নায়ক জসিম। এই তারকার আসল নাম আবদুল খায়ের জসিম উদ্দিন। জন্ম ১৯৫০ সালের ১৪ আগস্ট ঢাকার নবাবগঞ্জের বক্সনগর গ্রামে। লেখাপড়া করেন বিএ পর্যন্ত। তার প্রথম স্ত্রী ছিলেন ড্রিমগার্ল খ্যাত নায়িকা সুচরিতা। পরে তিনি ঢাকার প্রথম সবাক ছবির নায়িকা পূর্ণিমা সেনগুপ্তার মেয়ে নাসরিনকে বিয়ে করেন। জসীমের তিন ছেলে রাতুল, রাহুল ও সামি। তারা তিনজনই ব্যান্ড সঙ্গীতের সঙ্গে জড়িত।
ঢাকাই সিনেমার আকাশে জ্বলজ্বল করা এক নক্ষত্র। ছিলেন একাধারে নায়ক ও খলনায়ক। স্বাধীনতার পর আধুনিক বাংলা চলচ্চিত্রকে এগিয়ে নেয়ার পেছনে তার অবদান ছিল অনস্বীকার্য। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অ্যাকশন ধারার প্রবর্তন এবং ‘ফাইটিং গ্রুপ’ বিষয়টার শুরু জসিমের হাত ধরে।
১৯৭৩ সালে জহিরুল হকের ‘রংবাজ’ ছবিতে খলনায়ক চরিত্রের মধ্য দিয়ে অভিনেতা হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন মুক্তিযোদ্ধা জসিম। ছবিটির অ্যাকশন দৃশ্যগুলো ছিল তার নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা জ্যাম্বস ফাইটিং গ্রুপের করা।
নিজের কাজের প্রতি নায়ক জসিম কতোটা নিবেদিত ছিলেন তার উদাহরণ দেওয়ান নজরুলের ‘দোস্ত দুশমন’ ছবিতেই পাওয়া যায়। ‘দোস্ত দুশমন’ হিন্দি সাড়াজাগানো ছবি ‘শোলে’র রিমেক। ছবিতে জসিম গব্বার সিংয়ের চরিত্রটি করেছিলেন। আসল চরিত্রটি করা ভারতীয় খলনায়ক আমজাদ খান পর্যন্ত ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন জসিমের।
জসিমের মৃত্যুর পর এফডিসির সর্ববৃহৎ ২ নম্বর ফ্লোরকে তার নামে নামকরণ করা হয়। তিনি শুধু বাংলা চলচ্চিত্রের একজন জনপ্রিয় নায়কের নাম নয়, তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের সাফল্য ও পরিবর্তনের একটি অধ্যায়ের নাম।
তার উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো ছিল- ‘সবুজ সাথী’, ‘সুন্দরী’, ‘কসাই’, ‘ছোটবৌ’, ‘মোহাম্মদ আলী’, ‘রকি’, ‘হিরো’, ‘অশান্তি’ , ‘বৌমা’ , ‘স্বামীর আদেশ’ , ‘টাকা পয়সা’ , ‘অভিযান’, ‘পরিবার’, ‘সারেন্ডার’, ‘ভাই আমার ভাই’, ‘ভাইজান’, ‘গর্জন’, ‘বিজয়’, ‘লালু মাস্তান’, ‘অবদান’, ‘ন্যায় অন্যায়’ , ‘লোভ লালসা’, ‘আদিল’, ‘কাজের বেটি রহিমা’ , ‘উচিৎ শিক্ষা’, ‘লক্ষ্মীর সংসার’, ‘মাস্তান রাজা ‘ , ‘কালিয়া’, ‘ওমর আকবর’, ‘ দাগি সন্তান’, ‘ সম্পর্ক’ , ‘শত্রুতা’, ‘নিষ্ঠুর’ , ‘পাষাণ’, ‘হিংসা’, ‘ভাইয়ের আদর’, ‘হাতকড়া’, ‘ডাকাত’, ‘বাংলার নায়ক’, ‘রাজাবাবু’, ‘রাজাগুণ্ডা’, ‘ঘাত প্রতিঘাত ‘ ‘স্বামী কেন আসামী’ ইত্যাদি।
৮ অক্টোবর বাংলা চলচ্চিত্রের এই কিংবদন্তির ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯৮ সালের এই দিনে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে মারা যান তিনি।