নাজমুল হুদার মতো বিএনপির সংস্কারপন্থীরা শর্ত মেনে ফিরছেন

300

বিশেষ সংবাদদাতা৩৯ঃ
ভবিষ্যতে বিশ্বাসঘাতকতা না করার শর্ত মেনে বিএনপিতে ফিরতে রাজি হয়েছেন দলের সংস্কারপন্থী বলে চিহ্নিত নেতারা। এদিকে এ শর্ত মানলে খালেদা জিয়াও তাদের দলে ফিরিয়ে নিতে সম্মত আছেন বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, আন্দোলন সংগ্রামকে সফল করতে এ মাসেই সংস্কারপন্থীদের দলে ফেরানোর ব্যাপারে শিগগিরই খালেদা জিয়া আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে পারেন।এছাড়া ঢাকা জেলায় আন্দোলন স্তিমিত হওয়ায় ও কেন্দ্রীয় নেতারা গা ঢাকা দেওয়াতে নাজমুল হুদা, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও মির্জা আব্বাস এই ত্রয়কে নিয়ে ছক আকছেন খালেদা জিয়া। আবার বর্তমানে ঢাকা জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল মান্নান শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় নিজে স্বশরীরে কোন আন্দোলনে থাকছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।  সম্প্রতি শুক্রবার দোহারে তারেক জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে কেক কাটা অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়ার সাথে নাজমুল হুদার যোগাযোগ হয়েছে বলে জানিয়েছেন নাজমুল হুদা নিজেই। এই ক্ষেত্রে গাজীপুর জেলার দায়িত্ব পাবেন খন্দকার তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী। সেক্ষেত্রে খালেদা জিয়া নাজমুল হুদা, তানভীর আহমেদ সিদ্দিকীসহ অপরাপর নেতাদেরকে তৃণমূল নেতাদের সাথে নিয়ে নিজেদেরকে ঝাপিয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া এই সব নেতার রয়েছে নিজস্ব জনপ্রিয়তা; যা ভবিষ্যৎ নির্বাচনে দল উপকৃত হবে বলে মনে করে নীতি নির্ধারকরা।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সংস্কারপন্থী নেতা বলে চিহ্নিত তোফায়েল আহমেদ ও আমির হোসেন আমু মন্ত্রী পরিষদে স্থান পাওয়ায় বিএনপির সংস্কারপন্থীদের মধ্যে ‘নিজেদের জন্য কিছু করতে হয়’ ভাবনা শুরু হয়। এরই সূত্র ধরে ধানমণ্ডি ও গুলশানে অন্তত চার দফা বৈঠক করেন তারা। বিএনপির সাবেক সহ-দফতর সম্পাদক জহির উদ্দীন স্বপন বৈঠকগুলো সমন্বয় করেন। মফিকুল হাসান তৃপ্তি, সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল, দেলোয়ার হোসেন দুলু, আহসান হাবীব লিংকন, জিয়াউল হক মোল্লা, রেজাউল বারী ডীনা, নজির হোসেন, এসএ সুলতান টিটু ও গোলাম মোহম্মদ সিরাজসহ অন্তত ১৫-২০ জন সংস্কারপন্থী নেতা অংশ নেন।জানতে চাইলে জহির উদ্দীন স্বপন গণমাধ্যমকে বলেন, ক্ষমতাসীন দল যেমন চিহ্নিত সংস্কারপন্থী আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমদকে মন্ত্রিসভায় স্থান দিয়ে তাদের শক্তি বৃদ্ধি করেছে। তেমনি দেশনেত্রী সব জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া ডাক দিয়েছেন। তার এই ডাকে সাড়া দিতে যে কোনো ধরনের ত্যাগ স্বীকারে আমরা প্রস্তুত আছি। ভবিষ্যতে দলের সঙ্গে আবারও কেউ বিশ্বাস ঘাতকতা করবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে স্বপন বলেন, প্রশ্নই ওঠে না। অন্য কোনো কিছু চিন্তার অবকাশ নেই। আমরা বিনা শর্তেই দলের জন্য কাজ করতে রাজি। আমরা বিএনপির কর্মী। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে দেশনেত্রীর নির্দেশে সর্বাত্মক সক্রিয়তা প্রদর্শন করতে চাই। সাবেক সংসদ সদস্য সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া অতীতে আমার নেতা ছিলেন, এখনও আছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন। দলে ফেরার ব্যাপারে তিনি যে শর্ত দেবেন তা পালন করতে রাজি আছি। ভবিষ্যতে ভুল করব কিনা এ ধরনের প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। তবে অভিজ্ঞতা থেকে বলব, এ ধরনে ভুল আর হবে না। রাজনীতিতে একই ভুল বার বার হয় না।সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকেও বিএনপির সংস্কারপন্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাদের বেশ কয়েকজনকে বাগানোর জন্য শুরু হয় তৎপরতা। এ ক্ষেত্রে কয়েকজনের সঙ্গে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের ‘লেনদেন’-এর কথাবার্তা হয় বলে দাবি করেন বিএনপির সংস্কারপন্থী কয়েক নেতা। এ পর্যায়ে বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ আছে সংস্কারপন্থীদের এমন কয়েকজন দলের মহাসচিবকে বিষয়টি জানান।সূত্র মতে, সরকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ হচ্ছে এ ধরনের বার্তা পাওয়ার পর মহাসচিবসহ বেশ কয়েকজন নেতা খালেদা জিয়াকে বিষয়টি জানান। পাশাপাশি তারা এও বলেন যে সংস্কারপন্থীরা বিনা শর্তে বিএনপিতে ফিরতে চায়। এরপর খালেদা জিয়া বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে আলোচনা করে তাদের ব্যাপারে নমনীয় হন। তবে তিনি বার্তাবাহকের মাধ্যমে জানতে চান, সংস্কারপন্থীরা ভবিষ্যতে আর কোনো বিশ্বাসঘাতকতা করবে কিনা? খালেদা জিয়ার এ ধরনের মনোভাব সংস্কারপন্থীদের জানিয়ে দেয়া হলে তারা জানান, যে কোনো শর্তে দলে ফিরতে রাজি আছেন তারা।

আপনার মতামত দিন