ভালো নেই পদ্মা চরের বাদাম চাষীরা

538

শামীম আরমান ♦ ভাল নেই সুখে নেই জীবন আর জীবিকার যুদ্ধে লড়াই করা পদ্মার চরাঞ্চলের মানুষ। প্রতিদিন সূর্য উঠা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত মাথার উপর রোদ নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা জীবন জীবিকার তাগিদে চরাঞ্চলে সারা দিন পরে থেকেও ভাগ্যর চাকা ঘুরছে না এই এলাকার মানুষের। দোহার উপজেলার মাহামুদপুর, মৈনটঘাট ও চরবিলাশপুর চরাঞ্চলের এই খেটে খাওয়া মানুষের দিন কাটে পরবর্তী দিনের ভাতের কথা চন্তা করে।

দেশের রাজনৈতিক আবহাওয়া উত্তপ্ত হলেও ঠিক সেই মুহুর্তে এই অঞ্চলের খেটে খাওয়া কৃষক তার মাথার ঘাম পায়ে ফেলে বাদাম ও ধান সংগ্রহে ব্যাস্ত সময় কাটাচ্ছে। তবে সব কিছু ছাপিয়ে কৃষক কি তার ন্যায্য পাওনা অর্জন করতে পারবে, এটাই শুধু কৃষকরে আকাশে হতাশা হয়ে দেখা দিচ্ছে দিন দিন। তবুও বাপ-দাদার ঐতিয্যকে টিকিয়ে রাখতে কৃষির এ পেশাকে ছাড়তে নারাজ তারা। সকল কষ্ট আর দুঃখকে মোকাবেলা করে ধান, বাদাম ও অন্যান্য ফসল উৎপাদনের জন্য ব্যাস্ততায় রয়েছে এ অঞ্চলের মানুষ।

এ ব্যাপারে কথা হয় চরবিলাশপুরের বাদাম কৃষক শেখ গিয়াস উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন এই মুহুর্তে বাদাম চরাঞ্চলের প্রধান শস্য। তার পরে ইরি ও আমন ধান কাটা নিয়ে ব্যাস্ত হবে সবাই। তিনি নিজেও বাদাম লাগিয়েছেন ৬৬ শতাংশ জায়গায়। প্রতি বছর গিয়াস উদ্দিনের মত চরাঞ্চলের শত শত কৃষক পৌষ ও মাঘ মাসের শেষে এবং ফালগুন মাসের শুরুতে বাদাম লাগিয়ে থাকেন এবং বৈশাখ এবং জৈষ্ঠ্য মাসে বাদাম ঘরে তুলার কাজে ব্যাস্ত সময় কাটান এ অঞ্চলের কৃষক ও কৃষানিরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দোহারের পদ্মানদীর চরাঞ্চল চরবিলাশপুর, নারিশা পশ্চিমচর, হাজার বিঘা, মৈনট এবং চর মাহমুদপুরের পদ্মানদীর তীরবর্তী বেলে মাটিতে প্রায় ৩০০ একর জায়গা নিয়ে এবার বাদামের চাষ হয়েছে। যা প্রতি বছরের চেয়ে এবার প্রায় ৫০ একর জমিতে বাদামের চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে কতটা তারা লাভের মুখ দেখতে পারবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলেন চরমাহমুদপুরের কৃষক নুরুল আমিন ফরাজি।

