বন্যায় দোহার-নবাবগঞ্জে কৃষি খাতে ক্ষতি ১৩ কোটি টাকা

60

শরিফ হাসান,নিউজ৩৯: কিছু দিন আগেই প্রলয়ঙ্করী বন্যার মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। সারাদেশের মতো ঢাকা জেলার পদ্মা তীরবর্তী দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলাও আক্রান্ত হয়েছিল বন্যায়। বন্যার পানি নেমে গেলেও বন্যার ক্ষত রেখে গেছে এই দুই উপজেলায়। শুধু কৃষি খাতেই ক্ষতির পরিমাণ ১৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। বন্যায় এবার বন্যার পানিতে কৃষি ফসল, মাছের খামার ও গ্রামীণ কাঁচাপাকা সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রাস্তাঘাট, মৎস্য খামার ও কৃষি খাত মিলে প্রায় শতাধিক কোটি টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর।

নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়নে প্রায় ১০ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার টাকার কৃষি ফসল বন্যার পানিতে বিনষ্ট হয়েছে। ধান,পাটসহ মৌসুমি কৃষি ফসলের ক্ষতিগ্রস্থ ইউনিয়ন গুলো অন্যতম, জয়কৃষ্ণপুর, শিকারীপাড়া, বারুয়াখালী, কৈলাইল চুড়াইন, বাহ্রা, নয়নশ্রী, যন্ত্রাইল ও শোল্লা ইউনিয়ন।

নবাবগঞ্জ উপজেলার জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের কৃষক সুনিল রায় বলেন, এবার বন্যার পানিতে তার ৩ বিঘা পাট তলিয়ে যায় ও ৪ বিঘা জমির ধান বিনষ্ট হয়। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায় আছে। উপজেলা বন্যা কবলিত এসব ইউনিয়নের বিভিন্ন মাছের খামার ও পুকুর থেকে প্রায় ৩কোটি ৩৫ লাখ টাকার মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে।

অন্য খবর  বাহ্রা ও কার্তিকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষার নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ

নবাবগঞ্জ উপজেলার জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের সবিতা রানী বলেন, তার স্বামী ৭ লাখ টাকা মাছের পোনা পুকুরে ছাড়েন, যা পদ্মার পানিতে ভেসে গেছে চলে গেছে।

নবাবগঞ্জের মেলেং গ্রামের মাছ চাষি হাবিবুর রহমান বলেন, তার মাছের খামারে রুই, কাতল, পুটি, তেলাপিয়া, বাটা মাছের ৩ লাখ টাকা পোনা ছাড়েন তিনি। বর্তমান বাজার মূল্য ৯ লাখ টাকা। হঠাৎ কালিগঙ্গা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তার পুকুরে সব মাছ ভেসে যায়।

নবাবগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রিয়াংকা সাহা বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্থ মৎস্য খামারীদের খোঁজ নিয়ে তালিকা তৈরী করেছি। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা।

এছাড়া ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থপনা অধিদপ্তরের আওতায় নবাবগঞ্জ উপজেলার প্রায় ২৫কিলোমিটার গ্রামীণ কাঁচা সড়ক পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ১১টি কালভার্ট চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এছাড়া নদীর পানিতে বিভিন্ন্ পাকা সড়ক তলিয়ে যাওয়াসহ গর্ত সৃষ্টির কারনে উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলেও নবাবগঞ্জ উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর জানিয়েছে।

অপরদিকে দোহার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন ইয়াকুব জানান, উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় বন্যার পানিতে সাড়ে ৪শ’ হেক্টর কৃষি জমির ফসল নষ্ট হয় হয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩কোটি টাকা। তিনি বলেন, পদ্মার পানি বৃদ্ধিসহ অতিবৃষ্টির কারনে চর অঞ্চলের সবজি ক্ষেতে পানি প্রবেশ করায়, এ বছর সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় ফসলের। ফলে অধিকাংশ কৃষকের ধান,পাট ও মৌসুমি সবজি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তারা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েন।

অন্য খবর  আব্দুর রহমান আকন্দ: সুস্থ্য রাজনীতির আলোক বর্তিকা

এছাড়া দোহার উপজেলায় প্রায় ১০ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক চলাচলে অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে এবং প্রায় ৪০ কিলোমিটার গ্রামীণ কাঁচা সড়ক এবছর, বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে আংশিক ক্ষতি হয়েছে বলে জানান, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবু সাইদ।

দোহার উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী, হানিফ মোহাম্মদ মুরশির্দী বলেন, পদ্মার তীরবর্তী দোহারে এবার বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে উপজেলার অধিকাংশ অভ্যান্তরিন সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে যার পরিমাণ প্রায় ১৬ কোটি টাকা।

আপনার মতামত দিন