হাদিস নং ৪২৪৩: আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বসা ছিলাম। তিনি ফিতনা সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনা করলেন, এমন কি তিনি আহলাস ফিতনা সম্পর্কে বললেন। তখন একজন বললো, ‘আহলাস’ ফিতনা কি? তিনি বললেন, পলায়ন ও লুটতরাজ। অতঃপর আসবে একটি ফিতনা, যা হবে আনন্দদায়ক, এর অন্ধকারাচ্ছন্ন ধুয়া বের হবে, আমার পরিবারের জনৈক ব্যক্তির দু’ পায়ের নীচ থেকে। সে ধারণা করবে যে, সে আমার অন্তর্ভুক্ত, অথচ সে আমার অন্তর্ভুক্ত নয়। কারণ আমার বন্ধু হচ্ছে আল্লাহভীরু ব্যক্তিগণ। অতঃপর জনগণ এমন ব্যক্তির অধীনে একতাবদ্ধ হবে। সে যেন পাজরের উপর কোমরের হাড় সদৃশ।
অতঃপর তিনি ‘দুহায়মা’ বা ঘন অন্ধকারময় ফিতনা প্রসঙ্গে বলেন, সেই ফিতনা এই উম্মাতের কোনো লোককেই একটি চপেটাঘাত না করে ছাড়বে না। অতঃপর যখন বলা হবে যে, তা শেষ হয়ে গেছে, তখনই তা আরো প্রসারিত হবে। এ সময়ে যে লোকটি সকালে মু‘মিন ছিলো সন্ধ্যায় সে কাফির হয়ে যাবে। অবশেষে সব মানুষ দু’টি শিবিরে বিভক্ত হবে। একটি হবে ঈমানের শিবির, যেখানে মুনাফিকী থাকবে না। আর একটি হবে মুনাফিকীর শিবির, যেখানে ঈমান থাকবে না। যখন তোমাদের এ অবস্থা হবে, তখন দাজ্জালের আত্মপ্রকাশের অপেক্ষা করবে ঐ দিন বা তার পরের দিন থেকে।[1]
মিশকাত হা/ ৫২৯৩।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
হাদিস নং ৪২৪৪: সুবাই ইবনু খালিদ (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, তুসতার বিজয় হওয়ার পর কিছু খচ্চর ক্রয় করার জন্য আমি কুফায় আসি। আমি একটি মাসজিদে প্রবেশ করে কয়েকজন লোক দেখতে পেলাম এবং মাঝখানে জনৈক ব্যক্তি বসে আছেন। তুমি তাকে দেখেই চিনতে পারবে যে, তিনি হিজাজের অধিবাসী। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, তিনি কে? উপস্থিত জনতা আমার প্রতি অসন্তুষ্টের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, তুমি কি তাঁকে চেনো না? তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবী হুযাইফাহ ইবনুল ইয়ামেন (রাঃ)। অতঃপর হুযাইফাহ (রাঃ) বলেন, লোকেরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কল্যাণ সম্পর্কে প্রশ্ন করতো। আর আমি তাঁকে অকল্যাণ সম্পর্কে প্রশ্ন করতাম। এ কথা শুনে জনতা তা অপছন্দ করতো। নিশ্চয়ই আমি প্রশ্ন করেছি, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি ধারণা করেন যে, মহান আল্লাহ যে কল্যাণ আমাদের দিয়েছেন, এর পরে কি কোনো অকল্যাণ আসবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ।
আমি বললাম, তাহলে তা থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় কি? তিনি বললেন, তলোয়ার। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! তারপর কি হবে? তিনি বললেনঃ পৃথিবীতে যদি আল্লাহর কোনো খলীফা থাকে, আর সে যদি তোমার পিঠে আঘাত করে এবং তোমার সম্পদ ছিনিয়ে নেয়, তবুও তার আনুগত্য করো, অন্যথায় তুমি বৃক্ষের কান্ড সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে মৃত্যু বরণ করো। আমি বললাম, তারপর কি হবে? তিনি বললেন, তারপর আগুন ও পানির নহর নিয়ে দাজ্জাল আত্মপ্রকাশ করবে। যে ব্যক্তি তার আগুনে পতিত হবে, সে তার প্রতিদান অবশ্যই পাবে এবং তার গুনাহ মাফ করা হবে। আর যে তার নহরে পতিত হবে, তার অপরাধের শাস্তি অবধারিত হবে এবং সওয়াব বরবাদ হবে। তিনি বলেন, আমি বললাম, তারপর কি হবে? তিনি বললেনঃ অতঃপর কিয়ামাত সংঘটিত হবে।
আহমাদ।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
