পনের কোটি টাকা নিয়ে নবাবগঞ্জের আল-আকসা উধাও

487

ঢাকার নবাবগঞ্জ ও দোহার উপজেলা থেকে আল-আকসা ইসলামী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের প্রায় ১৫ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে নবাবগঞ্জ সদরের নবী উল্লাহ ভবনের দ্বিতীয় তলা ও জয়পাড়া বাজারের টিনের গলিতে গ্রাহকেরা জড়ো হয়ে এ অভিযোগ করেন।

এ ঘটনায় দোহার শাখার ব্যবস্থাপক শাহিনা আক্তারকে আটক করে সাত দিনের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। খবর পেয়ে নবাবগঞ্জ উপজেলার যন্ত্রাইল গ্রামের নার্গিস আক্তার নামের এক নারী ঘটনাস্থলে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে নবাবগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তিনি এ প্রতিষ্ঠানে এককালীন ২৫ লাখ টাকা জমা রেখেছেন বলে জানান।

সংশ্লিষ্ট অনেকে জানান, উপজেলার বিভিন্ন স্থানের সহস্রাধিক গ্রাহক এককালীন টাকা জমা (ফিক্সড ডিপোজিট) করেন, যার পরিমাণ আট কোটি টাকার বেশি হবে। গতকাল কার্যালয়ে শতাধিক গ্রাহক জড়ো হন।

এ সময় গ্রাহকেরা টাকা ফেরত পেতে উপজেলা প্রশাসন ও থানার পুলিশকে জানান। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেওয়ান মাহবুবুর রহমান প্রতিষ্ঠানটির নবাবগঞ্জ শাখা অফিস ও একটি ইলেকট্রনিক শোরুম সিলগালা করে পুলিশকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

উপজেলার মাধবপুর গ্রামের দেলোয়ারা বেগম অভিযোগ করেন, ছেলে প্রবাসী মনির হোসেন ও তাঁর নামে দেড় মাস আগে এককালীন চার লাখ টাকা জমা রেখেছেন।

প্রতিষ্ঠানটির কনিষ্ঠ কর্মকর্তা মো. রফিক ও কোষাধ্যক্ষ মুন্নি আক্তারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁদের পাওয়া যায় নি।

আল-আকসা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইদুর রহমানের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায় এবং অফিস ফোনও কেউ ধরেন নি। তবে নবাবগঞ্জের ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলামের সঙ্গে দুপুরে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এক মাস আগেই আমি চাকরি ছেড়ে দিয়েছি।’ এর পর থেকে তিনি মুঠোফোনটি বন্ধ করে দেন।

অন্য খবর  দোহারে স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ: এক মাসেও গ্রেফতার হয়নি অভিযুক্ত

দেওয়ান মাহবুবুর রহমান জানান, গ্রাহকদের অভিযোগের ভিত্তিতে সত্যতা পাওয়ায় প্রাথমিকভাবে প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করা হয়েছে। উপস্থিত গ্রাহকদের তথ্য অনুযায়ী, সাত থেকে আট কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।

 

একই দিনে দোহার শাখায় সিলগালা

অবৈধভাবে ব্যবসা করার অপরাধে দোহার উপজেলার জয়পাড়া বাজারের আল-আকছা ইসলামী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের শাখা অফিস ভ্রাম্যমাণ আদালত সিলগালা করে দিয়ে শাখা ব্যবস্থাপক শাহীন আক্তারকে ৭ দিনের কারাদণ্ড এবং অফিসের যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি জব্দ করে উপজেলা সমবায় অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার নির্দেশ দেন।

মঙ্গলবার দুপুরে জয়পাড়া বাজারে অবস্থিত আল-আকছা ইসলামী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের জয়পাড়া শাখা অফিসে উপজেলা সমবায় অধিদফতরের উদ্যোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। দোহারের ইউএনও মোহাম্মদ আল-আমিন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।

ওই প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা করার বৈধ কাগজ ভ্রাম্যমাণ আদালত দেখতে চাইলে অফিস কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হয়। সমবায় অধিদফতর থেকে তাদের কোনো ধরনের রেজিস্ট্রেশন না থাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রতিষ্ঠানটির জয়পাড়া শাখা অফিস সিলগালা করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। এ ছাড়া শাখা ব্যবস্থাপক শাহীন আক্তার নিজের দোষ স্বীকার করায় তাকে ৭ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং শাখা অফিসের যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি উপজেলা সমবায় অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার নির্দেশ দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

অন্য খবর  রোগী আছে ডাক্তার নেই- নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

সোমবার আল-আকছা ইসলামী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের নবাবগঞ্জ উপজেলা অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিস তালাবদ্ধ করে গা-ঢাকা দিলে দোহারের ইউএনও জনসাধারণের আমানতের নিরাপত্তার স্বার্থে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। তিন মাস আগে উপজেলা সমবায় অফিস থেকে উপজেলার সব মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডকে বৈধ কাগজপত্র সংগ্রহ করে ব্যবসা পরিচালনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

শাখা ব্যবস্থাপক শাহীন আক্তার জানান, জয়পাড়া শাখা অফিসের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৬ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে এবং প্রায় ১ কোটি টাকা গ্রাহকদের মধ্যে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।

এদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার পর আল-আকছা ইসলামী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের গ্রাহকরা অফিসে ভিড় করতে থাকেন। বেশি মুনাফার আশায় মাল্টিপারপাস কোম্পানিগুলোতে যেসব গ্রাহক টাকা জামানত রেখেছেন তারা এখন আতঙ্কের মধ্যে আছেন।

আল-আকছা ইসলামী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের জয়পাড়া শাখায় জামানতকারী মহিউদ্দিন মোল্লা জানান, তিনি ৭ লাখ টাকা এবং তার মেয়ে মাহমুদা সুলতানা রুবিনা ৯ লাখ টাকা জামানত রেখেছেন। সাজ্জাদ হোসেন নামে আরেক আমানতকারী জানান, তিনি ৩ লাখ টাকা প্রতি তিন মাস অন্তর ৯ হাজার টাকা করে মুনাফা পাওয়ার আশায় এখানে জমা রেখেছেন।

আটককৃত জয়পাড়া শাখা ব্যবস্থাপক শাহীন আক্তার চাঁদপুর উপজেলার পাইকান্দি গ্রামের মৃত আবদুল হাই সিরাজীর মেয়ে এবং সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী। তিনি ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি দোহারের জয়পাড়া শাখায় শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে যোগ দেন।

আপনার মতামত দিন