-১ ও ২, শফিকুল ইসলাম মাসুদ পটুয়াখালী-২, মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ছেলে হাসান ইকবাল শেরপুর-১, অধ্যাপক জসিমউদ্দিন ময়মনসিংহ-৬, ফরীদউদ্দিন সিলেট-৫, মাওলানা হাবিবুর রহমান সিলেট-৬, ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের কুমিল্লা-১১, শামসুল ইসলাম চট্টগ্রাম-১৪, হামিদুর রহমান আযাদ কক্সবাজার-২ ও শাহজালাল চৌধুরী কক্সবাজার-৪। এ আসনগুলোর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২, সিরাজগঞ্জ-৫, ময়মনসিংহ-৬, সাতক্ষীরা-১, পটুয়াখালী-২, কক্সবাজার-৪ এই ছয়টি আসনে জামায়াত নতুন করে লড়তে যাচ্ছে। গত নির্বাচনে এ আসনগুলোতে জামায়াতের প্রার্থী ছিল না। তবে ময়মনসিংহ-৬ আসনে ২০০১ সালে জামায়াত প্রার্থী জোটের মনোনয়ন পেয়েও পরাজিত হন। সিরাজগঞ্জ-৫ ও কক্সবাজার-৪ আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান। এ কারণেই আসন দুটিতে ছাড় দিতে নারাজ তারা।