পদ্মায় ভাঙ্গন ও পানি বৃদ্ধি: দোহারের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি

381

ইমরান ফয়েজ / মোঃ তাইমিয়াঃ
ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছে দোহারের মানচিত্র। অনেকের আশংকা বাংলাদেশের মানচিত্র হতে একসময় মুছে যাবে দোহার উপজেলার নাম। শুধু আলোচনা-সমালোচনা আর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ও ভোটের রাজনীতিতেই সীমাবদ্ধ দোহারের ভাঙ্গন বা প্লাবন। প্রতি বছরই ছোট হয়ে আসছে দোহার আর বর্ষা চলে গেলেও দেখার কেউ থাকে না। সবচাইতে নির্মম, ভাঙ্গন আর প্লাবন দেখতে অনেকটা পর্যটন কেন্দ্রে মতো সবাই ভ্রমণে আসে। আর এতে সমস্যাই পড়ছে সেখানে রাস্তার পাশে অথবা পাড়ে আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলোর নারী-পুরুষ বা তরুণীদের কোন রকম অসহায়ভাবে সম্ভ্রম নিয়ে বেচে আছে ।

গত কয়েকদিনের ধারাবাহিক পদ্মার পানি বৃদ্ধি ও ভাঙ্গনের কারণে দোহার উপজেলায় নদী তীরবর্তী চারটি ইউনিয়নের ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানিতেবন্দী এই পরিবারগুলো পরিজন ও গবাদি পশু নিয়ে অবর্ণণীয় বিপাকে পড়েছে।

গত কয়েকদিনে প্রায় বিশ হাজার পরিবার নদী ভাঙ্গনে উদ্বাস্তু হয়েছে। বর্তমানে তীব্র ভাঙ্গন শুরু হয়েছে দোহার উপজেলার মধুরচর, নয়াবাড়ী এবং নারিশা। ধীরে পদ্মা এগিয়ে আসছে জয়পাড়া থানার মৌড় ও মেঘলা বাজারের নিকটে। নারিশা, বাহ্রা বাজার, বাহ্রাঘাট, বাংলাবাজার ও মেঘুলা বাজার হুমকির মুখে রয়েছে।

অন্য খবর  দোহার পৌরবাসী ভোটাধিকার ফিরে পাবে কবে?

নিউজ৩৯ টিম সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখেছে উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের নারায়নপুর, মাহমুদপুর, মৈনট, শ্রীকৃষ্ণপুর, রামনাথপুর, হরিচন্ডী, চরবিলাশপুর এবং কুসুমহাটি ইউনিয়নের চর পুরুলিয়া ও দেওভোগ এলাকায় প্রায় সকল ঘর-বাড়ী ডুবে আছে ৪/৫ ফুট পানির তলে। এদিকে বিলাশপুর ইউনিয়নের রাধানগর, বিলাশপুর, হাজারবিঘা, আলীনগর, চর লটাখোলা, ছোট রামনাথপুর, কৃষ্ণদেবপুর, নারিশা জোয়ার ও সুতারপাড়া ইউনিয়নের মধুরচর, কাজীরচর এবং নয়াবাড়ী ইউনিয়নের পানকুন্ডু, অরঙ্গবাদ গ্রামসহ ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

এ ব্যাপারে দোহার উপজেলা চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান নিউজ৩৯ কে জানান, ভাঙ্গন ও প্লাবন প্রবণ অঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা প্রণয়ণসহ ত্রাণ কার্যক্রম চলছে। ভাঙ্গনের বিষয়টি কতৄপক্ষকে জানানো হয়েছে ; বর্ষা মৌসুম চলে গেলে শীঘ্রই তা রোধে দ্রুত ব্যাবস্থা নেয়া হবে।

বিলাশপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন মোল্লা নিউজ৩৯কে বলেন, বানের পানি ধেয়ে এসে দ্রুত নতুন নতুন এলাকা ডুবে ঘরবাড়ী তলিয়ে যাচ্ছে। অনেকে গবাদি পশু নিয়ে উঁচু রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে জনগণের দূর্ভোগের সীমা থাকবে না। এছাড়া চর বিলাশপুর ও হরিচন্ডী প্রাথমিক বিদ্যালয় ডুবে যাওয়ায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে, বলেও তিনি জানান।

জয়পাড়া মডেলের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র আসলাম নিউজ৩৯কে জানায়, খানাখন্দ রাস্তায় পানিতে মাঝ মাঝে পড়ে গিয়ে সমস্যা হয়। প্রায় ২/৩ ফুট পানি পাড়িয়েই তাদের স্কুলে যেতে হয়। মাহমুদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন কাঁচা-পাকা রাস্তা ডুবে গিয়ে স্কুলের শিক্ষার্থীদের দূর্ভোগ বেড়েছে।

অন্য খবর  দোহারে শিক্ষার মান উন্নয়নে সমন্বয় সভা

একাধারে পদ্মার ভাঙ্গন ও নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। এছাড়া ফসলী জমি ও মাঠ প্লাবিত হয়েছে। উজানের নেমে আসা পানিতে প্রতিদিনই ফসলী জমি, বাড়ীঘর ও রাস্তাঘাট ডুবছে।

দোহার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. হাবিবুল্লাহ মিঞা বলেন, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দের ব্যবস্থা করা হবে।

আপনার মতামত দিন