প্রবাহমান পদ্মা নদী সংলগ্ন ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার প্রতান্ত্য জনপদ জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন। যা দোহার ও নবাবগঞ্জবাসীর নিকট বেড়িবাধ এলাকা হিসেবে পরিচিত। চলমান বর্ষা মৌসুমে পদ্মা নদীর প্রবল বর্ষন ও পানি বৃদ্ধির ফলে গত কয়েক দিনে বেড়িবাধ সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত ১২টি গ্রামের প্রায় ২৫শ’ মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
ইতিমধ্যে প্রবল বর্ষণে নিশ্চহ্ন হয়ে গেছে অধিকাংশ গ্রামীণ জনপথসহ কৃষি ফসল। তলিয়ে গেছে বসতবাড়ি এবং বিভিন্ন গ্রামীণ অবকাঠমো। ফলে আতংক আর উৎকন্ঠার মধ্যে রাত দিন পার করছে অধিকাংশ গ্রামবাসী।
সরেজমিনে দেখাযায়, পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি ও প্রবল বর্ষের কারণে, জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের, রায়পুর, চারাখালি, বালেঙ্গা, রাজাপুর, কান্তারটেক, কেদারপুর, আশয়পুর, পানি কাহুর, আর ঘোষাইল, ঘোষাইল, তিকপালদিয়া ও সোনাবাজু গ্রামে অবস্থিত বসত ভিট বাড়ি, কৃষিজমি, মসজিদ, মন্দির, স্কুল ও হাট বাজারে অবস্থিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে গেছে।
এছাড়া জনসাধারনের চলাচলের সকল গ্রামীণ কাঁচা সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। সংযোগ বিছিন্ন অবস্থায় পড়ে আছে ৪টি সেতু। বন্য কবলিত পানিবন্দী গ্রামবাসী এখন নৌকায় যাতায়াত করছেন। বালেঙ্গা , ঘোসাইল ও রায়পুর বাজারের অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। গ্রামগুলোতে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। অনেকে ঘরবাড়ি রেখে পরিবার পরিজন গবাদিপশু পাখি নিয়ে অনত্র নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, তারা এখনও কোনও সরকারি ত্রাণ কিংবা কর্মকর্তার দেখা পাননি এখানেও। আজ কয়েকদিন যাবত পানির সাথে যুদ্ধ করে তাদের বাঁচতে হচ্ছে।
কথা হয় বন্য কবলিত আশয়পুর গ্রামের নির্মাণ শ্রমিক শামসুল হকের সাথে। তিনি বলেন, আজ প্রায় ১০ দিন হলো আমাদের এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। আমরা পানিবন্দী অবস্থায় বসবাস করছি। স্থানীয় ইউপি চেয়ানম্যান মাসুদ ভাই ছাড়া কোনও নেতা-নেত্রী বা সরকারি লোক আমাদের কোনও খোঁজ-খবর নিতে আসেনি।
এ সময় কৃষক বাচ্চু মিয়া বলেন, আমার ৫ বিঘা পাট ও শাকসব্জি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। কয়েকদিন ধরে নৌকা চালিয়ে সংসার চালাতে হচ্ছে। পরিবার পরিজন নিয়ে অনেক কষ্টে আছি আমাগো দেখার কেউ নাই।
বন্যা কবলিত জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মাসুদুর রহমান বলেন, ঢাকার নবাবগঞ্জ ও মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার সিমান্তবর্তী এই অ লটি একটি অবহেলিত এলাকা। পদ্মার পানি ও ভাঙন থেকে নবাবগঞ্জ উপজেলাকে রক্ষায় ৯৭-৯৮ অর্থবছরে তৎকালিন আওয়ামী লীগ সরকার এই এলাকায় বাধ নির্মাণ করে। এতে করে এই ইউনিয়নের একটি বিরাট অংশ ভাঙন ও প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে রক্ষা পায়। অন্যদিকে পদ্মা নদী সংলগ্ন এই ইউনিয়নের প্রায় ১২ থেকে ১৫টি গ্রাম প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পানিতে ডুবে যায়। ফলে স্থানীয় কৃষক ও সাধারন মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে।
তিনি রক্ষাবাঁধে পরিকল্পিতভাবে আরও বেশ কয়েকটি সুইজগেট নির্মাণের দাবিসহ সরকারের সংশিষ্ট দপ্তরকে বন্যা কবলিত পানিবন্দী অসহায় মানুষের পাশে দাড়ানোর অনুরোধ জানান।
নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এইসএম সালাউদ্দিন মনজু বলেন, নিয়মিত খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত এলাকাটি পরিদর্শন করা হবে।