নবাবগঞ্জ উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত ইছামতি নদীর শালিকা-ভাঙ্গাভিটা ও মাইলাইল এলাকায় সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালী বালুচোর চক্র। শত শত একর আবাদী কৃষি জমির মাটি কেটে গভীর জলাশয়ে রুপান্তরিত করছে। নদী হারিয়ে ফেলছে তার স্বাভাবিক গতি পথ। এছারা রাতের আধারে কেটে নিয়ে যাচ্ছে তীরবর্তী পাশ্ববর্তী জমির মাটি। চক্রটির কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে ঐ এলাকার কৃষি জমির মালিকরা। প্রভাবশালীদের ভয়ে এলাকাবাসী মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না তারা।
বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ এ বলা হয়েছে, বিপণনের উদ্দেশ্যে কোন উন্মুক্ত স্থান, চা বাগানের ছড়া বা নদীর তলদেশ হইতে নিম্নবর্ণিত ক্ষেত্রে বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাইবে না।
করিলে , (১) এই আইনের ধারা ৪ এ বর্ণিত কতিপয় ক্ষেত্রে বালু বা মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ সংক্রান্ত বিধানসহ অন্য কোন বিধান কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অমান্য করিলে অনূর্ধ্ব ২(দুই) বৎসর কারাদন্ড বা সর্বনিম্ন ৫০(পঞ্চাশ) হাজার টাকা হইতে ১০ (দশ) লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঢাকার দোহার উপজেলায় বাড়ি এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর নাম ভাংগিয়ে ও দোহাই দিয়ে এ অপকর্ম করছে অর্থলোভী কয়েকজন। স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মিরাও এদের কাছে অসহায়। মূলত আওয়ামী লীগের এক প্রবীন নেতার পরিবার এ চক্রে সক্রিয়।এদিকে জানা গেছে, মিথ্যা প্রভাব খাটিয়ে তারা বালু উত্তোলন করছে।
এলাকাবাসী জানায়, ইছামতি নদীর মাইলাইল এলাকায় একটি ও ভাঙাভিটা এলাকায় ৪টি ড্রেজার বসিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে দিনরাত অবাধে বালু উত্তোলণ করে চলছে স্থানীয় কয়েকটি বালুদস্যুরা । প্রথমে জমিটিতে ভেক্যু মেশিন বা কুদাল দিয়ে মাটি কেটে বিক্রি করা হয়। পরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু কেটে বাল্কহেডের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। এতে আবাদী জমি গভীর জলাশয়ে রুপান্তরিত হয়। কৈলাইলে কয়েক শত বিঘা আবাদী জমি মিশে গেছে শত ফুট পানির নিচে।
মৎস্য খামার করার কথা বলে আবাদী জমির মাটি বিক্রি করছে ইটভাটায়। এ কর্মকা- চলে রাত১২ টা থেকে ফজরের আযান হওয়া পর্যন্ত। মাঝে মাঝে উপজেলা প্রশাসন লোক দেখানো অভিযান চালালেও ১/২ দিন পর আবার একই কায়দায় চলে মাটি লুন্ঠনের উৎসব। কিন্তু এলাকাবাসীর কিছুই করার থাকে না। মাঝে মাঝে প্রতিরোধের চেষ্টা করেও এলাকাবাসী ব্যর্থ হয়েছে; কিছু সশস্ত্র ক্যাডার এর কারণে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, সম্প্রতি এলাকাবাসীর মধ্যে ভীতি সঞ্চার করতে প্রায় অর্ধশত রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে মাটি কাটার উদ্বোধন করা হয়।
ভাংগাভিটা গ্রামের বাসিন্দা সুশীল চন্দ্র বলেন, আমাদের গ্রামের ৯৮ভাগ অধিবাসী হিন্দু সম্প্রদায়। তাদের ভয়ে কেউ মুখ খোলে না। কারো জমি কেটে নিয়ে গেলেও কিছু করার থাকে না। কেউ বাধা দিতে গেলে তাকে প্রকাশ্যে অস্ত্র দেখিয়ে হুমকি দেয়া হয়।
খুদু মেম্বার, এ্যাপেলো মেম্বার, নজরুল, রাজ্জাক ও মিথুনসহ অন্তত ১০টি সিন্ডিকেট নদী থেকে মাটি ও বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর। এ ব্যাপারে খুদু মেম্বার বলেন, আমি কারো জমিতে মাটি কাটি না। জমি কিনে মাটি কেটে পুকুর তৈরী করি। কৃষি জমির মাটি কেটে বিক্রির বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহীদুল আমিন বলেন এ বিষয় টি আমি শুনেছি। নবাবগঞ্জের বাসিন্দা, সাবেক গণপরিষদ সদস্য আবু মো. সুবিদ আলী টিপু বলেন, শত শত একর জমি কেটে লুটপাটের মহোৎসব চলছে। দেখার কেউ নেই। একদিকে যেমন প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটছে। অপরদিকে কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে।
নবাবগঞ্জ উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা শাকিল আহমেদ বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে। ব্যবস্থা নেয়া হবে।