এডভোকেট রশিদ মোল্লা। গ্রামের বাড়ি ঢাকার নবাবগঞ্জ। থাকেন ৩০/৩ নারিন্দার শাসাহেব বাড়ির লেন, গেন্ডারিয়ায় তার বাসায়। গত ২৪শে মার্চ জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর থেকে ৮ ও ১০ই এপ্রিল মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস পরে নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার সদাই কিনতে বাজারে যান তিনি। এরপর গায়ে হালকা জ্বর অনুভব করতে থাকেন। রাতে বাড়তে থাকে জ্বর। দিন যায়, রাত যায় আর বাড়তে থাকে হাঁচি-কাশি। মনের মধ্যে সন্দেহ তীব্র হতে থাকে। এভাবে কেটে যায় পাঁচ দিন।
এরপর ১৬ই এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে করোনা টেস্ট করান তিনি। পরদিন আইইডিসিআর থেকে ফোন করে জানানো হয়, তার করোনা পজিটিভ। এ কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের সকল সদস্যদের কাছ থেকে আলাদা হয়ে যান তিনি । অবস্থান নেন আলাদা একটি রুমে । এরই মধ্যে পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও দেখা দেয় জ্বর ঠান্ডা হাঁচি কাশি। ২০শে এপ্রিল তাদেরকেও করোনার টেস্ট করানো হয়। কিন্তু এখনো তাদেরকে করোনা টেস্টের রিপোর্ট জানানো হয়নি। এই অবস্থায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে পুরো পরিবার।
পুলিশ ১৬ই এপ্রিল থেকেই তাদের বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করেন। এভাবে তারা গত প্রায় এক মাস ধরে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। এর মধ্যে মাত্র একদিন আইইডিসিআর থেকে রশিদ মোল্লার কাছে ফোন করে জানাতে চাওয়া হয় কেমন আছেন আপনি? বাসায় অন্যদের থেকে আলাদা থাকুন। আর কোনো খোঁজখবর নেয়া হয়নি তার। এরপর আইইডিসিআর এর দেয়া কয়েকটি নম্বরে ফোন করেও পরবর্তী কোন খবর জানতে পারেননি। এখনো রিপোর্ট দেয়া হয়নি তার পরিবারের তিন সদস্যদের।
এদিকে আইইডিসিআর তাদের খোঁজ খবর না নিলেও নিজেদের উদ্যোগে পরিচিত চিকিৎসকদের পরামর্শে ঔষধ সেবন করে তারা এখন পুরোপুরি সুস্থ। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনো তাদের বাড়ির লকডাউন তুলে নেয়নি।
এ ব্যাপারে কথা হয় রশিদ মোল্লার সঙ্গে। তিনি জানান, ১৬ই এপ্রিল দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনা টেস্ট করি। পরের দিন আইইডিসিআর থেকে আমাকে ফোন করে জানানো হয় আমার করোনা পজিটিভ। এ কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের সকল সদস্যদের কাছ থেকে আমি আলাদা হয়ে যাই। অবস্থান নিই আলাদা একটি রুমে। এরই মধ্যে পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও দেখা দেয় জ্বর ঠাণ্ডা হাঁচি কাশি। ২০শে এপ্রিল তাদেরকেও করোনার টেস্ট করি। কিন্তু এখনো তাদেরকে করোনা টেস্টের রিপোর্ট জানানো হয়নি। তাই এখনো ঘরে অবস্থান করছি। তবে আমরা সবাই সুস্থ আছি।
কিভাবে আক্রান্ত হলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিভাবে আক্রান্ত হয়েছি, তা নিশ্চিতভাবে বলতে পারব না। তবে এতটুকু বলতে পারি, ২৩শে মার্চ থেকে সরকার কর্তৃক জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর থেকে আমি বাইরে কোথাও যাইনি। শুধুমাত্র নিত্য প্রয়োজনীয় বাজার-সদাই কিনতে ৮ই এপ্রিল ও ১০ই এপ্রিল বাজারে যাই। বাজারে যাওয়ার আগে হ্যাণ্ড গ্লাভস, মাস্ক ও পায়ে কেডস পড়ি। তারপরও আমি কেন আক্রান্ত হলাম বুঝতে পারছি না। তবে আমার মনে হচ্ছে, বাজার থেকে আনা তরিতরকারির মাধ্যমে আক্রান্ত হতে পারি।
কিভাবে সুস্থ হলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে মানবজমিনকে তিনি বলেন, আমার আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে পরিচিত চারজন চিকিৎসক মোবাইল ফোনে ম্যাসেজ করে পাঠিয়েছে। এছাড়া পানিতে লেবু, আদা, গোলমরিচ, তেজপাতা গরম করে চা বানিয়ে খেয়েছি। এক ঘণ্টা পরপর গরম পানির ভাপ নিয়েছি। বেড শীট, রুম প্রতিদিন গরম পানি দিয়ে পরিস্কার করেছি। মহান আল্লাহকে ডেকেছি। পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে আল্লাহর কাছে সুস্থতার জন্য দোয়া করেছি। আল্লাহর রহমতে আমরা এখন পুরো পরিবার সুস্থ হয়ে গেছি। আমার কাছে মনে হয়েছে, মন থেকে আল্লাহর কাছে কোনো কিছু চাইলে কাউকে ফিরিয়ে দেন না।