ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলায় অবাধে মাটি বিক্রির মহোৎসব চলছে। বিশেষ করে উপজেলার কৈলাইল, পশ্চিম মেলেং, খালপাড় মাতাপপুর, কাটাখালী, মালিকান্দা, দৌলতপুর, শোল্লার আওনা চক, চক সিংহরা, চক সিংজোর, নয়শ্রী এলাকার শৈল্যা ও কলাকোপা ইউপির সাহেবখালিসহ শিকারীপাড়া, বাহ্রা ইউনিয়নে কয়েকটি জায়গা থেকে ফসলি জমির মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দেশের প্রচলিত ভূমি আইন মানা হচ্ছে না। প্রশাসনও নিরব ভূমিকা পালন করছে।
মাটি উত্তোলন হচ্ছে এমন সব এলাকার জনসাধারণের অভিযোগ, সারা বছরই এক শ্রেণির মানুষ অবৈধভাবে মাটি বিক্রির ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে পাশের ফসলি জমির মালিকরা সংকটে পড়ছেন। তাছাড়া, উপজেলায় আবাদি জমির পরিমাণও কমছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, নবাবগঞ্জে মোট আবাদি জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৫১১ হেক্টর। এর মধ্যে এক ফসলি জমির পরিমাণ হলো ৬ হাজার ৯৯৩ হেক্টর, দুই ফসলি জমি ৮ হাজার ৬২৮ হেক্টর, তিন ফসলি জমি ২ হাজার ১৮১ হেক্টর। এছাড়া তিনের অধিক ফসলি জমির পরিমাণ ২৫ হেক্টর। আর আবাদ যোগ্য পতিত জমি রয়েছে ২৪৫ হেক্টর। কিন্তু এখন প্রতিদিনই গড় ২ থেকে ৩শ’ বিষা কৃষি জমির মাটি কাটা চলছে। তবে মাটি কাটার ক্ষেত্রে পুকুর খনন ও মাছ চাষের কথা বলা হচ্ছে।
এলাকাবাসীরা জানান, মাছ চাষ করার কথা বলা হলেও পুকুর খনন করে শত শত বিঘা আবাদি জমির মাটি ভেকু দিয়ে কেটে বিভিন্ন ইটভাটা ও স্থাপনা নির্মাণকারীদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। আর কাটা মাটি বহন করার ফলে অধিকাংশ গ্রামীণ কাঁচা ও পাকা রাস্তা বেহাল হয়ে পড়েছে।
সিংজোর গ্রামের অটোরিকশা (সিএনজি) চালক সালাম মোল্লা জানান, রাস্তাঘাট যতই ঠিক করা হোক না কেন কোনো লাভ নেই। কারণ মাটি বিক্রি বন্ধ না হলে এসব সড়কে ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধ হবে না। মাটি টানা যানবাহনের কারণে পাকা সড়কের পিচ দ্রুত উঠে যাচ্ছে। সড়কের নানা জায়গায় গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। আর কাঁচা সড়কও ভেঙে বড় বড় গর্ত হচ্ছে।
রায়পুর গ্রামের খলিলুর রহমান, কাটাখালী গ্রামের কিতাব মিয়া জানান, মাটি বিক্রির ব্যবসা চালাতে গিয়ে একটি সিন্ডিকেট খুবই তৎপর। তারা স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের ম্যানেজ করে তাদের ব্যবসা অব্যাহত রেখেছে। আর এই সিন্ডিকেট চক্রটি যখন যে দল ক্ষমতায় আসে সেই দলের নেতাকর্মী পরিচয় দিয়ে থাকে।
উপজেলার রাজপাড়া এলাকার বাসিন্দা কালাম মিয়া জানান, আমাদের পাশে সাহেবখালী দোহার উপজেলার সীমান্তবর্তী ইসলামপুর এলাকায় অবস্থিত সাহেবখালীর জে.বি.সি, জেপিবি, ইটভাটার কারণে সড়ক ও কৃষি জমির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। ভেকু দিয়ে ফসলি জমির মাটি কেটে মাহেন্দ্র গাড়ি দিয়ে ইটভাটাসহ বিভিন্ন স্থানে নেওয়ার কারণে সড়কগুলো যাতায়াতের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে তারা স্থানীয় প্রশাসনের নিরবতাকে দায়ী করেন।
সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার শিকারীপাড়া এলাকার ডিএনবি ও চুনাকাটিবিল এলাকায় অবস্থিত জেবিসি, সাহেবখালীর জে.বি.সি, জেপিবি, মাঝিরকান্দা এলাকায় ডি.এন.বি ও শোল্লা পালিঝাপের এস.এসবি ব্রিকস্(এ.এ.বি) কৈলাইল ইউনিয়নে জে.বিসি(এনডিএস)ব্রিকস, এনবিএস, কে.এইচ.বি ,জে.বি.সি(এনডিএস) নামের ব্রিকফিল্ড মালিকরা শত শত বিঘা কৃষি জমির মাটি উত্তোলন করে কৃষি অধ্যুষিত এই অঞ্চলের ভারসাম্য নষ্ট করে ফেলছে।
উপজেলা কৃষক সমিতির নেতা মো বাবুল মিয়া জানান, কৈলাইল, সাহেবখালী, শিকারীপাড়াসহ উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটা সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষকরা জমি হারানোর দুশ্চিন্তায় এখন দিন পার করছেন। এসব আবাদযোগ্য কৃষি জমি বিভিন্ন কৌশলে খরিদ করে বছরের পর বছর মাটি বিক্রির ব্যবসা চালাচ্ছেন। বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী মহল এ ঘটনায় জড়িত। স্থানীয় ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ এ বিষয়ে বহুবার অভিযোগ করলেও কোনো ফলাফল পাননি। বরং অভিযোগকারীদের সব সময় হামলা, মামলার শঙ্কায় থাকতে হয়।
নবাবগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মনজুর হোসেনের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান, লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শরীফ রায়হান কবির মুঠোফোনে জানান, বিষয়টি স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তোফাজ্জল হোসেনকে জানানো হবে। তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা কথাও বলা হবে।