অন্য খবর  দোহার পৌরসভা বাজেট ২০১১-১২: উন্নয়ন খাতে সর্বাধিক আয় ও ব্যয়

তিনি অতি দুঃখের সাথে বলেন, প্রতি মন বাদামে আনুসাঙ্গিক সব খরচ বাবদ ১,৩০০/১,৪০০/= টাকা খরচ হয় যেখানে প্রথম উত্তোলনে বিক্রির সময় বাদামের মুল্য দাড়ায় ১,৬০০/১,৭০০/= টাকা আর বাদামের ভরা মৌসুমে ২,০০০/২,৫০০/= টাকা বিক্রি হয় যা দিয়ে একটি পরিবার নিয়ে চলা খুবই কষ্টকর। এদিকে বাদাম চাষি শেখ গিয়াস উদ্দিন বলেন, “৬৬ শতাংশ জায়গায় এ বছর আমি ধানের পাশাপাশি বাদাম চাষ করেছি। প্রতি মন বীজ বাদাম দিন মজুর খরজ বাবদ ২০০/৩০০/= টাকা লাভ হয়। তাহলে একটি কৃষক ৪/৫ জন সদস্য নিয়ে একটি পরিবারের ভরন-পোষন কিভাবে চালাবে। সরকার কি এসব দেখে না। তা দেখবে কেমনে। আমাগো মত চরের মানুষ গুলো দেহনের কেউ নাই। যদি থাকত তাহলে মাথার ঘাম পায়ে ফেইলা যে জমি চাষ করে ফসল ফলাই তার কোন সঠিক মূল্য পাইনা কেমনে।”

গিয়াস উদ্দিনের মত চরাঞ্চলের এসব সহায় সম্বলহীন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের দুর্বিসহ জীবন যাপন কখনোই সচ্ছলতার মুখ দেখাবে না। এমনি আশা রাখে তারা। মোটা ভাত আর মোটা কাপড়ের সুখ সাচ্ছন্দ্য খুজে নেয়া এ মানুষেরা স্বপ্ন দেখে তবে স্বপ্নের বাস্তবায়ন টা হবে না বলে মনে করেন। দীর্ঘ কথা হয় শিবচর মাদারিপুরের বাসিন্দা কৃষক মোহাম্মদ খাঁর সঙ্গে। তিনি তার দুঃখ উপস্থাপন ব্যাক্ত করেন এ প্রতিবেদকের সঙ্গে ।

অন্য খবর  হাতে বোনা তাঁতের লুঙ্গি নিয়ে অনলাইনে নূর-আবেদিন

তিনি বলেন, গত বছর যে সার কিনেছি ৬০০/= টাকা তা এবার ১০০০/= টাকায় কিন্তে হচ্ছে। ডিজেল কিনেছি ৯০০/= টাকায় তা এবার ১,৪০০/= টাকা। যে ধান গত বছর উৎপাদন খরচ হয়েছিল ৭,০০০/= টাকা তা এবার ১১,০০০/= টাকা সব চেয়ে দুঃখ জনক সেই ধান বিক্রি করতে গেলে ২০০/= টাকা ক্ষতি পুরনে বিক্রি করতে হয়। তাহলে আমরা কি করে বাঁচব । সরকারের কি চোখ নাই! তিনি অতি দুঃখের সাথে বলেন, দেশের বৃহত্তর দুটি দল হিংসা হানাহানি করে দেশকে একটি অস্থিশিল করে তুলেছে। তাহলে আমরা যে কৃষক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল উৎপাদন করছি আমাদের দিকে তাদের কোন খেয়াল নেই। তাই ভাবছি আর কৃষি কাজ করব না । বলে চোখের পানি ছেড়ে দিলেন চরবিলাশপুরে বেড়াতে আশা শিবচরের মোহাম্মদ খাঁ। তার মত অনেক মোহাম্মদ খাঁ এ পেশাকে ছেড়ে দেওয়ার শপথ নিয়েছেন। আবার পৈত্রিক পেশাকে বাঁচিয়ে রাখতে অনেককেই শত কষ্টের মাঝে এ পেশাকে ধরে রেখেছেন। সরকার তার ঘুমন্ত চোঁখকে মেলে ধরে তাদের দুঃখ কষ্টের ইতিহাস শুনবেন জানবেন এবং সঠিক ব্যবস্থা নিবেন এটাই আশা করে দোহারের পদ্মানদীর চরাঞ্চলের খেটে খাওয়া কৃষকেরা।

আপনার মতামত দিন