নেতৃত্ব বিকাশের জন্য প্রত্যেকে নির্বাচনকে বেঁছে নেন– পৌর নির্বাচন নিয়ে রহমান আকন্দ

1707
আব্দুর রহমান আকন্দ

আব্দুর রহমান আকন্দ, দোহার উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমান জয়পাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্র সংসদের সর্বশেষ (১৯৯৬) নির্বাচিত জিএস। দোহার পৌরসভার একজন নাগরিক হিসাবে – নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত জনগণের পক্ষ থেকে তিনি বলেছেন তার স্বপ্নের কথা, তার আশার কথা, একজন রাজনীতিক হিসাবে কেমন হওয়া উচিত জনগণের সেবক এই পৌরসভা-  এই পরিকল্পনার কথা। নিউজ৩৯-কে দেয়া একান্ত এই সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হলো পাঠকদের সামনে।

নামঃ রহমান আকন্দ; আব্দুর রহমান আকন্দ, পশ্চিম লটাখোলা, দোহার, ঢাকা

পেশাঃ আমি ব্যবসা করি। নিজেকে স্বাধীন রাখার জন্য ব্যবসার চেয়ে কিছু উপযুক্ত আছে বলে আমার মনে হয় নি।

প্রশ্নঃ রাজনীতিতে কেন?

রহমান আকন্দঃ আমি মানুষের কথা ভেবেই রাজনীতিতে এসেছি। আমি জগণকে ভাবি আমারই পরিবারের আমার বাবা-মা বা ভাই-বোন। তাই মানুষের সুখে দুঃখে সব সময় তাদের পাশে থাকতে চাই দোহার পরিবারের সদস্য হিসাবে। আর পৌরসভার বাসিন্দা হিসাবে পৌরসভার বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে আমি এগিয়ে আসতে চাই। মুলত মানুষের সেবা করার জন্যই আমার রাজনীতিতে আসা।

প্রশ্নঃ রাজনীতিতে এসেছেন কবে?

রহমান আকন্দঃ রাজনীতিতে আমার হাতে খড়ি আজ থেকে ২৩ বছর আগে। ১৯৯২ সালে রাইপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সেক্রেটারি হিসাবে আমার রাজনীতিতে পথ চলা শুরু। পরবর্তীতে নিজ যোগ্যতায় ১৯৯৩ সালে দোহার উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হই এবং একই সাথে ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের সদস্য নির্বাচিত হই।

প্রশ্নঃ কখনো কি নির্বাচন করেছেন?

রহমান আকন্দঃ আমি যে সময় ছাত্ররাজনীতি শুরু করেছি তখন ছিল বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতির স্বর্ণ যুগ। তখন ছাত্র রাজনীতিতে যোগ্যতার সম্মান ছিল। কেউ চাইলেই সব কিছু করতে পারতো না – যোগ্যতা ছাড়া। আর তখন দোহার উপজেলার ছাত্ররাজনীতির মুল কেন্দ্র ছিল জয়পাড়া ডিগ্রি(বিশ্ববিদ্যালয়) কলেজ। তখন পুরো দোহার থানার রাজনীতি ছিল কলেজ মুখী। সেই সময় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে পুরো দোহার থানায় সাজ সাজ রব পরে যেত। আর সেই সময়েই আমি ছাত্র সংসদ নির্বাচন করেছি। ১৯৯৪ সালে ছাত্রলীগের মনোনয়ন নিয়ে আমি এজিএস পদে নির্বাচন করি। পরবর্তী ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ১৯৯৬ সালে আমি ছাত্রলীগের পক্ষে থেকে জিএস নির্বাচিত হই। সেই সময় জয়পাড়া কলেজের ভিপি নির্বাচিত হয় আমার বন্ধু আলমাস উদ্দিন। আর আমি নির্বাচিত হই জিএস। সেটাই ছিল জয়পাড়া কলেজ ছাত্র সংসদের শেষ নির্বাচন। পরবর্তীতে আর কখনোই নির্বাচন হয়নি। ফলে দোহারে ছাত্র রাজনীতিতে যোগ্যতা, মেধা ও মননশীলতার একটি ঘাটতি তৈরি হয়।

প্রশ্নঃ আপনার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা?

