5.1 C
Munich
মঙ্গলবার, এপ্রিল 1, 2025

ফরিদপুর থেকে মৈনট ঘাটঃ কোভিড ছড়ানোর আশংকা

শরিফ হাসান ও আল আমিন, news39.net: সোমবার ভোর ৪:৩০ মিনিট। news39.net এর একটি প্রতিনিধি দল উপস্থিত দোহারের মৈনট ঘাটে। সরেজমিনে দেখতে চায় প্রতিনিধি দলটি কেমন চলছে দোহারের প্রবেশ পথে লকডাউন। দেশব্যাপী লকডাউন শুরুর পূর্বেই দোহার-নবাবগঞ্জের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় দোহারের সাথে ফরিদপুরের সকল নৌরুট ও মানিকগঞ্জের সড়কপথ বন্ধ করে, কার্যত ঢাকা থেকে দোহার-নবাবগঞ্জ বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশ দিয়ে ভার্চ্যুয়াল মিটিং করেছিলেন স্থানীয় সাংসদ সালমান এফ রহমান এমপি।

অনেকর নিশ্চয় মনে আছে, কাজী নজরুল ইসলামের “খোকার সাধ” কবিতায় পড়েছিলেন “সূয্যিমামা জাগার আগে উঠব আমি জেগে/ হয়নি সকাল, ঘুমো এখন’- মা বলবেন রেগে/……../ হয়নি সকাল- তাই বলে কি সকাল হবে না ক? তেমনি দোহারে প্রশাসনের ঘুম ভেংগে জাগার আগেই, জেগে যায় মৈনট ঘাট। জেগে যায় সিএনজি চালকেরা। এদের সকাল ৬:৩০ টার পূর্বে অবস্থান মৈনটঘাট, কার্তিকপুর বাজার সহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আশেপাশে।

ভোর সকালেই এসব চালকেরা জেগে ওঠেন। অপেক্ষায় থাকেন, যাত্রী পারাপারের। মৈনট ঘাট দিয়ে মাছ ধরার ও পণ্য পরিবহনের ট্রলারে এসব যাত্রী পারাপার হোন। তারা এসে নামেন, ভাসমান রেস্তোরাঁর পূর্বপাশে। ঘাটের পাশেই ঢাকা জেলা পুলিশের রয়েছে একটি জনশূন্য টহল বোট। আর ঘাটের আধা কিলোমিটার দূরেই মৈনট পুলিশ ফাড়ি। সবাই তখন ঘুমে বা সকালের কাজে ব্যাস্ত। আর তখনই সক্রিয় ট্রলার ও সিএনজি চালকেরা। ইজারাদারদের সামনে এসব ঘটলেও, তারা জানান তারা কিছুই জানেন না।

ছবিঃ যাত্রী পারাপার হচ্ছে।

দেখা যায়, কিছুক্ষণ পর পর একটা করে মাছ ধরার নৌকা আসছে, আসছে বড় পণ্যবাহী ট্রলার। এসব ট্রলারে মাছ আনা হয় মৈনটের আড়ৎ এ বিক্রির জন্য। মাছ ও পণ্যের সাথে আসছেন যাত্রীরা। ফরিদপুর থেকে এসব যাত্রী নিয়ে আসছেন দোহার হয়ে ঢাকা যাওয়ার জন্য। মৈনটঘাট থেকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও কেরানীগঞ্জের কদমতলীর উদ্দেশ্যে এসব যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যাচ্ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা।

ছবিঃ যাত্রী ও কিছু আয়ের অপেক্ষায় সিএনজি চালকেরা। 

মৈনট ঘাটে সিএনজিচালিত অটোরিকশার স্ট্যান্ডে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চালক news39.net টিমকে যাত্রী ভেবে বলেন, ‘প্রতিদিন অটোরিকশা নিয়ে রাজধানীতে তারা যাতায়াত করেন। তবে তারা রাজধানীর ভেতরে যান না। কেরানীগঞ্জের কদমতলী আর মোহাম্মদপুরের বছিলা পর্যন্ত তারা যাত্রী নিয়ে যান, বলে জানান। আর সকালে যাওয়া ক্ষেত্রে তেমন কোনো সমস্যা হয় না। মাঝে মাঝে সমস্যা হলে, ম্যানেজ করে নেন।’ কিভাবে কি ম্যানেজ করে জানতে চাইলে, সিএনজি নিয়ে সরে পড়েন তিনি।

সরকারি বিধিনিষেধ না মেনে অটোরিকশা চালাচ্ছেন কেন, জানতে চাইলে পাশের চালক জানান, আমরা পেটের দায়ে নামি। আমাদের কি দেখার কেউ আছে? বাড়ীতে পোলাপান না খাইয়া থাকলে কি কোন বাপ বইস্যা থাকতে পারে? আমাগো খাওন দেন, খরচ দেন, একদিনও বাইর হমু না। তাই, প্রশাসনের চোখে ফাঁকি দিয়ে সিএনজি চালাই। পারবেন খালি আমাগো সাথে, বড়লোক আর নেতাগো সাথে পারবেন? এই বলে তড়িঘড়ি করে অটোরিকশা নিয়ে সরে পড়েন তিনিও।

