শান্তির জনপদ ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার মানুষ এখন আর শান্তিতে নেই। উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. পলাশের নেতৃত্বাধীন ‘পলাশ বাহিনী’র তাণ্ডবের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সরকারি দলের অনেক রাজনীতিবিদ পর্যন্ত।
ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক ব্যবসা, অবৈধ অস্ত্র সরবরাহ, একের পর এক জমি দখল, সালিশ, জমিজমার বিচার ও হামলা-মামলার ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় এবং চাঁদাবাজিসহ পলাশ ও তার বাহিনীর নানা অপকর্মে অতীষ্ঠ এলাকাবাসী।
এ বাহিনীর থাবা থেকে কেউই রেহাই পাচ্ছে না। থানা-পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে দহরম-মহরম থাকায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা নেয়া হয় না বলেও অভিযোগ করেছেন অনেকে।
এলাকাবাসীর দাবি, পলাশ ও তার বাহিনীর সদস্যদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচার করতে হবে। না হলে আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে, যার প্রভাব পড়বে আগামী সংসদ নির্বাচনে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নবাবগঞ্জের এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, মাধ্যমিকের গণ্ডি না পেরোলেও তার রয়েছে বিশাল অফিস ও নেটওয়ার্ক।
নদী থেকে রাতের আঁধারে ও প্রকাশ্যে বালু উত্তোলন, জোর করে ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করা এবং ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক বিক্রি করে থাকে পলাশ ও তার বাহিনী।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দলীয় পদ-পদবি ব্যবহার করে ও গুরুত্বপূর্ণ এক মন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে চলে পলাশ। চলাফেরা করে পাজেরো গাড়িতে, কোমরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মতো করে পিস্তল রাখে সে।
নবাবগঞ্জে গড়ে তুলেছে সংঘবদ্ধ এক বিশাল ক্যাডার বাহিনী। পথচারী, রিকশাচালক, হকার থেকে শুরু করে সব শ্রেণী ও পেশার মানুষ আতঙ্কে থাকেন, এই বুঝি পলাশের লোক এলো মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে।
এতসব অপকর্মের পরও কীভাবে একাধিক অস্ত্রের লাইন্সেস পেল- সে প্রশ্ন করেন স্থানীয়দের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারাও।
বক্সনগর ইউপির কোমরগঞ্জের এক সাধারণ পরিবারে বেড়ে ওঠা পলাশের নিজ গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ একাধিক ব্যক্তি বলেন, ঈমান আলীর ছেলে পলাশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রাজনীতি ও মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতে নিজ নামে বাহিনী গড়ে তোলে।
এতে একদিকে যেমন সাধারণ জনগণ আতঙ্কে থাকে, অন্যদিকে বর্তমান সরকারের চরম দুর্নাম হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে গালিমপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুর রহমান আজিম বলেন, সন্ত্রাসী পলাশ ও তার বাহিনী আমার বাড়িতেও হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করেছে।
থানা-পুলিশ সে মামলাও নেয়নি। তাকে দ্রুত গ্রেফতার করে শাস্তি দেয়া হোক- আমি সেটাই কামনা করছি।
পাঠানকান্দা গ্রামের বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম বলেন, সন্ত্রাসী পলাশ আমার ছেলের চোখ তুলে নিয়েছিল। আমার ছেলে এখন অন্ধপ্রায়।
পলাশ ও তার বাহিনীর ভয়ে সব সময় আতঙ্কে থাকি। দ্রুত পলাশ ও তার বাহিনীকে গ্রেফতার না করলে এলাকায় থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
থানা পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে তার দহরম-মহরম সম্পর্ক রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
তারা বলেন, ঢাকা উত্তরের ২৭নং ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও কমিশনার ফরিদুর রহমান খান ইরানের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে পলাশ ও তার বাহিনী নবাবগঞ্জে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তাদের অপকর্ম থেকে রেহাই পাচ্ছে না সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ও।
এ বিষয়ে ফরিদুর রহমান ইরান যুগান্তরকে বলেন, কেউ যদি আমাকে ব্যবহার করে অন্যায় কিছু করে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা বলছেন, দ্রুত পলাশ ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে দলীয় ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নিলে শান্তির জনপদ নবাবগঞ্জে আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক শূন্যের কোঠায় চলে যাবে।
ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতা যুগান্তরকে বলেন, কিছুদিন আগে বক্সনগর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মিসভায় উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার কবিরের ওপর হামলা করে পলাশ ও তার বাহিনী।
এ ঘটনায় দেলোয়ার কবির গুরুতর আহত হন। এ বিষয়ে নবাবগঞ্জ থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার বর্ধনপাড়ায় মহিউদ্দিন নামে এক ক্ষুদ্র মুদি ব্যবসায়ীর বসতবাড়িসহ ২১ শতাংশ জমি দখল করে নেয় পলাশ বাহিনী।
এ বিষয়েও গত তিন দিনে মামলা নেয়নি থানা পুলিশ। এ ঘটনার পর থেকে ফুঁসে উঠেছেন এলাকাবাসী। তারা পলাশ ও তার বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে।
২০১৬ সালের ১৯ নভেম্বর বর্ধনপাড়ায় ক্যাবল ব্যবসা দখলে নিতে মিঠু কাজী ও তার ছেলেকে কুপিয়ে আহত করে পলাশ ও তার বাহিনীর লোকজন।
তখনও মামলা নেয়নি পুলিশ। এলাকাবাসী বলছেন, নবাবগঞ্জ থানা পুলিশের রহস্যজনক ভূমিকাই পলাশকে আজকের অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পলাশ ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। সে ছিনতাইসহ একাধিক মামলার আসামি।
পুলিশের পিবিআই শাখায় পলাশ ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে- ঢাকা জেলার সিআর মামলা নং ২৫৭/১৭ (নবাবগঞ্জ) তাং ২৮/৮/১৭ইং ৩২৩/৩২৪/৩০৭/৩৮৫/৫০৬/৩৪/১০৯দঃবিঃ, স্মারক নম্বর পিবিআই/ঢাকা জেলা/২৭১৯/ তারিখ ০৯/১০/১৭।
এ মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও রয়েছে। এ ছাড়া আরও একটি মামলা রয়েছে যার নং- ৯৩/২০১৮।