রহমান আকন্দঃ আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে দুইটি। আমি এই ঘটনা দুইটিকে আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট মনে করি। এর একটি হচ্ছে ১৯৯৬ সালে আমি যখন সাধারন ছাত্রছাত্রীদের ভোটে জিএস নির্বাচিত হই সেই ঘটনা। এই ঘটনা আমাকে সম্পূর্ণ রকমে পাল্টে দেয়। সেই নির্বাচনই দোহারে আওয়ামীলীগের প্লাটফর্ম গড়ে দেয় দোহারে। আজ যারা রাজনীতিতে সিনিয়র তারা জানেন, সেই নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা দোহারে ছাত্রলীগ বা আওয়ামী লীগের একটা অস্বিত্ব প্রমাণ করতে সক্ষম হই। যার ধারাবাহিকতায় আজ দোহারে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ মন্ত্রী, এমপি বা উপজেলা চেয়ারম্যান পেয়েছে।

অন্য খবর  দোহারে স্বেচ্ছাসেবকলীগের পক্ষ থেকে বস্ত্র বিতান

এরপরের যে ঘটনাটি আমাকে প্রভাবিত করেছে সেটা হলো ২০০০ সালে প্যারিসে ইউনেস্কো কর্ত্রিক শেখ হাসিনাকে ইউনেস্কো শান্তি পুরস্কার প্রদানের দিন। সেই দিন আমি প্যারিসে সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম। ছাত্রলীগ নেতা হিসাবে আমি বাংলাদেশ অ্যাম্বাসি থেকে আমন্ত্রিত হয়েছিলাম।  সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা কেউ আমি আমার জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসাবে আমি মনে করি। সেদিন নেত্রীর আহবানে সাড়া দিয়ে পরবর্তীতে দ্রুততম সময়ে আমি প্রবাস থেকে দেশে ফিরে আসি এবং আমার নতুন রাজনৈতিক জীবন শুরু করি।

প্রশ্নঃ আপনি কেন পৌরসভা নির্বাচন করবেন?

রহমান আকন্দঃ মানুষ সব সময় তার কাজের প্রকাশের জন্য একটা মাধ্যম চায়, কিন্তু ব্যক্তি উদ্যোগে সেটা সব সময় করা হয়ে উঠে না। সে জন্য দরকার একটা প্লাট ফর্ম। আর স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করা হচ্ছে এই প্লাট ফর্মের সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজন। আর সে জন্যই আমি পৌরসভা নির্বাচন করতে চাই। যেহেতু সেই ছাত্রজীবন থেকেই দলের সাথে আছি, জনগনের সাথে আছি, দলের জন্য কাজ করেছি, জনগনের জন্য কাজ করেছি, কোন অপরাধের সাথে জড়িত হয়েছি সেটা আমার শত্রুও বলতে পারবে না। তাই আমি নির্বাচন করতে চাই। নির্বাচিত হতে পারলে দলের জন্য, সাধারন মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। তারপর দলীয় সিদ্ধান্ত। আমি কখনোই দলের বাইরে যাবো না। দল যে সিদ্ধান্ত দেবে সেটাই মেনে নিব।

প্রশ্নঃ দোহার পৌরসভার প্রধান সমস্যা কি?

রহমান আকন্দঃ দোহার পৌরসভার সমস্যার অন্ত নেই। দোহার পৌরসভা সমস্যার সাগরে ডুবে রয়েছে। একটা প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা হিসাবে দোহার পৌরসভায় সেবারমান খুবই কম সেসাথে  রাজস্ব আদায়ের হার একেবারেই কম। যে একেবারেই অগ্রহণ যোগ্য। শুধুমাত্র হাউজিং ট্যাক্সের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে দোহার পৌরসভা। যা কোন মতেই কাম্য নয়। আর ড্রেনেজ ব্যবস্থার কথা কি বলবো। একটু বৃষ্টি হলেই হাটু পানি জমে পৌরসভার বেশির ভাগ জায়গায়। আর নির্বাচন না হওয়ায় পৌরসভার হর্তা-কর্তাদের পৌরবাসীর প্রতি দায়বদ্বতা নেই বললেই চলে। ফলে পৌরসভার এই সমস্যাটার সমাধান হচ্ছেই না।

তাছাড়া প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল বলে এই উপজেলায় প্রচুর মটোর সাইকেল চলাচল করে। ফলে প্রতিদিনই ঘটে দুর্ঘটনা। আমি বর্তমান মেয়রকে বলেছিলাম দোহার পৌরসভার দুর্ঘটনা প্রবন স্থান গুলোতে(বাশতলা মোড়, করম আলীর মোড়, থানার মোড়, দোহার বাজার মোড়, কাজীর চর মোড়) মুর‍্যাল/ চৌরাস্তায় তৈরি করতে। এর ফলে এই পৌরসভায় দুর্ঘটনার হার শতকরা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ কমে যেত বলে আমার বিশ্বাষ।

