হাদিস নং ১৫৫৭: জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আলী (রাঃ)-কে ইহরাম বহাল রাখার আদেশ দিলেন, এরপর জাবির (রাঃ) সুরাকাহ (রাঃ)-এর উক্তি বর্ণনা করেন। মুহাম্মাদ ইবনু বকর (রহ.) ইবনু জুরাইজ (রহ.) হতে অতিরিক্ত বর্ণনা করেন; নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আলী (রাঃ)-কে বললেনঃ হে ‘আলী! তুমি কোন্ প্রকার ইহরাম বেঁধেছ? ‘আলী (রাঃ) বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ইহরামের অনুরূপ। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাহলে কুরবানীর পশু প্রেরণ কর এবং ইহরাম অবস্থায় যেভাবে আছ সেভাবেই থাক। (১৫৬৮, ১৫৭০, ১৬৫১, ১৭৮৫, ২৫০৬, ৪৩৫২, ৭২৩০, ৭৩৬৭) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৪৫৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৪৬০)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারী রাবীঃ জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ)
হাদিস নং ১৫৫৯: আবূ মূসা (আশ‘আরী) (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ইয়ামানে আমার গোত্রের নিকট পাঠিয়েছিলেন; তিনি (হাজ্জ-এর সফরে) বাত্হা নামক স্থানে অবস্থানকালে আমি (ফিরে এসে) তাঁর নিকট উপস্থিত হলাম। তিনি আমাকে বললেনঃ তুমি কোন্ প্রকার ইহরাম বেঁধেছ? আমি বললাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ইহরামের অনুরূপ আমি ইহরাম বেঁধেছি। তিনি বললেনঃ তোমার সঙ্গে কুরবানীর পশু আছে কি? আমি বললাম, নেই। তিনি আমাকে বায়তুল্লাহ-এর তাওয়াফ করতে আদেশ করলেন। আমি বায়তুল্লাহ-এর তাওয়াফ এবং সাফা ও মারওয়ার সা‘য়ী করলাম। পরে তিনি আদেশ করলে আমি হালাল হয়ে গেলাম। অতঃপর আমি আমার গোত্রীয় এক মহিলার নিকট আসলাম। সে আমার মাথা অাঁচড়িয়ে দিল অথবা বলেছেন, আমার মাথা ধুয়ে দিল। এরপর ‘উমার (রাঃ) তাঁর খিফাফতকালে এক উপলক্ষে আসলেন। (আমরা তাঁকে বিষয়টি জানালে) তিনি বললেনঃ কুরআনের নির্দেশ পালন কর। কুরআন তো আমাদেরকে হাজ্জ ও ‘উমরাহ পৃথক পৃথকভাবে যথাসময়ে পূর্ণরূপে আদায় করার নির্দেশ দান করে। আল্লাহ বলেনঃ ‘‘তোমরা হাজ্জ ও ‘উমরাহ আল্লাহ’র উদ্দেশে পূর্ণ কর’’- (আল-বাকারাঃ ১৯৬)। আর যদি আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সুন্নাতকে অনুসরণ করি, তিনি তো কুরবানীর পশু যবহ্ করার আগে হালাল হননি। (১৫৬৫, ১৭২৪, ১৭৯৫, ৪৩৪৬, ৪৩৯৭) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৪৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৪৬২)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারী রাবীঃ আবূ মূসা আশ’আরী (রাঃ)
হাদিস নং ১৫৬০: ‘আয়িশাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাজ্জ-এর মাসে, হাজ্জ-এর দিনগুলোতে, হাজ্জ-এর মৌসুমে আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে (হাজ্জে) বের হয়ে সারিফ নামক স্থানে আমরা অবতরণ করলাম।‘ আয়িশাহ (রাযি.) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সহাবীগণের নিকট বেরিয়ে ঘোষণা করলেনঃ যার সাথে কুরবানীর পশু নেই এবং যে এ ইহরাম ‘উমরাহ’র ইহরামে পরিণত করতে আগ্রহী, সে তা করতে পারবে। আর যার সাথে কুরবানীর পশু আছে সে তা পারবে না। ‘আয়িশাহ্ (রাযি.) বলেন, কয়েকজন সহাবী ‘উমরাহ করলেন, আর কয়েকজন তা করলেন না। