সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জোরপূর্বক শত বছরের পুরনো খালের উপর পাকা ভবন নির্মাণ করছে দোহারের সুতারপাড়া ইউনিয়নের নিকরা গ্রামের রিপন খান। যার বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজি, মাদক ও দখলের একাধিক মামলা রয়েছে। ক্ষমতার নেতৃত্ব বদলের সাথে সাথে বদলে যায় তার কর্মকান্ডও। সম্প্রতি তিনি দোহার থানা পুলিশের উপর হামলা করে গ্রেফতার হন। ফলে বেরিয়ে আসে রিপনের অপরাধ কর্মের ফিরিস্তী। গত দু’দিনে মামলা ছাড়া কয়েকটি জিডি হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। দোহারে যখন যার হাতে ক্ষমতা বেশী সেখানেই তার আনাগোনা লক্ষ্য করা যায়।
রিপনের চাচাতো ভাই আপন খান। যে নিজেকে সুতারপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক দাবী করেন। শুক্রবার রিপনের অনিয়ম, সন্ত্রাস ও দখলের বিষয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সংবাদকর্মীদের সামনেই এলাকার এক যুবককে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে তার বাহিনী দিয়ে আটকের চেষ্টা করে। পরে সাংবাদিকদের হস্তক্ষেপে সে যুবক দৌড়ে নিরাপদে চলে যায়। আপন খান দম্ভ উক্তি করে বলে, খান বাড়িতে এসে কেউ কিছুই করতে পারবে না। ওকে (যুবককে) আটকাও। রশি এনে বাধ। ততক্ষণে তার সাথে যোগ হয় আরো ৮/১০ জন তরুণ। তার এহেন কর্মকাণ্ড প্রতিবেশীরা নির্বাক হয়ে দেখলেও প্রতিবাদ করতে পারেনি।
সরেজমিনে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রিপন খান ও আপন খানের নিজস্ব একটি বাহিনী আছে। যারা এলাকায় অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করে বিচার শালিসী, দখল ও মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। জয়পাড়া নিকরা ঐতিহ্যবাহী খাল দখল করে দালান নির্মান করেছে। তাছাড়া খালের গতিপথ রোধ করে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছে।
স্থানীয় জনগণ, রিপনের খাল দখল ও দুর্বৃত্তয়ানের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই, আপন ও তাদের ক্যাডার বাহিনী এলাকাবাসীকে প্রতিনিয়ত হামলা, হত্যার হুমকি প্রদান করে। আর এভাবেই ভয়ভীতি প্রদান করে দোহারের নির্ভৃত পল্লী সুতারপাড়া ইউনিয়নে রিপন ও আপন গড়ে তুলেছেন নিজেদের সন্ত্রাসী রাজত্ব।
নিকরা গ্রামের বাসিন্দা মো. জাহাঙ্গীর আলম বেপারী বলেন, আমার বাবা হাজী আব্দুর রশিদ বেপারীকে রিপন ও তার বাহিনী ২০১৩ সালের ২০ জানুয়ারি মাদরাসার মিটিং থেকে ডেকে নিয়ে গুলিকরে হত্যা করে। দোহার থানার হত্যা মামলা নং- ১০। মামলাটি আদালতে বিচারধীন আছে।
তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি রিপন আমাকে ও আমার স্বজনদেরকে হত্যার হুমকি দিয়েছে। আমি বাধ্য হয়ে তার বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেছি। জিডি নং-৮৯৪।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুতারপাড়া এলাকার নিকড়া গ্রামের এক ব্যবসায়ী জানান, রিপন এলাকার বিভিন্ন সরকারি উন্নয়ন কাজে বাধা প্রদান করে চাঁদা দাবি করে। তা না হলে ঠিকাদারকে বিভিন্ন হুমকি প্রদান করে সে। কিছু দিন আগে রোর্ডস এন্ড হাইওয়ের উন্নয়ন কাজের গার্ডার পাইপ চুরি করে নিয়ে আসে। যা দিয়ে নিকরা খালে বাধ দিয়ে মাছ চাষ প্রকল্প তৈরি করছে।
এলাকাবাসী জানান, আপন, রিপন ওই এলাকার খায়ের চৌধুরী নামের এক নিরহ ব্যক্তির বাড়ির গাছ কেটে নিয়ে যায় এবং তার নিজস্ব জমির উপর দিয়ে জোর করে রাস্তা নির্মান করে। দোহার উপজেলা আ’লীগের এক নেতা ও জনপ্রতিনিধি জানান, বর্তমান সরকারের অর্জনকে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে ক্ষমতাসীন দলের ব্যানারে রিপন, আপনদের মতো কিছু সন্ত্রাসীই যথেষ্ট। দ্রুত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উচিত এদের মূল উৎপাটন করা।
এ বিষয়ে দোহার থানার ওসি শেখ সিরাজুল ইসলাম বলেন, সরকারী নিষোধাজ্ঞা অমান্য করে রিপন ও তার বাহিনী খাল দখল করে বসত বাড়ি নির্মান করে। সে ও তার বাহিনী সুতার পাড়া এলাকায় নানা অপরাধের সাথে জড়িত বলে ইতিমধ্যে আমাদের কাছে তথ্য আসছে। আমরা এলাকায় শান্তি ও আইন শৃংখলা বজায় রাখার স্বার্থে কৌশলে সকল অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি।