নেত্রকোনার সীমান্তে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট

63
নেত্রকোনার সীমান্তে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট

ডেস্ক রিপোর্টারঃ পাহাড়ী আদিবাসীদের বিশুদ্ধ পানির কষ্ট চরমে । পানির আরেক নাম জীবন, আর এই জীবন বাঁচাতে অপেক্ষার প্রহর গুনছে আদিবাসী এলাকার খেঁটে খাওয়া হাজারো আদিবাসী। স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও দুর্গাপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ৯টি আদিবাসী গ্রামে বিশুদ্ধ পানীয় জলের কষ্ট আজও লাঘোব হচ্ছে না। তাদের কষ্ট এখন চরম আকার ধারণ করেছে। বাধ্য হয়ে পাহাড়ি ছড়ার ঘোলা পানি, ঝরনা, কুয়ো বা ইন্দরার ময়লা পানি পান করতে হয়।

এ নিয়ে সরজমিনে আদিবাসী গ্রামগুলোতে বিশুদ্ধ পানির অভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে দুর্ভোগের শিকার পরিবারের লোকজন যুগান্তরকে জানান, ভারতীয় সীমান্তবর্তী আদিবাসী অধ্যুষিত গোপালপুর, দাহাপাড়া, থাউসালপাড়া, ভবানীপুর, ফান্দা, বারোমারী গ্রামসহ অন্যান্য পাড়ায় আদিবাসীদের জন্য সরকারি ভাবে কোনো টিউবওয়েল কিংবা গভীর কুয়ো তৈরি করে না দেওয়ায় তাদের ভাগ্যে জুটছে না বিশুদ্ধ পানি। সারাদেশে উন্নয়নের জোয়ার বইলেও সীমান্তবর্তী আদিবাসী গ্রামগুলোতে নেই কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া। গ্রামে দু-এক জন অধিক অর্থ ব্যায় করে টিউবওয়েল বসালেও নীচে পাথর থাকায় কিছুদিন পানি দিলেও পরবর্তিতে বন্ধ হয়ে যায়। ওই গ্রাম গুলোতে যারা, দিন আনে দিন খায় এমন হত-দরিদ্র সুবিধা বঞ্চিত লোকজনের সংখ্যা অনেক বেশি থাকায় তাদের পক্ষে টিউবওয়েল বসানো কিংবা গভীর কুঁয়ো তৈরি করা সম্ভব না বিধায় দিনের পর দিন বাধ্য হয়েই ঝরনা, কুয়ো বা ইন্দরার ময়লা পানি পান করতে হয়।

বিশুদ্ধ পানীয় জলের দুভোর্গের কথা বলতে গিয়ে টিনু হাজং, প্রমিলা হাজং, শিউলি শিগিদী, রবার্ট মারাক সহ আদিবাসী পরিবারগুলো বলেন, কোনো কোনো সময় অন্য গ্রাম থেকেও বিশুদ্ধ খাবার পানি কাঁধে করে বয়ে এনে পান করতে হয়। গ্রামের কয়েকটি স্বচ্ছল পরিবারের লোকজন অধিক অর্থ ব্যয় করে টিউবওয়েল বসিয়েছেন কিন্তু সেগুলোতেও আসছে চৈত্র মাসে পানি থাকবে না, যদি থাকেও তাতে রয়েছে মাত্রাতিরিক্ত আয়রণ। অপরদিকে হত-দরিদ্র পরিবারগুলো বেশ কয়েক গতবছর নিজেরা চাঁদা দিয়ে বন বিভাগের টিলার নিচে চাঁকটি বসিয়ে কুঁয়ো তৈরি করে খাবার পানি সংগ্রহ করলেও শুকনো মৌসুমে ওই কুয়োতে পানি থাকে না।

অন্য খবর  সম্পর্ক ছিন্ন হবার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যা করা উচিত নয়

