আল আমিন ডিশ লাইনম্যান। নবাবগঞ্জের জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের রায়পুর গ্রামের সেলিম খানের ছেলে। কাজ করে ডিশ ব্যবসায়ির কর্মচারী হিসেবে। নবাবগঞ্জ উপজেলার গরীবপুর গ্রামের কাউসারের বাসায় ভাড়া থাকে সে। এলাকায় ডিশের কাজ করার কারণে পরিচয় হয় শিকারীপাড়া ইউনিয়নের পাঞ্জিপহরী গ্রামের চানু মিয়ার মেয়ের সাথে। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠে। ভূক্তভোগী মেয়েটির পরিবার ও প্রতিবেশীদের সূত্রে জানা যায়, মেয়ের থেকে বার বার বিয়ের কথা বললে, আল-আমিন অস্বীকার করে। জানা যায়, ভুক্তভোগী মেয়েটি সঠিক বিচারের প্রত্যাশায় শিকারী পাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আলিমোর রহমান খান পিয়ারাকে অবহিত করেন বলে জানা যায়।
ইতঃমধ্যে বিষয়টি শিকারীপাড়া ইউনিয়নের হাগ্রাদী গ্রামের মৃত কালাম মোল্লার ছেলে রফিক মোল্লা (৫০) বিষয়টি সম্পর্কে জানারপর ভূক্তভোগী মেয়েটিকে বিয়ে করিয়ে দেয়া ও বিচার পাইয়ে দেবার আশ্বাস দেয় বলে জানান তার স্বজনেরা। এদিকে রফিক মোল্লা তার সাথে একই গ্রামের কাজী লুৎফর রহমানের ছেলে কাজী আলীম(৩৮)ও গরীবপুর গ্রামের আইজুদ্দিনকে (৫০) সাথে নিয়ে হাগ্রাদী গ্রামের মৃত কাজী সফিউদ্দিনের বাড়িতে ১ হাজার টাকার বিনিময়ে একটি রুম ভাড়া করে। সেখানে তারা তিনজন মিলে কথা বলার কথা বলে ভুক্তভোগী মেয়েটিকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। কয়েকদিন পর ঘটনাটি প্রকাশ হয়ে পড়লে এলাকায় হৈচৈ পড়ে যায়। রফিক মোল্লাও ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে তোরজোড় শুরু করে।
এই ব্যাপারে শিকারীপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজাম্মেল হক টিপু নিউজ৩৯কে বলেন, শিকারীপাড়া ইউনিয়নে এই ধরনের ঘটনা নতুন নয়। চেয়ারম্যানের প্রশ্রয়ে এই ধরনের ঘটনা এর আগেও দুই তিনবার ঘটেছে এবং তিনি কোন ব্যবস্থা না নিয়েই এদের ছাড়িয়ে এনেছেন। ডিশ কর্মচারী আল আমিন, হাগ্রাদী গ্রামের রফিক মোল্লা, কাজী আলিম ও আইজুদ্দিন এরা এই ধরনের অপকর্ম আগেও অনেক করেছে কিন্তু প্রতিবারই চেয়ারম্যান আলীমোর রহমান পিয়ারা এদের ছাড়িয়ে এনে রক্ষা করেছে।
তিনি আরও বলেন, এরআগে রফিক মোল্লাকে মেয়েঘটিত কেলেঙ্কারীতে হাতে নাতে ধরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা বাদল মিয়া তাকে পুলিশে দেয় । কিন্তু চেয়ারম্যান নিজে বারুয়াখালী তদন্ত কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে তাকে ছাড়িয়ে নেয়। তাছাড়া ডিসের কর্মচারী আল আমিন এর আগেও এই ধরনের ঘটনার সাথে যুক্ত ছিল। আমার এলাকা থেকে এসব কারণে আমি আল-আমিনকে বিতারিত করি। পরবর্তীতে পান্জিপূহরী এলাকায় আশ্রয় নেয়। আর রফিক মোল্লা, কাজী আলিম ও আইজুদ্দিন এরা তো চেয়ারম্যানের কাছের লোক। আর এরা যেখানে আছে সেখানে চেয়ারম্যান কিছুই জানবে না সেটা তো হতে পারে না।
এই ব্যাপারে শিকারীপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলিমোর রহমান পিয়ারা নিউজ৩৯কে বলেন, তিনি এই ব্যাপারে কিছুই জানেন না। তার কাছে বিচার চাইতে কেউ আসেননি এবং তিনিও কাউকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিকারীপাড়া ইউনিয়নের এক বাসিন্দা বলেন, ঘটনাটা শিকারীপাড়ার সবাই জানে কিন্তু ভয়ে কিছু প্রকাশ করতে চায় না।
সরেজমিনে অনেকের সাথে কথা হলে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে রফিক মোল্লার ব্যাপারে বলেন, রফিক মোল্লার এমন ঘটনা নতুন কোন বিষয় নয়। গত আট বছর আগে গ্রামের একজনের স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে যায়। গত বছর একই গ্রামের আব্দুল হাই এর বাড়িতে তার অনুপস্থিতিতে রাতে স্ত্রীর সাথে কু-বাসনা নিয়ে গেলে হাঠাৎ সে বাসায় আসলে ধরা পরে যায় এবং ব্যাপক মারধর করে পুলিশ সোপর্দ করে। একদিন বারুয়াখালী তদন্ত কেন্দ্রে আটক অবস্থায় থাকে। শেষে শিকারীপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাকে তদন্ত কেন্দ্র থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসে বলে জানা যায়। গত ১৫ দিন পূ্র্বে একই গ্রামের আব্দুল মান্নানের সাথে তার স্ত্রীর ঝগড়া হয় এবং মারধর করার কারণে স্ত্রীর সাথে কথা বলে মিমাংসা করে দেয়ার কথা বলে এক রাত তার সাথে যাপন করে।
গ্রামবাসী অভিযোগ করে বলে, সে যে চেয়ারম্যানের খাস লোক, তাই সে যা ইচ্ছা তাই করে যাচ্ছে। কেউ কিছুই বলতে সাহস পায় না। এমন কোন খারাপ কাজ নেই যা সে করছে না। এই ঘটনাটি পরে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা বাদল মিয়া জানতে পারলে তিনি মেয়ের পক্ষে বিচার প্রার্থী হন। এদিকে চেয়ারম্যান বিচার বিলম্ব করার জন্য চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। অনেকের দাবি রফিক মোল্লার কারণে এলাকার বদনাম হয়ে যাচ্ছে। সকলেই তার শাস্তি দাবি করছেন।