মৈনটঘাট থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকের সঙ্গে কদমতলী পর্যন্ত যেতে ভাড়া নিয়ে দর-কষাকষি করেন যাত্রীরা। উচ্চ ভাড়ায় তারা চলে যান তাদের গন্তব্যে। তেমনিভাবে, দেখা যায়, প্রায় প্রতি যাত্রীই পরিবারের ২–৩ জন সদস্য নিয়ে তিনি ঢাকা যাচ্ছেন।

লকডাউনের বিধিনিষেধ অমান্য করে কেন ঢাকা যাচ্ছেন, জানতে চাইলে যাত্রীরা বলেন, ‘আমাদের সব ঢাকাতে। ঈদের ছুটিতে এসেছিলাম, এখন চলে যাচ্ছি। চাকরি করি, তাই ঢাকাতে যাচ্ছি। এরপর একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় জনপ্রতি ২০০ টাকা ভাড়ায় কেরাণিগঞ্জ কদমতলীর উদ্দেশে রওনা।

এই ধরনের পারাপার ও যাতায়াতে দোহারে সংক্রমণ বাড়ছে বলেই আশংকা স্থানীয় জনসাধারণের। এদের মধ্যে অনেকে রয়েছেন করোনা রোগী। দোহার নবাবগঞ্জ উপজেলায় এখন রাস্তাঘাটে করোনা রোগী। জেনে বা না জেনে তারা ঘোরাঘুরি করছেন। ডাক্তার দেখাতে, ওষুধ কিনতে, অক্সিজেন সাপোর্ট নিতে, ঢাকায় উন্নত চিকিৎসা নিতে রাস্তায় রাস্তায় বিভিন্ন যানবাহনে এদের ঘোরাঘুরি। পূর্বের মতো লকডাউন এখন এতোটা কঠিনও নয়।

যদিও প্রতিদিনই সরকারি বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে প্রশাসনের তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। প্রতিদিনই সকাল -সন্ধ্যা অভিযান চালান দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এফএম ফিরোজ মাহমুদ নাঈম  ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র। সাথে দোহার থানা পুলিশের অফিসার ইন চার্জ মোস্তফা কামাল। প্রতিদিনই তাঁরা বিধিনিষেধ ও স্বাস্থ্যবিধি না মানার জন্য বিভিন্ন জনকে করছেন জরিমানা করছেন।

মৈনটের স্থানীয় ট্রলার চালক শেখ কাইমদ্দিন জানান, যারা মাছ ধরে, আমরা তাদেরকেই নিয়ে আসি। মাছের সাথে যাত্রী কেনো পারাপার করছেন তাকে জিজ্ঞেস করা হলে;  তিনি বলেন, এক দুই জন মাছ বিক্রিতার সাথে আসে। সবারইতো জরুরি প্রয়োজন আছে। সরকারতো সব দিতে পারে না। মানুষেরও সুবিধা অসুবিধা আছে। আর কেউ অনুরোধ করলে মানুষ হিসাবেতো সব ফালাইয়া দিবারও পারি না। আপনারা কি পারবেন? তবে, এমনি কাউরে আনি না।

এ বিষয় মৈনটঘাট ইজারাদারের সাথে কথা হলে তিনি জানান, মাছের অড়ৎ আর আমাদের ঘাট এক না। আমরা মাছের আড়ৎ এককভাবে নেওয়ার জন্য চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু সেটা আমরা পাইনি। মাছের আড়ৎ এর কোন ইজারা আমাদের নাই।

তবে, news39.net এর প্রতিনিধি ঘুরে মৈনট ঘাট বা মাছের আড়ত কোথায়ই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে, ইজারাদারদের থেকে স্বাস্থ্য সুরক্ষার কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। জেলেরা, নিলামকারী প্রায় কারো মুখেই নেই মাস্ক। ক্রেতাদের কয়েকজনের আছে, আবার যাদের আছে, তাদের মাস্ক মুখের উপরে, নাকের নিচে। মৈনট ঘাট থেকে দোহার-নবাবগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে মাছ বিক্রেতারা মাছ নিয়ে যান, আর এভাবেই ব্যাপকভাবে করোনা ছড়িয়ে পড়েছে বলে আশাংকা জনসাধারণের।

বিষয়টি news39.net এর প্রতিনিধি টিমের মাধ্যমে জানার পর দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজ মাহমুদ নাঈম জানান, অতি দ্রুতই তারা ব্যবস্থা নিবেন। কোন প্রকার অনিয়মেই ছাড় দেয়া হবে না।

আপনার মতামত দিন
এই রকম আরও খবর
error: Content is protected !!