হাদিস নং ৪২৪৫: খালিদ ইবনু খালিদ আল-ইয়াশকুরী (রহঃ) সূত্রে উপরের বর্ণিত হাদীসে হুযাইফাহ (রাঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম তরবারির পরে কি হবে? তিনি বলেন, মানুষ আবর্জনা বা ফিতনায় মগ্ন থাকবে এবং ষড়যন্ত্রমূলক সন্ধি করবে। অতঃপর অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, কাতাদাহ একথার দ্বারা আবূ বাকরের যুগের মুরতাদদের ফিতনাকেই বুঝাতেন। আর তিনি أَقْذَاءٍ অর্থ বলতেন, قَذى অর্থ কলঙ্ক هُدْنَةٌ সাময়িক যুদ্ধবিরতি। دَخَنٍ বিদ্বেষ, অপকারেচ্ছা।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
হাদিস নং ৪২৪৬: নাসর ইবনু আসিম আল-লাইসী (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা লাইস গোত্রের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আল-ইয়াশকুরীর নিকট উপস্থিত হলে তিনি বললেন, আপনারা কোন গোত্রের লোক? আমরা বললাম, আমরা লাইস গোত্রের, আপনার নিকট হুযাইফাহ (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীস জানার জন্য এসেছি। অতএব তিনি সেই হাদীস বর্ণনা করেন। হুযাইফাহ বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এই কল্যাণময় পরিবেশের পর কি অকল্যাণ আসবে? তিনি বললেন, ফিতনা আসবে। তিনি বললেন, হে হুযাইফাহ! তুমি আল্লাহর কিতাব পড়ো এবং তাতে যা আছে তার অনুসরণ করো। একথা তিনি তিনবার বলেন। হুযাইফাহ বলেন, আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল! এই অকল্যাণের পর আবার কল্যাণ আসবে কি? তিনি বললেন, খিয়ানাত ও মুনাফিকীর সঙ্গে সন্ধি করা হবে, আর কপট একটি দল হবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! খিয়ানাতের সঙ্গে সন্ধি বলতে কি বুঝায়? তিনি বললেন, মানুষের অন্তরে যেরূপ ছিলো, সে অবস্থায় আর ফিরে যাবে না। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! কল্যাণকর অবস্থার পর কি অকল্যাণ ফিরে আসবে? তিনি বললেন, অন্ধকারাচ্ছন্ন ফিতনা সৃষ্টি হবে, আর সেই সময় ভ্রান্ত ‘আকিদাহ-বিশ্বাসের উপর (জাহান্নামের) আগুনের দিকে একদল লোক আহবান করবে। হে হুযাইফাহ! তখন তুমি যদি বৃক্ষমূল আকড়ে ধরে মরে যেতে পারো তবে তা তোমার জন্য তাদের কাউকে অনুসরণ করার চাইতে উত্তম হবে।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
হাদিস নং ৪২৪৭: হুযাইফাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তুমি যদি তখন কোনো খলীফাহ (শাসক) না পাও, তবে তুমি মরে যাওয়া পর্যন্ত পলায়ন করতে থাকো। অতঃপর তুমি যদি কোনো বৃক্ষমূল শক্তভাবে আকড়ে ধরে মরে যেতে পারো…। তিনি হাদীসের শেষাংশে বলেন, আমি বললাম, এরপর কি হবে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন. কেউ যদি তখন ঘোড়ার বাচ্চা প্রসব করাতে যায় তবে তাপ্রসব করার পূর্বেই কিয়ামাত সংঘটিত হয়ে যাবে।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
হাদিস নং ৪২৪৮: আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি একজন ইমামের হাতে হাত রেখে অন্তর থেকে তার আনুগত্যের শপথ করে, তাতে যথাসাধ্য তার আনুগত্য করা কর্তব্য। যদি অপর কোনো ব্যক্তি এসে ঐ ইমামের সাথে বিবাদ করে তবে তোমরা তার ঘাড়ে আঘাত করো। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, একথা কি আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছ থেকে সরাসরি শুনেছেন? তিনি বললেন, আমার দু’টি কান তা শুনেছে এবং আমার অন্তর তা স্মরণ রেখেছে। আমি বললাম, এই যে তিনি আপনার চাচাতো ভাই মুআবিয়াহ, তিনি আমাদেরকে এই এই কাজ করার আদেশ করেন। তিনি বললেন, আল্লাহর আনুগত্যে তোমরা তার আনুগত্য করো আর আল্লাহ নাফরমানীতে তার অবাধ্যচারণ করো।
মুসলিম, ইবনু মাজাহ, আহমাদ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
গ্রন্থঃ সুনান আবূ দাউদ
অধ্যায়ঃ ফিতনা ও বিপর্যয়
পাবলিশারঃ আল্লামা আলবানী একাডেমী