নেত্রকোনার কলমাকান্দা ও দুর্গাপুর উপজেলার পাহাড়ি গ্রামগুলোতে শুকনো মৌসুমে পানির এ সংকট পুরোনো। কিন্তু এবারের সেই সংকট আরও বেড়েছে। পাহাড়ে প্রায় প্রতিটি ঘরে এখন বিশুদ্ধ খাওবার পানির জন্য হাহাকার চলছে। পাহাড়ি ছড়ার (নালা) ময়লাযুক্ত পানি অথবা টিলার নিচে তিন চাকের তৈরি অগভীর কূপের ঘোলা পানিই তাঁদের ভরসা।

কলমাকান্দা আটটি ইউনিয়নের মধ্যে লেংগুরা, খারনৈ ও রংছাতি ইউনিয়ন পাহাড়ি গ্রামে পানির অভাবে দৈনন্দিন জীবন ব্যাহত হচ্ছে।

 এসব এলাকায় প্রধানত গারো ও হাজং সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস। প্রায় ৩৫টি গ্রামে পানির সংকট দেখা দিয়েছে। নারীরা কাঁখে বা মাথায় কলসি নিয়ে দূর থেকে পানি সংগ্রহ করছেন। এক গ্রামের মানুষ অন্য গ্রামে গিয়ে গোসলও করছেন।

এদিকে দুর্গাপুরে ভবানীপুর, বারমারি, বিজয়পুর, পাচকাহনিয়া, বেশ কয়টি  গ্রাম সহ গভীর নলকূপ না থাকার কারণেই সুপেয় পানির জন্য অনেকেই এক থেকে দুই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পানি সংগ্রহ করতে হয়।

স্থানীয়রা বাংলানিউজকে জানান, আমাদের এই পানির সমস্যা আদিকাল থেকেই। আমরা খুব কষ্ট করে পানি সংগ্রহ করে থাকি এই পানি আবার ফুটিয়ে পান করতে হয় আমরা সব সময় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকি। আমাদের সরকারের কাছে আবেদন আমরা যাতে বিশুদ্ধ পানি খেতে পারি এই ব্যবস্থাটা যাতে আমাদের হয়। তাহলে আমরা সরকারের কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকবো।

অন্য খবর  দোহারে নানা আয়োজনে মহান বিজয় দিবস পালিত

এ নিয়ে দাহাপাড়া এলাকার তামিল মারাক, ব্রিলিয়ন সাংমা, দিপ্তিং বলেন, কত বছর পার হলো, আদিবাসী গ্রামগুলোতে এখনো বিশুদ্ধ পানির কোনো ব্যবস্থা করা গেলো না। আমাদের জন্য বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করতে একটি গভীর টিউবওয়েল বসানোর জন্য কত জনের কাছে গেলাম, কত আবেদন করলাম কোনো কাজই হইলো না, উল্টো মিষ্টি মিষ্টি কথা শুনাইয়া দেয় আমরারে। দেখি এইবার নতুন এমপি আমাদের জন্য কি করেন।

দুর্গাপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাদেকুল ইসলামের বলেন, সীমান্তবর্তী আদিবাসী গ্রামগুলোতে টিউবওয়েল বসাতে হলে পাথর সরিয়ে প্রায় সাত আটশ ফুট গভীর নলকুপ বসাতে হবে, তাতে খরচ হবে প্রায় ২০-৩০ লাখ টাকা। মাটির নিচ থেকে পাথর সড়িয়ে যদি বিকল্প হিসাবে গভীর কুয়ো বসানো যায় তাহলেও আদিবাসীদের সুপেয় পানির সমস্যা দূর হবে। এ ব্যপারে এমপি মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম রকিবুল হাসান যুগান্তরকে বলেন, আমি যদিও অত্র উপজেলায় সদ্য যোগদান করেছি। এ নিয়ে জনস্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানতে পেরেছি কিছু এলাকায় গভীর নলকুপ বসানো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে আদিবাসী গ্রামগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে অতি দ্রুতসময়ের মধ্যে অগভীর নলকুপ বা রিংওয়েল বসিয়ে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হবে।

আপনার মতামত দিন