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর কয়েকজন সহাবী (দীর্ঘ ইহরাম রাখতে) সক্ষম ছিলেন এবং তাঁদের সাথে কুরবানীর পশু ছিল। তাই তাঁরা (শুধু) ‘উমরাহ করতে (ও পরে হালাল হয়ে যেতে) সক্ষম হলেন না। তিনি আরো বলেন, আমি কাঁদছিলাম, এমন সময় আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট উপস্থিত হয়ে বললেনঃ ওহে কাঁদছ কেন? আমি বললাম, আপনি সহাবাদের যা বলেছেন, আমি তা শুনেছি, কিন্তু আমার পক্ষে ‘উমরাহ করা সম্ভব নয়। তিনি বললেনঃ তোমার কী হয়েছে? আমি বললাম, আমি সালাত আদায় করতে পারছি না (আমি ঋতুমতী)। তিনি বললেনঃ এতে তোমার কোন ক্ষতি নেই, তুমি আদম-সন্তানের এক মহিলা। সকল নারীর জন্য আল্লাহ যা নির্ধারণ করেছেন, তোমার জন্যেও তাই নির্ধারণ করেছেন। কাজেই তুমি হাজ্জ-এর ইহরাম অবস্থায় থাক। আল্লাহ তোমাকে ‘উমরাহ করার সুযোগও দিতে পারেন। তিনি বলেন, আমরা হাজ্জ-এর জন্য বের হয়ে মিনায় পৌঁছলাম। সে সময় আমি পবিত্র হলাম। পরে মিনা হতে ফিরে (বাইতুল্লাহ পৌঁছে) তাওয়াফে যিয়ারত আদায় করি। ‘আয়িশাহ্ (রাযি.) বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে সর্বশেষ দলে বের হলাম। তিনি মুহাস্সাব নামক স্থানে অবতরণ করেন, আমি তাঁর সাথে অবতরণ করলাম। এখানে এসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আবদুর রাহমান ইবনু আবূ বাকর (রাঃ)-কে ডেকে বললেনঃ তোমার বোন (‘আয়িশা)-কে নিয়ে হারাম সীমারেখা হতে বেরিয়ে যাও। সেখান হতে সে উমরার ইহরাম বেঁধে মক্কা হতে ‘উমরাহ সমাধা করলে তাকে নিয়ে এখানে ফিরে আসবে। আমি তোমাদের আগমণ পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকব। ‘আয়িশাহ্ (রাযি.) বলেন, আমরা বের হয়ে গেলাম এবং আমি ও আমার ভাই তাওয়াফ সমাধা করে ফিরে এসে প্রভাত হওয়ার আগেই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট পৌঁছে গেলাম। তিনি বললেনঃ কাজ সমাধা করেছ কি? আমি বললাম জী-হাঁ। তখন তিনি রওয়ানা হওয়ার ঘোষণা দিলেন। সকলেই মদিনার দিকে রওয়ানা করলেন।
ضَيْرِ শব্দটি ضَارَ-يَضِيرُ-ضَيْرًا (ক্ষতিকর) শব্দ হতে উদগত। এমনই ভাবে ضَارَ يَضُورُ ضَوْرًا,ضَرَّ يَضُرُّ-ضَرًّا- সমার্থবোধক। (২৯৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৪৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৪৬৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারী রাবীঃ আয়িশা (রাঃ)
হাদিস নং ১৫৬১: ‘আয়িশাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে বের হলাম এবং একে হাজ্জের সফর বলেই আমরা জানতাম। আমরা যখন (মক্কা্য়) পৌঁছে বাইতুল্লাহ-এর তাওয়াফ করলাম তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিলেনঃ যারা কুরবানীর পশু সঙ্গে নিয়ে আসেনি তারা যেন ইহরাম ছেড়ে দেয়। তাই যিনি কুরবানীর পশু সঙ্গে আনেননি তিনি ইহরাম ছেড়ে দেন। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিণীগণ তাঁরা ইহরাম ছেড়ে দিলেন। ‘আয়িশাহ্ (রাযি.) বলেন, আমি ঋতুমতী হয়েছিলাম বিধায় বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করতে পারিনি। (ফিরতি পথে) মুহাসসাব নামক স্থানে রাত যাপনকালে আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সকলেই ‘উমরাহ ও হাজ্জ উভয়টি সমাধা করে ফিরছে আর আমি কেবল হাজ্জ করে ফিরছি। তিনি বললেনঃ আমরা মক্কা পৌঁছলে তুমি কি সে দিনগুলোতে তওয়াফ করনি? আমি বললাম, জী-না। তিনি বললেন, তোমার ভাই-এর সাথে তান্‘ঈম চলে যাও, সেখান হতে ‘উমরাহ’র ইহরাম বাঁধবে। অতঃপর অমুক স্থানে তোমার সাথে সাক্ষাৎ ঘটবে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কী বললে! তুমি কি কুরবানীর দিনগুলোতে তাওয়াফ করনি! আমি বললাম, হাঁ করেছি। তিনি বললেনঃ তবে কোন অসুবিধা নেই, তুমি চল। ‘আয়িশাহ্ (রাযি.) বলেন, এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে এমতাবস্থায় আমার সাক্ষাৎ হলো যখন তিনি মক্কা ছেড়ে উপরের দিকে উঠছিলেন, আর আমি মক্কার দিকে অবতরণ করছি। অথবা ‘আয়িশাহ্ (রাযি.) বলেন, আমি উঠছি ও তিনি অবতরণ করছেন। (২৯৪, মুসলিম ১৫/১৭, হাঃ ১২১১, আহমাদ ২৬২২৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৪৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৪৬৪)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারী রাবীঃ আয়িশা (রাঃ)
গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী
অধ্যায়ঃ হাজ্জ
পাবলিশারঃ তাওহীদ পাবলিকেশন