রবিবার দুপুরে ঢাকা জেলার দোহারে উপজেলার মেঘুলা মালিকান্দা স্কুলে নারিশা ইউপি চেয়ারম্যান কর্তৃক এক শিক্ষককে মারধরের ঘটনায় ক্রুদ্ধ হয়ে উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনার প্রতিবাদে রোববার বেলা ৩টার দিকে ছাত্র-ছাত্রীরা ঢাকা-দোহার সড়ক অবরোধ করে অবস্থান নেয় এবং বিক্ষোভ করে। এ সময় প্রায় এক ঘণ্টা এই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত থেকে জানা যায়, দোহার উপজেলার মালিকান্দা মেঘুলা স্কুল এন্ড কলেজের স্কুল বিভাগের বিজ্ঞান বিষয়ক শিক্ষক মো. সোলায়মান পঞ্চম শ্রেণিতে পাঠদান করছিলেন। এ সময় পড়া না পারায় নারিশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সালাহউদ্দিন দরানীর পুত্র নাবিলকে থাপ্পর দেন ওই শিক্ষক।
বিষয়টি সালাহউদ্দিন দরানীকে জানতে পেরে প্রতিষ্ঠানে এসে অধ্যক্ষ এর কক্ষে ঐ শিক্ষককে ডেকে এনে শিক্ষার্থীদের সামেনই শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থীরা এবং ঘটনার সুষ্ঠূ তদন্ত দাবী করে বিচার চাইতে থাকে তারা। এ সময় হাজার খানেক শিক্ষার্থী রাস্তায় নেমে এসে বিক্ষোভ করতে শুরু করে। বেলা ৩টার দিকে তারা ঢাকা-দোহার সড়ক অবরোধ করে দেয়। এ সময় সড়কটির দু’পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
বিকাল ৪টার দিকে দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে কে এম আল-আমিন ঘটনাস্থলে এসে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়ে অবরোধ তুলে নিতে বলেন। তৎক্ষণাৎ শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এ ধরনের ঘটনা এ প্রতিষ্ঠানে এই প্রথম।
ঘটনার জন্য তাক্ষণিকভাবে ইউপি চেয়ারম্যান দুঃখ প্রকাশ করেছেন। মা হীন একটি শিশুর উপর প্রহারকে তিনি মেনে নিতে পারেননি বলে জানান স্বজনেরা। তাই এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে।
নিউজ৩৯ এর পক্ষ থেকে মালিকান্দা মেঘুলা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ অজয় কুমার রায়ের কাছে ঘটনা জানতে চাওয়া হলে, এ বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। পরে কথা বলবেন বলে জানান।
এ বিষয়ে জানতে নারিশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাহউদ্দিন দরানী নিউজ৩৯কে বলেন, আমার ছেলে মাতৃহীন। যে কারণে ও একটু অন্যায় করলেও আমি সহজে কিছু বলি না। আজ স্কুলে স্যারের কাছে পিটুনি খেয়ে এসে অঝরে কাঁদছিল তখন আমার মাথা ঠিক ছিল না ছেলের কান্না দেখে। যে কারণে আমি ওই শিক্ষকের ওপর চড়াও হয়েছিলাম। আসলে আমার ভুল ও অন্যায় হয়েছে যে কারনে আমি তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষমাও চেয়েছি।
এ বিষয়ে শিক্ষক সোলায়মানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে, ঘটনার প্রভাবে বিহবলিত হয়ে পড়া শিক্ষক সোলায়মান অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এই অপমান তাকে তীব্রভাবে মানসিক আঘাত দিয়েছে বলে স্বজনেরা জানান। তাই তিনি কথা বলার মতো যথেষ্ট সুস্থ নন বলে নিউজ৩৯ কে জানানো হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম আল-আমিন বলেন, খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলার পর ওরা অবরোধ তুলে নিয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে এই ঘটনায় সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক সহ সর্বত্র আলোচনা – সমালোচনার ঝড় বইছে।