এছাড়া একটি আধুনিক পৌরসভা হিসাবে এই দোহার পৌরসভার রাস্তা ঘাটের নাম করন কখনোই করা হয়নি। আর সংস্কারও করা হয় নি। তাছাড়া পৌর পার্ক, খেলার মাঠ, বাস স্ট্যান্ড, ঈদগাহ, কবরস্থান কিছুই নেই। উল্টো পৌরসভার বিভিন্ন খাস জমিগুলো ভুয়া ভূমিহিনদের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আমি বারবার এর বিরোধীতা করলেও দোহার উপজেলা ও পৌরসভা আমার কথার কোন গুরুত্ব দেয় নি। উচ্চ মূল্যের এই জমিগুলোর অভাবে ভবিষেৎ পৌরসভার উন্নয়ন কাজও থাকবে থেমে। কিন্তু এই নিয়ে কারো মাথা ব্যথা নেই। আসলে দোহার পৌরসভার সমস্যা বলে শেষ করা যাবে না।

অন্য খবর  প্রার্থী পরিচিতিতে অনিচ্ছাকৃত ভুলে আমরা আন্তরিক দুঃখিত

প্রশ্নঃ মাদক দ্রব্যের বিস্তার রোধে আপনার ভূমিকা কি হবে?

রহমান আকন্দঃ মাদক দ্রব্যের বিস্তার রোধে আমার যতটুকু করা সম্ভব ঠিক ততটুকু আমি করবো। একজন মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ীকে আমি একজন খুনির সাথে তুলনা করবো। তারা দুইজনই সমাজের ক্ষতি করে যাচ্ছে। আমি যদি দোহার পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হই তাহলে আমি আমার প্রশাসনিক ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করবো মাদকের বিরুদ্ধে। দোহার পৌরসভা থেকে মাদককে উচ্ছেদ করাই হবে আমার অন্যতম প্রধান কাজ। এক্ষেত্রে যুবকদের সপ্রিক্ত করবো।

প্রশ্নঃ নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ও দোহার পৌরসভার নারী জাগরনে আপনার ভূমিকা কেমন থাকবে?

রহমান আকন্দঃ দোহার পৌরসভার ভিতরে ইভটিজিং প্রতিরোধে সাধারন মানুষকে সম্পৃক্ত করা হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে ইভটিজিং প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হবে। স্কুল থেকে ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীরা যাতে ইভটিজুং বা এই ধরনের সামাজিক অপরাধে জড়িয়ে না পর এসেই দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখবে পৌরসভা। বাল্য বিবাহ রোধে অভিভাবকদের সচেতন করবো। নারী শিক্ষার জন্য পৌরসভা থেকে বৃত্তি দেয়ার ব্যবস্থা করবো। আর নারী নেতৃত্ব সৃষ্টিতে কাজ করবে পৌরসভা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেহেতু নারী জাগরনের অগ্রদূত, সেহেতু একজন আওয়ামী লীগ কর্মী হিসাবে সবসময় নারী জাগরনে পৌরমেয়র হিসাবে আমার যা ভূমিকা তা সব সময় থাকবে।

প্রশ্নঃ পৌরবাসী কেন আপনাকে ভোট দিবে?

রহমান আকন্দঃ কারন আমি সব সময় দোহার পৌরবাসীর সাথে ছিলাম। পৌরবাসীর সুখে-দুঃখে তাদের পাশে ছিলাম। আমি বলেছি দোহারবাসী আমার একটি পরিবার। এছাড়া সংখ্যা লঘু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন বিপদে এগিয়ে গেছি। তাদের জমি দখলে বাধা হয়ে দাড়িয়েছি। আমি বিশ্বাষ করি একজন সৎ, সাহসী ও প্রগতিশীল মানুষ হিসাবে আমাকে দোহার পৌরবাসী আমাকে ভোট দিবে।

প্রশ্নঃ যদি দল আপনাকে মনোনয়ন না দেয় তাহলে কি করবেন?

রহমান আকন্দঃ আমি কখনোই অবাধ্য রাজনৈতিক কর্মী নই। আমি সব সময় বিশ্বাষ করি দল যে সিদ্ধান্ত নিবে সেটাই ঠিক হবে। তাই দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে নির্বাচন করবো আর মনোনয়ন যদি না দেয় তাহলে দল যাকে মনোনয়ন দিবে তার পক্ষে কাজ করবো।

প্রশ্নঃ সর্বশেষ কিছু বলবেন?

রহমান আকন্দঃ আমি সবার দোয়া চাই। আমি সারা জীবন সুস্থ রাজনীতি করে সেছি। ভবিষ্যতেও তা বজায় রেখে নিজেকে দেশ ও জনগণের সেবায় আরো বেশি সম্পৃক্ত হতে চাই। নিউজ৩৯ কে ধন্যবাদ আমাকে জনগণের সামনে এই সুযোগ তৈরি করে দেয়ায়।

নিউজ৩৯এর পক্ষ থেকে আপনাকেও ধন্যবাদ; আমাদেরকে সময় দেয়ায়।

সাক্ষাৎকার গ্রহনেঃ আছিফুর রহমান, সিনিয়র রিপোর্টার, নিউজ৩৯.নেট

আপনার মতামত দিন